যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষা করুন
“শেষকালে . . . উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে।”—২ পিতর ৩:৩.
১. এক আধুনিক দিনের খ্রীষ্টানের কোন্ তৎপরতার মনোভাব ছিল?
ছেষট্টি বছরেরও বেশি সময় ধরে সেবারত একজন পূর্ণ-সময়ের পরিচারক লিখেছিলেন: “আমি সবসময় এক তীক্ষ্ণ তৎপরতার মনোভাব অনুভব করে এসেছি। হর্মাগিদোন সবসময় খুব নিকটবর্তী বিষয় হিসাবে আমার চিন্তায় থেকেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) আমার বাবার মত এবং তারও আগে তার বাবার মত, আমি সেইভাবে জীবনযাপন করেছি যেমন প্রেরিত [পিতর] পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের আকাঙ্ক্ষা করিতে থাক।’ আমি সর্বদা প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎকে এক ‘অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি’ হিসাবে দেখেছি।”—২ পিতর ৩:১১, ১২; ইব্রীয় ১১:১; যিশাইয় ১১:৬-৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
২. যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষায় থাকার অর্থ কী?
২ যিহোবার দিনের বিষয়ে উল্লেখ করার সময় “আকাঙ্ক্ষা করিতে” থাকা সম্বন্ধীয় পিতরের অভিব্যক্তির অর্থ হল যেন আমরা এটিকে আমাদের মন থেকে দূরে সরিয়ে না দিই। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে সেই দিনটি খুবই নিকটে যখন যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ প্রতিষ্ঠিত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে এই মন্দ বিধিব্যবস্থার ধ্বংস নিয়ে আসবেন। এটি আমাদের কাছে এতই বাস্তব হওয়া উচিত যে আমরা সেটি স্পষ্টভাবে দেখি যেন সেটি একেবারে আমাদের সামনে আছে। এটি হচ্ছে সেইরকম বাস্তব যেমন প্রাচীনকালের ঈশ্বরের ভাববাদীদের কাছে ছিল আর তারা প্রায়ই যেন সেটি খুবই নিকটে এমনভাবে এর সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন।—যিশাইয় ১৩:৬; যোয়েল ১:১৫; ২:১; ওবদিয় ১৫; সফনিয় ১:৭, ১৪.
৩. স্পষ্টত কোন্ বিষয়টি যিহোবার দিন সম্বন্ধে পিতরের পরামর্শটিকে প্রণোদিত করেছিল?
৩ কেন পিতর আমাদের যিহোবার দিনকে যেন “পরশু” আসবে এইরকম দৃষ্টিতে দেখতে উৎসাহিত করেছিলেন? কারণ স্পষ্টতই কিছুজন খ্রীষ্টের প্রতিজ্ঞাত উপস্থিতির ধারণাটিকে উপহাস করতে শুরু করেছিল যখন অন্যায়কারীদের শাস্তি দেওয়া হবে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) সুতরাং তার দ্বিতীয় পত্রের ৩ অধ্যায়ে যেটি আমরা এখন বিবেচনা করব, পিতর এই উপহাসকারীদের অভিযোগের উত্তর দেন।
স্মরণ করার জন্য আন্তরিক আবেদন
৪. কোন্ বিষয়টি আমরা স্মরণে রাখি বলে পিতর চান?
৪ এই অধ্যায়ে পুনরাবৃত্তভাবে তাদের “প্রিয়তমেরা” এই সম্বোধন থেকে তার ভাইয়েদের প্রতি পিতরের স্নেহ প্রদর্শিত হয়। তারা যা শিখেছে সেই বিষয় ভুলে না যাওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে আবেদন করে পিতর শুরু করেন: “প্রিয়তমেরা, . . . তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া তোমাদের সরল চিত্তকে জাগ্রত করিতেছি, যেন তোমরা পবিত্র ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক পূর্ব্বকথিত বাক্য সকল, এবং তোমাদের প্রেরিতগণের দ্বারা দত্ত ত্রাণকর্ত্তা প্রভুর আজ্ঞা স্মরণ কর।”—২ পিতর ৩:১, ২, ৮, ১৪, ১৭; যিহূদা ১৭.
৫. যিহোবার দিন সম্বন্ধে কিছু ভাববাদী কী বলেছিলেন?
