আসুন আমরা বিশ্বাসের লোক হই
“আমরা . . . প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
১. কেন বলা যেতে পারে যে যিহোবার প্রত্যেক বিশ্বস্ত দাসের বিশ্বাসই মূল্যবান?
পরের বার আপনি যখন যিহোবার উপাসকদের কিংডম হলে আসবেন, আপনার আশেপাশের লোকেদের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিন। বিভিন্ন দিক দিয়ে তারা যে বিশ্বাস দেখান তা নিয়ে একটু ভাবুন। আপনি সেখানে বৃদ্ধ লোকেদের দেখতে পাবেন যারা অনেক বছর ধরে ঈশ্বরের সেবা করে চলেছেন, অল্পবয়সী যুবক-যুবতীদের পাবেন যারা রোজ বন্ধুবান্ধবদের চাপকে মোকাবিলা করে থাকে এবং বাবামাদের দেখবেন যারা তাদের ছেলেমেয়েদের ঈশ্বর-ভয়শীল লোক হিসেবে মানুষ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। এছাড়াও মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এবং পরিচারক দাসেরা আছেন যারা অনেক দায়িত্ব পালন করেন। হ্যাঁ, আপনি সব বয়সের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের দেখতে পাবেন, যারা যিহোবাকে সেবা করার জন্য সবধরনের বাধাকে মোকাবিলা করেন। প্রত্যেকের বিশ্বাস কতই না মূল্যবান!—১ পিতর ১:৭.
২. ইব্রীয় ১০ ও ১১ অধ্যায়ে পৌলের পরামর্শ কেন আমাদের দিনের জন্যও উপকারজনক?
২ খুব কম অসিদ্ধ লোকেরাই প্রেরিত পৌলের মতো করে বিশ্বাসের গুরুত্বকে বুঝতে পেরেছেন। আসলে, তিনি বলেছিলেন যে প্রকৃত বিশ্বাস ‘প্রাণকে রক্ষা করে।’ (ইব্রীয় ১০:৩৯) কিন্তু, পৌল জানতেন যে বিশ্বাসহীন এই জগতে বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ করা হয় এবং তা ক্ষয় পায়। তিনি যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের জন্য খুবই চিন্তিত ছিলেন, যারা তখন তাদের বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছিলেন। ইব্রীয় ১০ এবং ১১ অধ্যায়ের কিছু কিছু বিষয় পড়ার সময় আসুন আমরা কিছু উপায়গুলো দেখি, যা পৌল তাদের বিশ্বাসকে গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন। তাহলেই আমরা দেখতে পাব যে আমরা কীভাবে আমাদের মধ্যে এবং আমাদের আশেপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে শক্তিশালী বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি।
একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস দেখান
৩. ইব্রীয় ১০:৩৯ পদে পৌলের কথাগুলো কীভাবে দেখায় যে বিশ্বাসী ভাইবোনেদের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল?
৩ সবচেয়ে প্রথমে যে বিষয়টা আমরা দেখতে পাই তা হল তার শ্রোতাদের প্রতি পৌল ভাল মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।” (ইব্রীয় ১০:৩৯) পৌল তার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ভাল দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তাদের খারাপ দিক নিয়ে নয়। এছাড়াও লক্ষ্য করে দেখুন যে তিনি “আমরা” শব্দটা ব্যবহার করেছেন। পৌল একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তাই বলে তিনি তার পাঠকদের হেয় করে কিছু বলেননি, যাতে মনে হয় যে তিনি তাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ধার্মিক। (উপদেশক ৭:১৬ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) বরং তিনি তাদের সঙ্গে নিজেকেও জড়িয়েছিলেন। তিনি অন্তর থেকে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন যে তিনি ও তার বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান পাঠক-পাঠিকারা সবাই ভয়াবহ বাধার মুখোমুখি হবেন, তারা সাহসের সঙ্গে বিনাশের জন্য সরে পড়াকে প্রত্যাখ্যান করবেন এবং নিজেদেরকে বিশ্বাসের লোক বলে প্রমাণ করবেন।
৪. কোন্ কোন্ কারণে পৌল তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন?
