অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫০
বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করলে আপনি ধার্মিক হতে পারেন
‘আমাদের পিতা অব্রাহামের মতো বিশ্বাস দেখান এবং সেই বিশ্বাস অনুসারে চলুন।’—রোমীয় ৪:১২.
গান ১১৯ বিশ্বাস থাকতে হবে
সারাংশa
১. আমরা যখন অব্রাহামের বিষয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা নিজেদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?
অনেক লোক অব্রাহামের নাম শুনেছে, কিন্তু বেশিরভাগ লোক তার সম্বন্ধে খুবই অল্প জানে। তবে, আপনি অব্রাহামের বিষয়ে অনেক কিছু জানেন। যেমন আপনি জানেন, তিনি ‘এমন সকলের পিতা হয়ে উঠেছিলেন, যারা বিশ্বাস দেখায়।’ (রোমীয় ৪:১১) কিন্তু আপনি হয়তো চিন্তা করেন, ‘আমি কি কখনো অব্রাহামের মতো হতে পারব এবং তার মতো ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস দেখাতে পারব?’হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই পারবেন!
২. অব্রাহামের বিষয়ে অধ্যয়ন করা কেন ভালো? (যাকোব ২:২২, ২৩)
২ অব্রাহামের মতো বিশ্বাস গড়ে তোলার একটা উপায় হল, তার বিষয়ে অধ্যয়ন করা। অব্রাহাম সবসময় ঈশ্বরের কথা শুনতেন। ঈশ্বর যখন তাকে তার ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে অন্য একটা দেশে চলে যেতে বলেছিলেন, তখন তিনি তাঁর কথা শুনেছিলেন। তিনি অনেক বছর ধরে তাঁবুতে থেকেছিলেন আর এমনকী নিজের ছেলে ইস্হাককে বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন, যাকে তিনি অনেক ভালোবাসতেন। এগুলো থেকে বোঝা যায়, অব্রাহামের ঈশ্বরের উপর কতটা বিশ্বাস ছিল। তার এই বিশ্বাসের কারণে এবং তার কাজের কারণে তিনি ঈশ্বরকে খুশি করেছিলেন এবং তাঁর বন্ধু হয়েছিলেন। (পড়ুন, যাকোব ২:২২, ২৩.) চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো এক আশীর্বাদ ছিল! যিহোবা চান যেন আপনিও এই আশীর্বাদগুলো লাভ করেন। তাই, তিনি পৌল ও যাকোবের মাধ্যমে তাঁর বাক্যে অব্রাহামের বিষয়ে লিখিয়েছিলেন। আসুন, আমরা রোমীয় ৪ অধ্যায় এবং যাকোব ২ অধ্যায়ে লেখা কিছু কথার উপর মনোযোগ দিই। এই দুটো অধ্যায়েই অব্রাহাম সম্বন্ধে দারুণ বিষয় লেখা রয়েছে।
৩. পৌল ও যাকোব তাদের চিঠিগুলোতে কী বলেছিলেন?
৩ পৌল ও যাকোব দু-জনেই তাদের চিঠিগুলোতে আদিপুস্তক ১৫:৬ পদের কথাগুলো বলেছিলেন, যেখানে লেখা আছে: “[অব্রাহাম] সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।” ঈশ্বর একজন ব্যক্তিকে সেইসময় ধার্মিক বা নির্দোষ বলেন, যখন সেই ব্যক্তি তাঁকে খুশি করে। আমরা কেউ নিখুঁত নই এবং আমরা পাপ করে ফেলি, তা সত্ত্বেও ঈশ্বরের চোখে আমরা নির্দোষ হতে পারি। চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো এক সুযোগ! আপনিও নিশ্চয়ই চান যেন ঈশ্বর আপনাকে ধার্মিক হিসেবে দেখেন আর এটা সম্ভব। কিন্তু কীভাবে? তা জানার জন্য আসুন আমরা দেখি, কেন যিহোবা অব্রাহামকে ধার্মিক বলেছিলেন।
ধার্মিক হওয়ার জন্য বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
৪. কেন মানুষের জন্য ধার্মিক হওয়া কঠিন?