৫ “পবিত্র ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক পূর্ব্বকথিত বাক্য সকল” কী যা পিতর তার পাঠকদের স্মরণ করতে উৎসাহিত করেন? সেগুলি রাজ্যের ক্ষমতায় খ্রীষ্টের উপস্থিতি ও ভক্তিহীনদের বিচার সম্বন্ধীয় বিষয়। পিতর পূর্বেই এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলেন। (২ পিতর ১:১৬-১৯; ২:৩-১০) যিহূদা হনোক সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন যিনি অন্যায়কারীদের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচার সম্বন্ধে সতর্ক করার ক্ষেত্রে প্রথম নথিবদ্ধ ভাববাদী ছিলেন। (যিহূদা ১৪, ১৫) অন্যান্য ভাববাদীরা হনোককে অনুসরণ করেছিলেন আর পিতর চান না যে তারা যা লিখেছিলেন আমরা তা ভুলে যাই।—যিশাইয় ৬৬:১৫, ১৬; সফনিয় ১:১৫-১৮; সখরিয় ১৪:৬-৯.
৬. খ্রীষ্ট এবং তাঁর প্রেরিতদের কোন্ বক্তব্য আমাদের যিহোবার দিনের বিষয়ে আলোকিত করে?
৬ এছাড়াও, পিতর তার পাঠকদের “ত্রাণকর্ত্তা প্রভুর আজ্ঞা” স্মরণ করতে বলেন। যীশুর আজ্ঞা এই পরামর্শটিকে অন্তর্ভুক্ত করে: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, . . . পাছে . . . তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।” “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও; কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না।” (লূক ২১:৩৪-৩৬; মার্ক ১৩:৩৩) প্রেরিতদের কথায় মনোযোগ দেওয়ার জন্যও পিতর আমাদের উৎসাহিত করেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “রাত্রিকালে যেমন চোর, তেমনি প্রভুর দিন আসিতেছে। অতএব আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।”—১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৬.
উপহাসকারীদের অভিলাষ
৭, ৮. (ক) যারা ঈশ্বরের সতর্কতামূলক বার্তাকে উপহাস করে তারা কিধরনের লোক? (খ) উপহাসকারীরা কী দাবি করে থাকে?
৭ যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল, পিতরের এই উপদেশের কারণ হল কিছুজন এইধরনের সতর্কবাণীর প্রতি ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছিল, এমনকি প্রচীনকালের ইস্রায়েলীয়রাও যেমন যিহোবার ভাববাদীদের বিদ্রূপ করেছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৬) পিতর ব্যাখ্যা করেন: “প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ পিতর ৩:৩) যিহূদা বলেন যে এই উপহাসকারীদের অভিলাষ হল “ভক্তিবিরুদ্ধ।” তিনি তাদের “প্রাণিক, আত্মাবিহীন” বলে সম্বোধন করেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—যিহূদা ১৭-১৯.
৮ পিতর বলেছিলেন যে এই মিথ্যা শিক্ষকেরা যারা “মাংসের অনুবর্ত্তী হইয়া অশুচি ভোগের অভিলাষে চলে,” সম্ভবত এই উপহাসকারীদের অন্তর্ভুক্ত যারা আধ্যাত্মিকতাহীন। (২ পিতর ২:১, ১০, ১৪) তারা বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের বিদ্রূপাত্মকভাবে জিজ্ঞাসা করে: “তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।”—২ পিতর ৩:৪.
৯. (ক) ঈশ্বরের বাক্যে পরিব্যাপ্ত তৎপরতার মনোভাবকে কেন উপহাসকারীরা ছোট করার চেষ্টা করে? (খ) যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষায় থাকা কেন আমাদের জন্য সুরক্ষামূলক?
৯ কেন এই উপহাস? কেন এমন বলা হয় যে খ্রীষ্টের উপস্থিতি কখনও ঘটবে না আর ঈশ্বর কখনও মানুষের বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ করেননি ও কখনও করবেনও না? হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্যে পরিব্যাপ্ত তৎপরতার মনোভাবকে অগ্রাহ্য করার দ্বারা এই প্রাণিক উপহাসকারীরা অন্যদের আধ্যাত্মিক উদাসীনতার এক স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসার পথ খোঁজে আর এইভাবে তাদের স্বার্থপর প্রলুব্ধকরণের সহজ শিকারে পরিণত করে। আজকে আমাদের জন্য আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য কতই না শক্তিশালী উৎসাহ! আমরা যেন যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষায় থাকি এবং সর্বদা স্মরণে রাখি যে তাঁর চক্ষু আমাদের উপর আছে! তাহলে আমরা উদ্যোগের সাথে যিহোবার সেবা করতে অনুপ্রাণিত হব ও আমাদের নৈতিক শুদ্ধতা রক্ষা করব।—গীতসংহিতা ১১:৪; যিশাইয় ২৯:১৫; যিহিষ্কেল ৮:১২; ১২:২৭; সফনিয় ১:১২.