৪ কীভাবে পৌল এইরকম বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন? তিনি কি ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের দোষগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন? না, তিনি তাদের আধ্যাত্মিক ভুলগুলো এড়াতে সাহায্য করার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ৩:১২; ৫:১২-১৪; ৬:৪-৬; ১০:২৬, ২৭; ১২:৫) তারপরও, তার ভাইদের ওপর বিশ্বাস দেখানোর অন্তত দুটো উপযুক্ত কারণ পৌলের ছিল। (১) যিহোবাকে অনুকরণ করে পৌল ঈশ্বরের লোকেদের যিহোবার মতো করেই দেখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। আর তার মানে ছিল শুধু তাদের ভুলগুলোকে ধরা নয় কিন্তু তাদের ভাল গুণগুলোকে দেখা এবং ভবিষ্যতে তারা ভাল কাজ করতে পারবেন সেই বিষয়ে আস্থা রাখা। (গীতসংহিতা ১৩০:৩; ইফিষীয় ৫:১) (২) পবিত্র আত্মার শক্তির ওপর পৌলের গভীর বিশ্বাস ছিল। তিনি জানতেন, কোন খ্রীষ্টান যদি বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করেন, তাহলে কোন বাধা, মানুষের কোন দুর্বলতা “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করা থেকে যিহোবাকে বিরত করবে না। (২ করিন্থীয় ৪:৭; ফিলিপীয় ৪:১৩) তাই খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ওপর পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা অকারণ, ভুল কিংবা অন্ধ ছিল না। এটা খুব মজবুত ছিল এবং এর ভিত্তি ছিল শাস্ত্র।
৫. পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা আমরাও কীভাবে দেখাতে পারি এবং এর ফল হয়তো কী হবে?
৫ পৌল যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তা নিশ্চয়ই অন্যদেরকেও প্রভাবিত করেছিল। পৌলের এই কথায় যিরূশালেম ও যিহূদিয়ার মণ্ডলীগুলো নিশ্চয়ই অনেক উৎসাহ পেয়েছিল। বিরোধী যিহূদীদের প্রচণ্ড ঘৃণা ও উদ্ধত তাচ্ছিল্যের মুখেও ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা এই কথা শুনে অনেক সাহায্য পেয়েছিলেন আর এর ফলে তারা বিশ্বাসের লোক হওয়ার জন্য মন থেকে সংকল্প নিতে পেরেছিলেন। আজকে আমরাও কি একে অন্যের জন্য একইরকম করতে পারি? অন্যের দোষ ধরা ও ব্যক্তিত্বের খারাপ দিকগুলো বের করা খুব সহজ। (মথি ৭:১-৫) কিন্তু তারপরও আমরা একে অন্যকে আরও অনেক বেশি সাহায্য করতে পারি যদি আমরা প্রত্যেকের মধ্যে যে অতুলনীয় বিশ্বাস আছে তা মন দিয়ে লক্ষ্য করি ও মূল্যবান বলে মনে করি। এইরকম উৎসাহ পেলে বিশ্বাস আরও বাড়বে।—রোমীয় ১:১১, ১২.
সঠিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করা
৬. ইব্রীয় ১০:৩৮ পদে পৌল যে কথাগুলো লিখেছেন সেগুলো আসলে কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?