৪ রোমের খ্রিস্টানদের প্রতি লেখা চিঠিতে পৌল বলেছিলেন, প্রত্যেক মানুষই পাপ করে। (রোমীয় ৩:২৩) তা হলে, কীভাবে একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক বা নির্দোষ হতে পারেন এবং তাকে খুশি করতে পারেন? যে-খ্রিস্টানেরা সত্যিই মন থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়, তাদের সবাইকে সাহায্য করার জন্য পৌল অব্রাহামের বিষয়ে বলেছিলেন।
৫. কেন যিহোবা অব্রাহামকে ধার্মিক বলেছিলেন? (রোমীয় ৪:২-৪)
৫ অব্রাহাম কনান দেশে থাকার সময়ই যিহোবা তাকে ধার্মিক বলেছিলেন। এমনটা ছিল না যে, অব্রাহাম মোশির মাধ্যমে দেওয়া ব্যবস্থার প্রতিটা কথা মেনে চলছিলেন বলে তাকে ধার্মিক বলা হয়েছে। (রোমীয় ৪:১৩) কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ তখনও পর্যন্ত যিহোবা তাঁর লোকদের কোনো ব্যবস্থা দেননি। তারা ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পর সেই ব্যবস্থা পেয়েছিল। তা হলে, কেন যিহোবা অব্রাহামকে ধার্মিক বলেছিলেন? তার বিশ্বাসের কারণে। সত্যিই, এটা যিহোবার মহাদয়া ছিল।—পড়ুন, রোমীয় ৪:২-৪.
৬. কেন যিহোবা সেই ব্যক্তিকেও ধার্মিক বলে মনে করেন, যিনি পাপ করেছেন?
৬ পৌল এও বলেছিলেন, একজন ব্যক্তি যখন ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেন, তখন কেন “সেই ব্যক্তির বিশ্বাসের কারণে তাকে ধার্মিক বলে গণ্য” করা হয়। (রোমীয় ৪:৫) তিনি লিখেছিলেন: “দায়ূদও এমন ব্যক্তিকে সুখী বলেছেন, যাকে ঈশ্বর ধার্মিক বলে গণ্য করেন, যদিও তা সেই ব্যক্তির কাজের জন্য নয়। দায়ূদ বলেছেন: ‘সুখী সেই ব্যক্তিরা, যাদের মন্দ কাজ ক্ষমা করা হয়েছে এবং যাদের পাপ ঢেকে দেওয়া হয়েছে; সুখী সেই ব্যক্তি, যার পাপ যিহোবা কোনোমতেই ধরে রাখবেন না।’” (রোমীয় ৪:৬-৮; গীত. ৩২:১, ২) তাই, যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর তার পাপ ঢেকে দেন। তিনি তার পাপ পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দেন এবং কখনো সেটার হিসাব রাখেন না। এভাবে, তার বিশ্বাসের কারণেই ঈশ্বর তাকে ধার্মিক বা নির্দোষ বলে মনে করেন।
৭. কেন আমরা বলতে পারি যে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত উপাসকেরা ধার্মিক ছিল?
৭ অব্রাহাম, দায়ূদ এবং ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত উপাসক নিখুঁত ছিল না এবং তারা ভুলও করেছিল, তারপরও ঈশ্বর তাদের ধার্মিক বা নির্দোষ বলেছেন। কেন? তাদের বিশ্বাসের কারণে। ঈশ্বর যখন বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের দেখেছিলেন, যারা তাঁর উপাসনা করত না, তখন তিনি তাঁর উপাসকদের আরও বেশি নির্দোষ বলে মনে করেছিলেন। (ইফি. ২:১২) পৌল রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে বুঝিয়েছিলেন, যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেন, তিনি তাঁর বন্ধু হতে পারেন। অব্রাহাম ও দায়ূদ ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করেছিলেন, তাই তারা তাঁর বন্ধু হতে পেরেছিলেন। বর্তমানে আমরাও যদি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করি, তা হলে আমরা তাঁর বন্ধু হতে পারব।
বিশ্বাসের সঙ্গে কাজও গুরুত্বপূর্ণ
৮-৯. পৌল ও যাকোব যা লিখেছিলেন, সেই বিষয়ে কিছু লোকের কোন ভুল ধারণা রয়েছে আর কেন?