ইচ্ছাকৃত এবং ঘৃণ্য
১০. কিভাবে পিতর প্রমাণ করেন যে উপহাসকারীরা ভুল?
১০ এইধরনের উপহাসকারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে উপেক্ষা করে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এটিকে উপেক্ষা করে এবং অন্যদের এটি ভুলে যেতে বাধ্য করে। কেন? কারণ যেন তারা আরও সহজে লোকেদের প্রলুব্ধ করতে পারে। পিতর লেখেন, “বস্তুতঃ সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্ব্বক ইহা ভুলিয়া যায়।” কোন্ বিষয়টি? “যে, আকাশমণ্ডল, এবং জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত পৃথিবী ঈশ্বরের বাক্যের গুণে প্রাক্কালে ছিল; তদ্দ্বারা তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ পিতর ৩:৫, ৬) হ্যাঁ, যিহোবা জলপ্লাবনের সময় নোহের দিনের পৃথিবীকে দুষ্টতা থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলেন এমন একটি বিষয় যেটি সম্বন্ধে যীশুও জোর দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:৩৭-৩৯; লূক ১৭:২৬, ২৭; ২ পিতর ২:৫) সুতরাং, উপহাসকারীরা যা বলে তার বিপরীতে “সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন” সমস্ত কিছু তেমনই ক্রমাগত চলতে থাকে নি।
১১. প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কোন্ অপরিপক্ব প্রত্যাশা কিছুজনকে তাদের উপহাস করতে পরিচালিত করেছিল?
১১ উপহাসকারীরা হয়ত বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের বিদ্রূপ করেছে কারণ তাদের প্রত্যাশা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। যীশুর মৃত্যুর অল্প কিছু আগেই, তাঁর শিষ্যেরা “অনুমান করিতেছিল যে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রকাশ তখনই হইবে।” তারপর, তাঁর পুনরুত্থানের পর তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে রাজ্য ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে কি না। এছাড়াও পিতর তার দ্বিতীয় পত্রটি লেখার প্রায় দশ বছর আগে কিছুজন “কোন বাক্য দ্বারা,” অথবা, “কোন পত্র দ্বারা,” “উদ্বিগ্ন” হয়েছিল এটি মনে করে যে প্রেরিত পৌল অথবা তার সঙ্গীরা জানিয়েছে “যে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন উপস্থিত হইল।” (লূক ১৯:১১; ২ থিষলনীকীয় ২:২; প্রেরিত ১:৬) কিন্তু, যীশুর শিষ্যদের এইধরনের প্রত্যাশা মিথ্যা ছিল না, তা কেবলমাত্র অপরিপক্ব ছিল। যিহোবার দিন আসবে!
ঈশ্বরের বাক্য নির্ভরযোগ্য
১২. “সদাপ্রভুর দিন” সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলির ক্ষেত্রে কিভাবে ঈশ্বরের বাক্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে?
১২ যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাক্-খ্রীষ্টীয় ভাববাদীরা প্রায়ই সতর্ক করেছিলেন যে যিহোবার প্রতিশোধের দিন নিকটবর্তী ছিল। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে “সদাপ্রভুর দিন” এর এক ক্ষুদ্ররূপ এসেছিল যখন যিহোবা তাঁর প্রতি স্বেচ্ছাচারী লোকেদের উপর তার প্রতিশোধমূলক বিচার নিষ্পন্ন করেছিলেন। (সফনিয় ১:১৪-১৮) পরে, অন্যান্য জাতিগুলি যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বাবিলন ও মিশর “সদাপ্রভুর দিন” ভোগ করেছিল। (যিশাইয় ১৩:৬-৯; যিরমিয় ৪৬:১-১০; ওবদিয় ১৫) প্রথম শতাব্দীর যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ সম্পর্কেও ভাববাণী করা হয়েছিল আর এটি ঘটেছিল যখন রোমীয় সৈন্যবাহিনী সা.কা. ৭০ সালে যিহূদা ধ্বংস করেছিল। (লূক ১৯:৪১-৪৪; ১ পিতর ৪:৭) কিন্তু পিতর এক ভবিষ্যৎ “সদাপ্রভুর দিন” সম্বন্ধে নির্দেশ করেন যেটি এমনকি পৃথিবীব্যাপী প্রসারিত প্লাবনকেও ক্ষুদ্র প্রমাণ করবে!