৬ এছাড়া, পৌল সঠিকভাবে শাস্ত্র ব্যবহার করেও তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের বিশ্বাসকে গড়ে তুলেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি লিখেছিলেন: “‘কিন্তু আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না।’” (ইব্রীয় ১০:৩৮) পৌল এখানে হবক্কূক ভাববাদীর কথা উদ্ধৃত করেছিলেন।a পৌলের সময়ের পাঠক-পাঠিকারা অর্থাৎ ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা হয়তো এই কথাগুলো জানতেন, কারণ তারা ভবিষ্যদ্বাণীর এই বইগুলোর সঙ্গে খুব ভালভাবে পরিচিত ছিলেন। সা.কা. ৬১ সালের দিকে যিরূশালেম ও এর আশেপাশের এলাকার খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করাই ছিল তার লক্ষ্য আর হবক্কূকের বই থেকে বলা ঠিকও ছিল। কেন?
৭. হবক্কূক কখন তার ভাববাণীর বই লিখেছিলেন আর তখন যিহূদার অবস্থা কেমন ছিল?
৭ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের ঠিক কুড়ি বছর আগে হবক্কূক তার বই লিখেছিলেন। দর্শনে ভাববাদী “নিষ্ঠুর ও ত্বরান্বিত জাতি” কল্দীয়দের (অথবা বাবিলনীয়দের) দেখেছিলেন যারা যিহূদাকে হঠাৎ আক্রমণ করতে আসছে এবং যিরূশালেমকে ধ্বংস করছে, লোকেদের ও জাতিগুলোকে শেষ করে দিচ্ছে। (হবক্কূক ১:৫-১১) কিন্তু একশ বছরেরও বেশি আগে সেই যিশাইয়ের সময় থেকে এইরকম ধ্বংসের বিষয় বলা হয়েছে। হবক্কূকের সময়ে ভাল রাজা যোশিয়ের পর যিহোয়াকীম রাজা হয়েছিলেন এবং যিহূদাতে আবারও দুষ্টতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যারা যিহোবার নামে ডাকত তাদের ওপর যিহোয়াকীম অত্যাচার, এমনকি তাদেরকে হত্যা পর্যন্ত করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৬:৫; যিরমিয় ২২:১৭; ২৬:২০-২৪) অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে ভাববাদী হবক্কূক প্রচণ্ড দুঃখে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল?”—হবক্কূক ১:২.
৮. কেন হবক্কূকের উদাহরণ প্রথম শতাব্দীর ও আজকের খ্রীষ্টানদের জন্য সাহায্যজনক বলে প্রমাণিত হয়?
৮ কত তাড়াতাড়ি যিরূশালেম ধ্বংস হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে হবক্কূক কিছুই জানতেন না। একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরাও জানতেন না যে কখন যিহূদী বিধিব্যবস্থা শেষ হবে। আজকে আমরাও “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব” জানি না যে কখন এই দুষ্ট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যিহোবা বিচার আনবেন। (মথি ২৪:৩৬) তাই আসুন আমরা দেখি যে যিহোবা হবক্কূককে যে উত্তর দিয়েছিলেন তাতে কীভাবে দুটো বিষয় ছিল। প্রথমে তিনি ভাববাদীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে যথাসময়ে শেষ আসবে। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে মনে হলেও, ঈশ্বর বলেছিলেন যে “যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) দ্বিতীয়ত, যিহোবা হবক্কূককে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “ধার্ম্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে।” (হবক্কূক ২:৪) এটা কত সহজ অথচ কত গম্ভীর সত্য! ধ্বংস কখন আসবে সেটা বড় বিষয় নয় কিন্তু আমরা জীবনে বিশ্বাস দেখিয়ে চলছি কিনা সেটা হল বড় বিষয়।
৯. যিহোবার প্রাচীন দাসেরা কীভাবে তাদের বিশ্বস্ততার জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন (ক) সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে? (খ) সা.কা. ৬৬ সালের পরে? (গ) কেন আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা খুবই জরুরি?