৮ তাহলে, ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য কি কেবল বিশ্বাসই যথেষ্ট, না কি আমাদের কাজও করতে হবে? বছরের পর বছর ধরে পাদরিরা এই বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক করে আসছে। কিছু পাদরি বলে, উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রভু যিশু খ্রিস্টের উপর বিশ্বাস করাই যথেষ্ট। আপনি হয়তো তাদের এইরকম কিছু বলতে শুনেছেন, “প্রভুর নামে ডাকো এবং উদ্ধার পাও।” তারা হয়তো বলে, ‘পৌলও তো বলেছিলেন যে, “ঈশ্বর সেই ব্যক্তির কাজের দ্বারা নয় বরং তার বিশ্বাসের দরুন ধার্মিক প্রতিপন্ন করেন।”’ (রোমীয় ৪:৬, ইজি-টু-রিড ভারশন) আবার কেউ কেউ বলে, আমরা যদি বড়ো বড়ো গির্জায় যাই কিংবা কোনো তীর্থ স্থানে যাই এবং ভালো কাজ করি, তা হলে আমরা উদ্ধার পাব। তারা হয়তো বলে, ‘যাকোবও তো বলেছিলেন, “একজন ব্যক্তিকে কেবল বিশ্বাসের মাধ্যমে নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে কাজের মাধ্যমে ধার্মিক বলে গণ্য করা হবে।”’—যাকোব ২:২৪.
৯ পাদরিদের বিভিন্ন ধারণার কারণে বাইবেলের কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করে, পৌল ও যাকোব যা লিখেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে কোনো মিল নেই। একজন বলেছেন, ধার্মিক হওয়ার জন্য কেবল বিশ্বাসই যথেষ্ট, আবার আরেকজন বলেছেন, বিশ্বাসের পাশাপাশি আমাদের কাজও করতে হবে। এই বিষয়ে বাইবেলের একজন প্রফেসর বলেছিলেন, “যাকোব এটা বুঝতে পারেননি, কেন পৌল বলেছেন যে, ধার্মিক হওয়ার জন্য কেবল বিশ্বাস থাকাই যথেষ্ট। তিনি হয়তো পৌলের সঙ্গে একমত ছিলেন না।” কিন্তু আমরা জানি, যিহোবাই পৌল ও যাকোবের মাধ্যমে সেই কথাগুলো লিখিয়েছিলেন। (২ তীম. ৩:১৬) কেন তারা সেই কথাগুলো লিখেছিলেন? তা বোঝার জন্য আসুন আমরা আগে এই বিষয়টার উপর মনোযোগ দিই যে, তারা তাদের চিঠিগুলোতে আর কী কী লিখেছিলেন।
১০. পৌল বিশেষ করে কোন কাজগুলোর কথা বলছিলেন? (রোমীয় ৩:২১, ২৮) (ছবিও দেখুন।)
১০ রোমীয় ৩ ও ৪ অধ্যায়ে পৌল কোন কাজগুলোর কথা বলছিলেন? তিনি বিশেষ করে “ব্যবস্থায় যা বলা আছে,” সেই কাজগুলোর কথা বলছিলেন, যে-ব্যবস্থা মোশিকে সীনয় পর্বতের উপরে দেওয়া হয়েছিল। (পড়ুন, রোমীয় ৩:২১, ২৮.) এমনটা মনে করা হয় যে, পৌলের দিনে যে-যিহুদিরা খ্রিস্টান হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা মেনে নিতে পারছিল না যে, এখন থেকে তাদের আর মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে না। তাই, পৌল তাদের অব্রাহামের উদাহরণ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “ব্যবস্থায় যা বলা আছে,” সেই কাজগুলো করার ফলে একজন ব্যক্তিকে ধার্মিক বলা হয় না। তাকে তার বিশ্বাসের কারণে ধার্মিক বলা হয়। এর মানে হল, আমরা যদি ঈশ্বর এবং মশীহের উপর বিশ্বাস করি, তা হলে আমরা ঈশ্বরকে খুশি করতে পারব। এটা জানতে পেরে আমরা কতই-না উৎসাহ পাই!
১১. যাকোব কোন কাজগুলোর বিষয়ে বলছিলেন?