১৩. কোন্ ঐতিহাসিক উদাহরণ এই বিধিব্যবস্থার শেষের নিশ্চয়তা সম্বন্ধে দেখায়?
১৩ পিতর আগত ধ্বংস সম্বন্ধে তার বর্ণনার সাথে পরিচয় করান এই বলে যে “আবার সেই বাক্যের গুণে।” তিনি সবেমাত্র বলেছিলেন যে “ঈশ্বরের বাক্যের গুণে” জলপ্লাবনের পূর্ববর্তী পৃথিবী “জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত” ছিল। এই ঘটনাটি বাইবেলের সৃষ্টির বিবরণে বর্ণিত আছে যা জলপ্লাবনকে সম্ভব করেছিল যখন জল যিহোবার নির্দেশনায় অথবা বাক্যে আপ্লাবিত হয়েছিল। পিতর আরও বলেন: “আবার [ঈশ্বরের] সেই বাক্যের গুণে এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী অগ্নির নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে, ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন পর্য্যন্ত রক্ষিত হইতেছে।” (২ পিতর ৩:৫-৭; আদিপুস্তক ১:৬-৮) এরজন্য আমাদের কাছে যিহোবার নির্ভরযোগ্য বাক্য আছে! তিনি “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী”—এই বিধিব্যবস্থার এক শেষ নিয়ে আসবেন—তাঁর মহাদিনের অগ্নিময় ক্রোধের দ্বারা! (সফনিয় ৩:৮) কিন্তু কখন?
শেষ আসার প্রতীক্ষায় উৎসুক
১৪. কেন আমরা প্রত্যয়ী হতে পারি যে আমরা এখন “শেষ কালে” বাস করছি?
১৪ যীশুর শিষ্যেরা জানতে চেয়েছিলেন যে কখন শেষ আসবে, সুতরাং তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” স্পষ্টতই তারা জিজ্ঞাসা করছিলেন যে কখন যিহূদী ব্যবস্থার শেষ আসবে কিন্তু যীশুর উত্তর প্রাথমিকভাবে এই বিষয়টিকে নির্দেশ করেছিল যে কখন বর্তমান “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী” ধ্বংস ভোগ করবে। যীশু এইধরনের বিষয়গুলি সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন যেমন বৃহৎ যুদ্ধ, খাদ্যাভাব, ভূমিকম্প, রোগ ও অপরাধ। (মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:৫-৩৬) ১৯১৪ সাল থেকে আমরা যীশুর দেওয়া ‘যুগান্ত’ সম্বন্ধীয় চিহ্নটি ও একইভাবে প্রেরিত পৌলের উল্লেখিত সেই বিষয়গুলি যা ‘শেষ কালকে’ শনাক্ত করবে পূর্ণ হতে দেখেছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) সত্যই পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে যে আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে বাস করছি!
১৫. যীশুর সাবধানবাণী সত্ত্বেও খ্রীষ্টানেরা কোন্ বিষয়টি করতে প্রবণতা দেখিয়েছে?
১৫ কখন যিহোবার দিন আসবে সেই বিষয়ে জানার জন্য, যিহোবার সাক্ষীরা উৎসুক হয়ে আছে। তাদের ঔৎসুক্যের কারণে তারা কখনও কখনও হয়ত কখন সেটি আসবে সেই বিষয়ে গণনা করার প্রচেষ্টাও করেছে। কিন্তু এটি করে তারা ব্যর্থ হয়েছে, যেমন যীশুর প্রাথমিক শিষ্যেরা তাদের প্রভুর সতর্কবার্তা যে আমরা ‘সেই দিনের বা সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানি না’ এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে করেছিলেন। (মার্ক ১৩:৩২, ৩৩) উপহাসকারীরা বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের তাদের অপরিপক্ব প্রত্যাশার কারণে বিদ্রূপ করেছে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) তৎসত্ত্বেও, যিহোবার দিন আসবে যে সম্বন্ধে পিতর ইতিবাচকভাবে বলেন তাঁর সময়সারণী অনুসারে।
যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন
১৬. কোন্ উপদেশটি আমরা বিজ্ঞতার সাথে পালন করি?