৯ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমকে যখন লুট করা হয়েছিল, তখন যিরমিয়, তার সচিব বারূক, এবদ-মেলক এবং বিশ্বস্ত রেখবীয়রা হবক্কূকের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাকে পূর্ণ হতে দেখেছিলেন। তারা যিরূশালেমের ভয়ানক ধ্বংস থেকে ‘বেঁচে গিয়েছিলেন।’ কেন? যিহোবা তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার দিয়েছিলেন। (যিরমিয় ৩৫:১-১৯; ৩৯:১৫-১৮; ৪৩:৪-৭; ৪৫:১-৫) একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা নিশ্চয়ই পৌলের পরামর্শ ঠিক মতো শুনেছিলেন কারণ সা.কা. ৬৬ সালে রোমীয় সেনাবাহিনী যখন যিরূশালেমকে আক্রমণ করেছিল এবং অজানা কারণে আবার চলে গিয়েছিল তখন ওই খ্রীষ্টানেরা বিশ্বস্তভাবে যীশুর সাবধানবাণীতে কান দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (লূক ২১:২০, ২১) আর তারা তাদের বিশ্বস্ততার জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। একইভাবে, যখন শেষ আসবে তখন আমরাও যদি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমরাও বেঁচে যাব। তাই এখনই আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা কতই না জরুরি বিষয়!
যারা বিশ্বাসে চলেছিলেন তাদের উদাহরণে মনোযোগ দেওয়া
১০. মোশির বিশ্বাসের কথা পৌল কীভাবে বর্ণনা করেছেন আর আমরা কীভাবে মোশির মতো বিশ্বাস দেখাতে পারি?
১০ এছাড়াও পৌল যারা বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন তাদের উদাহরণ দিয়ে অন্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিলেন। ইব্রীয় ১১ অধ্যায় পড়ার সময় দেখুন যে বাইবেলের সেই উদাহরণগুলোকে পৌল কত জীবন্তভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি বলেন যে মোশি “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইব্রীয় ১১:২৭) অন্য কথায়, যিহোবা মোশির কাছে এত বাস্তব ছিলেন যেন তিনি অদৃশ্য ঈশ্বরকে দেখতে পেয়েছিলেন। আমাদের সম্বন্ধেও কি এই একই বিষয় বলা যেতে পারে? যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে বলা সহজ কিন্তু সেই সম্পর্ক গড়ে তোলার ও তা শক্তিশালী করার জন্য অনেক কাজ করতে হয়। সেই কাজই আমাদের করা দরকার! যিহোবা কি আমাদের কাছে এতটা বাস্তব যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, এমনকি সেগুলো খুবই ছোট বিষয় বলে মনে হলেও আমরা ভেবে দেখি যে ঈশ্বর তা পছন্দ করবেন কিনা? এইরকম বিশ্বাস আমাদেরকে চরম বিরোধিতার সময়েও ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে।
১১, ১২. (ক) কোন্ পরিস্থিতিতে হনোকের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল? (খ) হনোক কোন্ উৎসাহজনক পুরস্কার পেয়েছিলেন?
১১ হনোকের বিশ্বাসের কথাও ভেবে দেখুন। তিনি যে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। হনোককে তখনকার দুষ্ট লোকেদের বিরুদ্ধে কঠিন বিচারের বার্তা ঘোষণা করতে হয়েছিল। (যিহূদা ১৪, ১৫) এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি এত প্রচণ্ড ও নৃশংস তাড়নার মুখোমুখি হয়েছিলেন যে যিহোবা “তাঁহাকে লোকান্তরে লইয়া গেলেন” অর্থাৎ শত্রুরা যাতে তাকে হত্যা করতে না পারে সেইজন্য ঈশ্বর হনোককে মরতে অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই হনোক যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা তিনি পরিপূর্ণ হতে দেখেননি। কিন্তু, তিনি যে পুরস্কার পেয়েছিলেন তা হয়তো সমস্ত কিছু দেখার চেয়েও ভাল ছিল।—ইব্রীয় ১১:৫; আদিপুস্তক ৫:২২-২৪.