১১ কিন্তু, যাকোব ২ অধ্যায়ে ‘যে-কাজগুলোর’ বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলো “ব্যবস্থায় যা বলা আছে,” সেই কাজগুলোর চেয়ে আলাদা, যেগুলোর বিষয়ে পৌল উল্লেখ করেছিলেন। যাকোব আসলে সেই কাজগুলোর বিষয়ে বলছিলেন, যেগুলো একজন খ্রিস্টান প্রতিদিন করে থাকে। এই কাজগুলো থেকে বোঝা যায়, একজন খ্রিস্টান সত্যিই ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে কি না। আসুন, যাকোবের বই থেকে আমরা এইরকমই দুটো উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি।
১২. কীভাবে যাকোব বুঝিয়েছিলেন যে, বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ? (ছবিও দেখুন।)
১২ প্রথম উদাহরণে যাকোব বলেছিলেন, খ্রিস্টানদের কারো সঙ্গে ভেদাভেদ করা উচিত নয়। এটা বোঝানোর জন্য তিনি এমন একজন ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছিলেন, যিনি একজন ধনী ব্যক্তির সঙ্গে খুব ভালোভাবে আচরণ করেছিলেন, কিন্তু একজন গরিব ব্যক্তির সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছিলেন। যাকোব বলেছিলেন, এইরকম ব্যক্তি দাবি করতে পারে যে, তার বিশ্বাস রয়েছে, কিন্তু তার কাজের মাধ্যমে তা দেখা যায় না। (যাকোব ২:১-৫, ৯) দ্বিতীয় উদাহরণে যাকোব আরেকজন ব্যক্তির কথা বলেছিলেন। সেই ব্যক্তি যখন দেখে, তার “কোনো ভাই অথবা বোনের কাপড়ের অভাব রয়েছে এবং তার কাছে দিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই,” তারপরও, সে তার কোনো সাহায্য করে না। সেই ব্যক্তি যদি বলে, তার বিশ্বাস রয়েছে, কিন্তু কাজের মাধ্যমে তার বিশ্বাস না দেখায়, তা হলে তার বিশ্বাস কোনো কাজের নয়। তাই যাকোব বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস যদি কাজের মাধ্যমে দেখানো না হয়, তা হলে সেই বিশ্বাস মৃত।’—যাকোব ২:১৪-১৭.
১৩. যাকোব কার উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছিলেন যে, বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ? (যাকোব ২:২৫, ২৬)
১৩ যাকোব রাহবের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, আমাদের যদি বিশ্বাস থাকে, তা হলে সেটা কাজের মাধ্যমেও দেখাতে হবে। (পড়ুন, যাকোব ২:২৫, ২৬.) রাহব শুনেছিলেন, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের সাহায্য করছেন এবং তিনিও তাঁর উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। (যিহো. ২:৯-১১) শুধু তা-ই নয়, তিনি তার বিশ্বাস অনুযায়ী কাজও করেছিলেন। দু-জন ইজরায়েলীয় গুপ্তচরের জীবন যখন ঝুঁকির মুখে ছিল, তখন রাহব তাদের রক্ষা করেছিলেন। তাই, অব্রাহামের মতো তাকেও ধার্মিক বলা হয়েছে, যদিও তিনি নিখুঁত ছিলেন না এবং মোশির ব্যবস্থা পালন করতেন না। রাহবের কাছ থেকে আমরা শিখি, আমাদের মধ্যে শুধু বিশ্বাস থাকাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু সেটার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
১৪. কেন আমরা বলতে পারি, পৌলের লেখা কথাগুলোর সঙ্গে যাকোবের কথাগুলোর মিল রয়েছে?
১৪ পৌল ও যাকোব বিশ্বাস ও কাজের বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে বোঝাচ্ছিলেন। পৌল যিহুদি খ্রিস্টানদের বলছিলেন, তারা যদি শুধু ব্যবস্থায় লেখা কথাগুলো মেনে চলে, তা হলেই যে যিহোবা খুশি হবেন, এমন নয়। আর যাকোব বলছিলেন, প্রত্যেক খ্রিস্টানের তার বিশ্বাস দেখানোর পাশাপাশি অন্যদের প্রতি ভালো কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
১৫. কোন কোন কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাতে পারি যে, আমাদের বিশ্বাস রয়েছে? (ছবিও দেখুন।)
১৫ যিহোবা এটা বলেননি, ধার্মিক হওয়ার জন্য আমাদের সেই কাজগুলোই করতে হবে, যেগুলো অব্রাহাম করেছিলেন। আমরা বিভিন্নভাবে দেখাতে পারি যে, আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। যেমন, আমরা মণ্ডলীতে আসা নতুন ব্যক্তিদের স্বাগত জানাতে পারি, যে-ভাই-বোনদের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সাহায্য করতে পারি এবং আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে পারি। আমরা যদি তা করি, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন এবং আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন। (রোমীয় ১৫:৭; ১ তীম. ৫:৪, ৮; ১ যোহন ৩:১৮) আর নিজের বিশ্বাস দেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল, মনপ্রাণ দিয়ে লোকদের সুসমাচার জানানো। (১ তীম. ৪:১৬) আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখাতে পারি যে, আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করবেন এবং তাঁর কথাগুলো মেনে চললে আমাদের মঙ্গল হবে। এভাবে, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের ধার্মিক বলে মনে করবেন আর আমাদের তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখবেন।
বিশ্বাসের সঙ্গে আশাও গুরুত্বপূর্ণ
১৬. কেন অব্রাহাম যিহোবার উপর বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন?