১৬ সময় সম্বন্ধে আমাদের যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন যেমন পিতর এখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন: “কিন্তু প্রিয়তমেরা, তোমরা এই এক কথা ভুলিও না যে, প্রভুর কাছে এক দিন সহস্র বৎসরের সমান, এবং সহস্র বৎসর এক দিনের সমান।” আমাদের ৭০ অথবা ৮০ বছরের জীবন-দৈর্ঘের তুলনায় কতই না সংক্ষিপ্ত! (২ পিতর ৩:৮; গীতসংহিতা ৯০:৪, ১০) সুতরাং যদি আপাতদৃষ্টিতে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলির পরিপূর্ণতায় বিলম্ব হচ্ছে বলে মনেও হয়, আমাদের ঈশ্বরের ভাববাদীর পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন: “তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (বাকাঁ অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—হবক্কূক ২:৩.
১৭. যদিও অনেকে যা প্রত্যাশা করে থাকে তার থেকে শেষকাল অনেক বেশি দীর্ঘসময় ধরে চলছে বলে মনে হয়, তবুও আমরা কোন্ বিষয়ে প্রত্যয়ী হতে পারি?
১৭ কেন অনেকে যেমন প্রত্যাশা করেছিল, এই বিধিব্যবস্থার শেষ দিনগুলি তার চেয়েও আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে? একটি উত্তম কারণ হল, যেমন পিতর এরপর ব্যাখ্যা করেন: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) সমস্ত মানবজাতির জন্য যা সর্বাপেক্ষা মঙ্গলজনক যিহোবা সেটি বিবেচনা করেন। তিনি লোকেদের জীবন সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন, যেমন তিনি বলেন: “দুষ্ট লোকের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্ট লোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, [ইহাতেই আমার সন্তোষ]।” (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) তাই আমরা প্রত্যয়ী হতে পারি যে, আমাদের সর্ব-জ্ঞানী, প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য ঠিক উপযুক্ত সময়ে শেষ আসবে!
কোন্ বিষয়টি লুপ্ত হবে?
১৮, ১৯. (ক) কেন যিহোবা এই বিধিব্যবস্থা ধ্বংস করতে সংকল্পবদ্ধ? (খ) পিতর কিভাবে এই ব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে বর্ণনা করেন এবং প্রকৃতপক্ষে কী ধ্বংস হবে?
১৮ যেহেতু যারা তার সেবা করে যিহোবা সত্যই তাদের প্রেম করেন, তিনি তাদের সকলকে নিশ্চিহ্ন করবেন যারা তাদের দুর্দশার কারণস্বরূপ হয়। (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯) পূর্বে পৌল যেমন বলেছিলেন যে এই ধ্বংস এক অপ্রত্যাশিত সময়ে আসবে সেটি উল্লেখ করে পিতর লেখেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১০; ১ থিষলনীকীয় ৫:২) জলপ্লাবনের সময় আক্ষরিক আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ধ্বংস হয়নি আর সেগুলি যিহোবার দিনেও হবে না। তাহলে কী “উড়িয়া যাইবে” অথবা ধ্বংস হবে?
১৯ মানব সরকারগুলি যারা মানবজাতির উপর কর্তৃত্ব করে এসেছে ‘আকাশমণ্ডলের’ তুল্য যেটি শেষ হবে আর সেইরকমই “পৃথিবী” অথবা ঈশ্বরবিহীন মানব সমাজের প্রতি ঘটবে। “হূহূ শব্দ” সম্ভবত আকাশমণ্ডলের দ্রুত প্রস্থানকে ইঙ্গিত করে। “মূলবস্তু সকল” যা আজকের অধঃপতিত মানব সমাজ দ্বারা গঠিত “বিলীন” অথবা ধ্বংস হবে। আর “পৃথিবী” “তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল” সহ “পুড়িয়া যাইবে।” যিহোবা সর্বাত্মকভাবে লোকেদের দুষ্ট কার্যাবলীকে প্রকাশ করবেন যখন তিনি সম্পূর্ণ জগৎ ব্যবস্থার জন্য তার যথার্থ শেষ নিয়ে আসবেন।
আপনার আশার প্রতি দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করুন
২০. সম্মুখবর্তী বিষয়ের প্রতি আমাদের জ্ঞানের আমাদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করা উচিত?