১২ পৌল বলেন: “লোকান্তরে নীত হইবার পূর্ব্বে তাঁহার [হনোকের] পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৫) এই কথার মানে কী ছিল? হনোক মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে হয়তো কিছু দর্শন দেখেছিলেন—হয়তো তিনি দেখেছিলেন যে পৃথিবী পরমদেশ হয়েছে, যেখানে শীঘ্রই তাকে পুনরুত্থিত করা হবে। যে কোনভাবেই হোক, যিহোবা হনোককে জানিয়েছিলেন যে তিনি তার বিশ্বস্ত কাজে খুবই খুশি ছিলেন। হনোক যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিলেন। (হিতোপদেশ ২৭:১১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) হনোকের জীবনের কথা চিন্তা করলে তা কি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করে না? আপনি কি আপনার জীবনে এমন বিশ্বাস দেখাতে চান? তাহলে এই উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করুন; তাদেরকে বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে ভাবুন। সবসময় বিশ্বাসে বেঁচে থাকার সংকল্প নিন। এছাড়াও মনে রাখবেন যে যাদের বিশ্বাস রয়েছে তারা, যিহোবা কখন তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন সেই তারিখ অথবা সময়সীমা মাথায় রেখে তাঁকে সেবা করেন না। বরং, এই সংকল্প নিন যে শুধু শেষ আসা পর্যন্তই নয় কিন্তু চিরকাল আমরা যিহোবাকে সেবা করব! তা করার মানে হল সবচেয়ে ভাল উপায়ে জীবন কাটানো এখন এবং আগামী নতুন পৃথিবীতে।
বিশ্বাসে যেভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া যায়
১৩, ১৪. (ক) ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদে লেখা পৌলের কথাগুলো কীভাবে আমাদের সভাগুলোকে আনন্দপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করতে পারে? (খ) খ্রীষ্টীয় সভাতে যাওয়ার মূল কারণ কী?
১৩ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য পৌল তাদের অনেক বাস্তব উপায় দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে শুধু দুটো নিয়ে এখন আলোচনা করা যাক। ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদের পরামর্শ সম্ভবত আমরা জানি, যেখানে আমাদেরকে সবসময় খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে মিলিত হতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, মনে রাখবেন যে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা পৌলের এই কথাগুলো বোঝায় না যে শুধু সভাতে আসাই যথেষ্ট। বরং পৌল সভাগুলোকে একে অন্যকে আরও ভাল করে জানার, ঈশ্বরকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করার জন্য একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং একে অন্যকে সাহস যোগানোর সুযোগ হিসেবে নিতে বলেছেন। আমরা সেখানে কেবল কিছু পাওয়ার আশায় নয় কিন্তু কিছু দিতেও যাই। আর এটাই আমাদের সভাগুলোকে আনন্দপূর্ণ করে তোলে।—প্রেরিত ২০:৩৫.
১৪ তবে, আমরা মূলত যিহোবা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্যই খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আসি। আমরা প্রার্থনা ও গানে যোগ দিয়ে, খুব মন দিয়ে শুনে এবং “ওষ্ঠাধরের ফল” অর্থাৎ আমাদের মন্তব্য ও সভার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করি। (ইব্রীয় ১৩:১৫) এই উপায়গুলোর কথা যদি আমরা মনে রাখি এবং প্রত্যেকটা সভায় সেই অনুযায়ী কাজ করে যাই, তবে প্রতি বার আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।
১৫. পৌল কেন ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের তাদের প্রচার কাজকে অটলভাবে ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং আজকেও কেন এই পরামর্শ উপযুক্ত?