১৬ রোমীয় ৪ অধ্যায়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা হয়েছে, যেটা আমরা অব্রাহামের কাছ থেকে শিখতে পারি। সেটা হল, নিজেদের আশা ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যিহোবা অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘তিনি বহুজাতির আদিপিতা’ হবেন এবং তার মাধ্যমে ‘বহু জাতি’ আশীর্বাদ পাবে। অব্রাহামের কাছে কতই-না দারুণ এক আশা ছিল! (আদি. ১২:৩; ১৫:৫; ১৭:৪; রোমীয় ৪:১৭) কিন্তু অব্রাহামের যখন ১০০ বছর বয়স হয়েছিল এবং সারার ৯০, তখনও পর্যন্ত তাদের কোনো ছেলে জন্মায়নি। আর এই বয়সে কীভাবেই-বা তাদের এক সন্তানের জন্ম হতে পারত? সেইসময় যিহোবার উপর বিশ্বাস করা অব্রাহামের জন্য হয়তো কঠিন হয়ে পড়েছিল। তারপরও, তার আশা থাকার কারণে ‘তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, তিনি বহু জাতির পিতা হয়ে উঠবেন।’ (রোমীয় ৪:১৮, ১৯) অবশেষে, সেই দিন এসেছিল, যে-দিন তাদের এই আশা পূরণ হয়েছিল। তাদের ছেলে ইস্হাক জন্মায়, যাকে দেখার জন্য তারা দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করে ছিলেন।—রোমীয় ৪:২০-২২.
১৭. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা আমাদের ধার্মিক বলে মনে করতে পারেন এবং তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখতে পারেন?
১৭ অব্রাহামের মতো আমরাও যিহোবার হৃদয়কে খুশি করতে পারি, তা হলে তিনি আমাদের ধার্মিক বলে মনে করবেন এবং তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখবেন। এই বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “‘তাকে ধার্মিক বলে গণ্য করা হল,’ এই কথাগুলো শুধু [অব্রাহামের] জন্যই লেখা হয়নি, বরং আমাদের জন্যও লেখা হয়েছে। ঈশ্বর আমাদের বিশ্বাসকে ধার্মিকতা বলে গণ্য করবেন, কারণ যিনি আমাদের প্রভু যিশুকে পুনরুত্থিত করেছেন, সেই ঈশ্বরের উপরই আমরা বিশ্বাস করি।” (রোমীয় ৪:২৩, ২৪) অব্রাহামের মতো আমাদেরও যিহোবার উপর বিশ্বাস করতে হবে, অন্যদের প্রতি ভালো কাজ করতে হবে আর এই আশা রাখতে হবে যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। পৌল এই আশা সম্বন্ধে রোমীয় ৫ অধ্যায়েও উল্লেখ করেছিলেন, যেটার বিষয়ে আমরা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করব।
গান ২৮ যিহোবার বন্ধুত্ব লাভ করা
a আমরা সবাই যিহোবাকে খুশি করতে এবং তাঁর চোখে ধার্মিক হতে চাই। কিন্তু, এটার জন্য আমাদের কী করতে হবে? এই প্রবন্ধে আমরা পৌল ও যাকোবের লেখা কিছু কথা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব। আমরা এও জানতে পারব, যিহোবাকে খুশি করার জন্য কেন বিশ্বাস করা এবং ভালো কাজ করা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।
b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: পৌল যিহুদি খ্রিস্টানদের বলেছিলেন যেন তারা ‘ব্যবস্থায় বলা’ কাজগুলো না করে, যেমন পোশাকের উপর নীল সুতো বাঁধা, নিস্তারপর্ব পালন করা এবং রীতি অনুযায়ী ধোয়া। কিন্তু, তিনি তাদের বিশ্বাস করতে বলেছিলেন।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যাকোব বলেছিলেন যেন আমরা অন্যদের প্রতি ভালো কাজ করার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস দেখাই, যেমন গরিব ব্যক্তিদের সাহায্য করার মাধ্যমে।