২০ যেহেতু এই নাটকীয় ঘটনাগুলি খুবই নিকটে, পিতর বলেন যে আমাদের অবশ্যই “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে . . . ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে” থাকা উচিত। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না! “আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) এই নাটকীয় ঘটনাগুলি কাল শুরু হতে পারে এই বিষয়টি আমরা যা কিছু করি অথবা করার জন্য পরিকল্পনা করি সেগুলিকে প্রভাবিত করা উচিত।
২১. বর্তমান আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর পরিবর্তে কী আসবে?
২১ পিতর এখন এই বলে আমাদের জানান যে কোন্ বিষয়টি পুরনো ব্যবস্থার পরিবর্তে আসবে: “কিন্তু তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩; যিশাইয় ৬৫:১৭) কতই না বৃহৎ স্বস্তি! খ্রীষ্ট ও তার ১,৪৪,০০০ জন সহশাসক এক “নূতন” সরকারসুলভ “আকাশমণ্ডল” গঠন করবেন এবং সেই লোকেরা যারা এই জগতের ধ্বংস থেকে রক্ষা পাবে তারা এক “নূতন পৃথিবী” গড়ে তুলবে।—১ যোহন ২:১৭; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১, ৩.
তৎপরতা এবং নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রাখুন
২২. (ক) যে কোন আধ্যাত্মিক কলঙ্ক অথবা দোষ এড়াতে কী আমাদের সাহায্য করবে? (খ) কোন্ বিপদ সম্বন্ধে পিতর সতর্ক করেন?
২২ পিতর আরও বলেন, “অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়! আর আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর।” উৎসুক প্রত্যাশাসহ অপেক্ষা করা ও যিহোবার দিন সম্বন্ধীয় যে কোন আপাত বিলম্বকে ঐশিক ধৈর্যের প্রকাশ হিসাবে দেখা আমাদের যে কোন রকম আধ্যাত্মিক কলঙ্ক অথবা দোষকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। তবুও, বিপদ আছে! পিতর সতর্ক করেন যে ‘আমাদের প্রিয় ভ্রাতা পৌল’ এর লেখায় “কোন কোন কথা বুঝা কষ্টকর; অজ্ঞান ও চঞ্চল লোকেরা যেমন অন্য সমস্ত শাস্ত্রলিপি, তেমনি সেই কথাগুলিরও বিরূপ অর্থ করে, আপনাদেরই বিনাশার্থে করে।”—২ পিতর ৩:১৪-১৬.
২৩. পিতরের উপসংহারমূলক উপদেশটি কী?
২৩ লম্পটতার জন্য এক অজুহাত হিসাবে সেগুলিকে ব্যবহার করে মিথ্যা শিক্ষকেরা স্পষ্টতই ঈশ্বরের অযাচিত করুণা সম্পর্কে পৌলের লেখাকে বিকৃত করেছিল। সম্ভবত পিতরের মনে এটি ছিল যখন তিনি তার বিদায়ী উপদেশটি লিখছিলেন: “অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও।” তারপর তিনি এই উপদেশ দিয়ে তার পত্রটির উপসংহার করেন: “আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।”—২ পিতর ৩:১৭, ১৮.
২৪. কোন্ মনোভাবটি সমস্ত যিহোবার সাক্ষীদের সাগ্রহে গ্রহণ করা উচিত?
২৪ স্পষ্টতই, পিতর তার ভাইয়েদের শক্তিশালী করতে চান। তিনি আকাঙ্ক্ষা করেন যে সকলেরই সেই একইরূপ মনোভাব থাকুক যেটি প্রারম্ভেই উদ্ধৃত সেই ৮২ বছর বয়স্ক বিশ্বস্ত সাক্ষীর দ্বারা ব্যক্ত হয়েছিল: “আমি সেইভাবে জীবনযাপন করেছি যেমন প্রেরিত পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের আকাঙ্ক্ষা করিতে থাক।’ আমি সবসময় প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎকে ‘যদিও সেটি দেখা যায়নি তবুও এক বাস্তব বিষয় হিসাবে’ দেখে এসেছি।” আমরা যেন সকলে একইভাবে আমাদের জীবন যাপন করি।
আপনি কিভাবে সাড়া দেবেন?
◻ যিহোবার দিনের ‘আকাঙ্ক্ষা কর’ এই অভিব্যক্তিটির অর্থ কী?
◻ কোন্ বিষয়টি উপহাসকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করে এবং কেন?
◻ কোন্ কারণে উপহাসকারীরা বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের বিদ্রূপ করেছে?
◻ আমাদের কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা প্রয়োজন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার দিনের . . . .
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
. . . এবং তারপর আগত নতুন পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা করুন