১৫ বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার আরেকটা উপায় হল প্রচার কাজ। পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমাদের প্রত্যাশার অঙ্গীকার [সকলের কাছে ঘোষণা করি] অটল করিয়া ধরি, কেননা যিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি বিশ্বস্ত।” (ইব্রীয় ১০:২৩) কেউ যখন হাল ছেড়ে দিতে বসেন তখন আপনি হয়তো তাকে কোন কিছু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পরামর্শ দিতে পারেন। কোন সন্দেহ নেই যে শয়তান ইব্রীয় খ্রীষ্টানদেরকে প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়েছিল এবং আজকেও সে ঈশ্বরের লোকেদের চাপ দিচ্ছে। এইরকম চাপের মুখে আমাদের কী করা উচিত? পৌল কী করেছিলেন তা ভেবে দেখুন।
১৬, ১৭. (ক) পৌল প্রচার করার জন্য কোথা থেকে সাহস পেয়েছিলেন? (খ) আমাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার কিছু কিছু দিকে আমরা যদি ভয় পেয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোন্ কোন্ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
১৬ থিষলনীকীর খ্রীষ্টানদেরকে পৌল লিখেছিলেন: “ফিলিপীতে পূর্ব্বে দুঃখভোগ ও অপমান ভোগ করিলে পর, তোমরা জান, আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম।” (১ থিষলনীকীয় ২:২) ফিলিপীতে পৌল ও তার সঙ্গীরা কীভাবে “অপমান ভোগ” করেছিলেন? কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তির কথা অনুসারে, পৌল যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার মানে অসম্মানজনক, লজ্জাজনক অথবা হিংসাত্মক আচরণ। ফিলিপীর শাসনকর্তা তাদেরকে মারধোর করেছিল, জেলে ভরেছিল এবং তাদের হাড়িকাঠে দিয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১৬-২৪) সেই দুঃখজনক ঘটনা পৌলকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? পৌল কি ভয় পেয়ে মিশনারি যাত্রায় এর পরে যে শহরে যাওয়ার কথা ছিল অর্থাৎ থিষলনীকীতে যাওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েছিলেন? না, তিনি ‘সাহসী হয়েছিলেন।’ তিনি ভয়কে জয় করেছিলেন এবং সাহসের সঙ্গে প্রচার করে চলেছিলেন।
১৭ পৌল কোথা থেকে এই সাহস পেয়েছিলেন? নিজের থেকে? না, তিনি বলেছিলেন যে তিনি ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে’ সাহস পেয়েছিলেন। বাইবেল অনুবাদকদের সাহায্যকারী একটা বই বলে যে এই উক্তিটা হয়তো এভাবে অনুবাদ করা যেতে পারে, “ঈশ্বর আমাদের মন থেকে ভয় দূর করে দিয়েছেন।” তাই, আপনি যদি প্রচার করার জন্য সাহস জুটাতে না পারেন অথবা কোন কারণে ভয় পাচ্ছেন বলে মনে করেন, তাহলে যিহোবার কাছে সাহস চেয়ে প্রার্থনা করুন না কেন? আপনার মন থেকে ভয় দূর করার জন্য তাঁকে বলুন। এই কাজে আপনাকে সাহসী করে তোলার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন। সেইসঙ্গে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি এমন কোন ভাই বা বোনের সঙ্গে কাজ করুন যিনি সেই ধরনের প্রচার কাজে দক্ষ, যা করতে হয়তো আপনি ভয় পান। তা হতে পারে, কোন বাণিজ্যিক এলাকায় বা রাস্তায় সাক্ষ্য দেওয়া, যে কোন সুযোগে লেকেদের সঙ্গে কথা বলা অথবা টেলিফোনে প্রচার করা। আপনার সঙ্গী হয়তো প্রথমে কথা বলতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে মন দিয়ে দেখুন যে তিনি কীভাবে কথা বলছেন, তার কাছ থেকে শিখুন। আর এরপর সাহস জুটিয়ে তার মতো করে কথা বলার চেষ্টা করুন।
১৮. আমরা যদি সাহস জুটিয়ে প্রচার করি, তাহলে কোন্ আশীর্বাদ লাভ করতে পারি?
১৮ আপনি যদি সাহস জুটিয়ে প্রচার করেন, তাহলে চিন্তা করুন যে এর ফল কী হতে পারে। আপনি যখন চেষ্টা করে এবং নিরাশ না হন, তখন আপনি অন্যদের সত্য জানিয়ে ভাল অভিজ্ঞতা পাবেন, যা কিনা চুপ করে থাকলে আপনার হতো না। (২৫ পৃষ্ঠা দেখুন।) আপনার কাছে কঠিন মনে হয় এমন কিছু করে আপনি যিহোবাকে খুশি করতে পেরেছেন জেনে আপনি পরিতৃপ্তি পাবেন। ভয়কে কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি তাঁর আশীর্বাদ ও সাহায্য নিজে অনুভব করতে পারবেন। আপনার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে। আসলে, আপনি যখন অন্যদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন তখন আপনি আপনার নিজের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করে তোলেন।—যিহূদা ২০, ২১.
১৯. “বিশ্বাসের লোক”-দের জন্য কোন্ বিরাট পুরস্কার মজুত রয়েছে?
১৯ আমরা চাই আপনি যেন নিজের ও আপনার আশেপাশে যারা আছেন তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে চলতে পারেন। ঈশ্বরের বাক্যকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে, বাইবেল থেকে বিশ্বাসের উদাহরণ পড়ে এবং সেগুলোকে জীবন্ত করে তুলে, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর জন্য তৈরি হয়ে ও অংশ নিয়ে ও সকলের কাছে প্রচার করার মূল্যবান সুযোগকে অটলভাবে ধরে রেখে আপনি নিজের ও অন্যদের বিশ্বাসকে গড়ে তুলতে পারেন। আপনি যখন এই কাজগুলো করবেন তখন এটা জেনে নিশ্চিন্ত থাকুন যে আপনি সত্যিই “বিশ্বাসের লোক।” এছাড়াও, মনে রাখবেন যে যারা এইরকম লোক তারা বিরাট পুরস্কার পাবেন। তারা “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”b আপনার বিশ্বাস যেন দিন দিন বৃদ্ধি পায় এবং যিহোবা ঈশ্বর যেন আপনাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখেন!
[পাদটীকাগুলো]
a পৌল সেপটুয়াজিন্ট বাইবেল থেকে হবক্কূক ২:৪ পদের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছিলেন, যা হল: “যদি কেউ সরে পড়ে, তবে আমার প্রাণ তার ওপর প্রীত হবে না।” আজকে যে সমস্ত ইব্রীয় পাণ্ডুলিপি রয়েছে সেগুলোর কোনটাতেই এই কথাগুলো নেই। কেউ কেউ মনে করেন, যে সমস্ত প্রাচীন ইব্রীয় পাণ্ডুলিপি থেকে সেপটুয়াজিন্ট অনুবাদ করা হয়েছিল সেগুলো এখন আর পাওয়া যায় না। যাইহোক না কেন, পৌল ঈশ্বরের আত্মার অনুপ্রেরণায় এই কথাগুলো লিখেছিলেন। তাই এর লেখক হলেন স্বয়ং ঈশ্বর।
b যিহোবার সাক্ষিদের জন্য ২০০০ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “আমরা . . . সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং . . . বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
◻ পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ওপর কীভাবে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন আর এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
◻ পৌল যে ভাববাদী হবক্কূকের কথা বলেছিলেন তা কেন উপযুক্ত ছিল?
◻ পৌল শাস্ত্রের কোন্ উদাহরণগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন?
◻ বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য পৌল কোন্ বাস্তবসম্মত উপায়গুলোর কথা বলেছিলেন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ফিলিপীতে কষ্টকর আচরণের পরও পৌল প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস জুটিয়েছিলেন
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিভিন্ন ধরনের প্রচার কাজ করার জন্য আপনি কি সাহস জুটাতে পারেন?