লূক লিখিত সুসমাচার
২২ তখন খামিরবিহীন* রুটির উৎসব এগিয়ে আসছিল, যেটাকে নিস্তারপর্ব বলা হয়। ২ আর প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকেরা তাঁকে হত্যা করার জন্য একটা ভালো সুযোগ খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় পেত। ৩ পরে শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার মধ্যে প্রবেশ করল। এ সেই ১২ জনের* মধ্যে একজন। ৪ আর সে প্রধান যাজকদের এবং মন্দিরের রক্ষীদের অধ্যক্ষদের কাছে গেল এবং কীভাবে যিশুকে তাদের হাতে ধরিয়ে দেবে, সেই বিষয়ে কথা বলল। ৫ তার কথা শুনে তারা আনন্দিত হল এবং তাকে বলল যে, তারা তাকে রৌপ্যমুদ্রা দেবে। ৬ এতে সে রাজি হল এবং তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এমন উপযুক্ত সময় খুঁজতে লাগল, যখন তাঁর আশেপাশে লোকেরা থাকবে না।
৭ পরে খামিরবিহীন* রুটির উৎসবের দিন এল, যে-দিন নিস্তারপর্বের বলি উৎসর্গ করা হতো; ৮ তখন যিশু পিতর ও যোহনকে এই কথা বলে পাঠালেন: “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করো, যেন আমরা তা খেতে পারি।” ৯ তারা তাঁকে বললেন: “আপনার ইচ্ছা কী? আমরা কোথায় আপনার জন্য এই ভোজ প্রস্তুত করব?” ১০ তিনি তাদের বললেন: “দেখো! তোমরা যখন নগরে প্রবেশ করবে, তখন সেখানে এমন একজন লোকের সঙ্গে তোমাদের দেখা হবে, যে একটা মাটির কলসী নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তার পিছন পিছন গিয়ে সে যে-বাড়িতে প্রবেশ করবে, সেখানে প্রবেশ কোরো। ১১ সেই বাড়ির মালিককে এই কথা বোলো, ‘গুরু আপনাকে জিজ্ঞেস করেছেন: “আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে যেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি, সেই ঘরটা কোথায়?”’ ১২ তখন সে তোমাদের উপরের একটা বড়ো সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে। সেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কোরো।” ১৩ পরে তারা গিয়ে তিনি যেমনটা বলেছিলেন, ঠিক তেমনই দেখতে পেলেন। আর তারা সেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
১৪ যখন সময় হল, তখন তিনি প্রেরিতদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে বসলেন।* ১৫ আর তিনি তাদের বললেন: “আমার কষ্টভোগের আগে আমি তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে ছিলাম; ১৬ কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে সমস্ত কিছু পরিপূর্ণ হয়, ততদিন পর্যন্ত আমি আর এই ভোজ খাব না।” ১৭ আর তিনি একটা পেয়ালা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং বললেন: “তোমরা প্রত্যেকে এটা নাও আর এখান থেকে পান করো, ১৮ কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্য আসে, ততদিন পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস* পান করব না।”
১৯ আর তিনি একটা রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে সেটা ভাঙলেন এবং তাদের দিয়ে বললেন: “এটা আমার দেহকে চিত্রিত করে, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। আমার স্মরণে এটা কোরো।” ২০ নিস্তারপর্বের ভোজ শেষ করার পর একইভাবে তিনি একটা পেয়ালা নিলেন আর তাদের দিয়ে বললেন: “এই পেয়ালা নতুন চুক্তিকে চিত্রিত করে, যা আমার রক্তের মাধ্যমে কার্যকর হবে। আমার এই রক্ত তোমাদের জন্য ঢেলে দেওয়া হবে।
২১ “কিন্তু দেখো! যে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সে আমার সঙ্গে এই টেবিলে বসে রয়েছে। ২২ কারণ মনুষ্যপুত্রের* বিষয়ে যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তেমনই তিনি যাচ্ছেন; কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে, যে মনুষ্যপুত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে!” ২৩ তাই, তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, তাদের মধ্যে কেই-বা এমন কাজ করতে পারে!
২৪ এ ছাড়া, তাদের মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করলেন। ২৫ কিন্তু, তিনি তাদের বললেন: “ন-যিহুদিদের রাজারা তাদের উপর প্রভুত্ব করে এবং তাদের উপর যারা কর্তৃত্ব করে, তারা পরোপকারী বলে পরিচিত। ২৬ কিন্তু, তোমাদের মধ্যে যেন এমনটা না হয়। বরং তোমাদের মধ্যে যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সে যেন সবচেয়ে ক্ষুদ্র হয় আর তোমাদের মধ্যে যে নেতৃত্ব নেয়, সে যেন একজন সেবক হয়। ২৭ কারণ কে শ্রেষ্ঠ, যে খাওয়া-দাওয়া করে,* না কি যে সেবা* করে? যে খাওয়া-দাওয়া করে,* সে-ই কি নয়? কিন্তু, আমি তোমাদের মধ্যে একজন সেবকের* মতো।
২৮ “তবে, তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার সময়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছ; ২৯ আর আমি তোমাদের সঙ্গে একটা রাজ্যের জন্য এক চুক্তি করছি, যেমনটা আমার পিতাও আমার সঙ্গে এক চুক্তি করেছেন, ৩০ যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার টেবিলে বসে ভোজন-পান করতে পার এবং সিংহাসনে বসে ইজরায়েলের ১২ বংশের বিচার করতে পার।
৩১ “শিমোন, শিমোন, দেখো! শয়তান তোমাদের সবাইকে গমের মতো চালবার জন্য তোমাদের চেয়েছে। ৩২ কিন্তু, আমি তোমার জন্য বিনতি করেছি, যেন তোমার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে না পড়ে; আর তুমি অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার পর তোমার ভাইদের শক্তিশালী কোরো।” ৩৩ তখন পিতর তাঁকে বললেন: “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে যেতে এবং মারা যেতেও প্রস্তুত আছি।” ৩৪ কিন্তু, তিনি বললেন: “পিতর, আমি তোমাকে বলছি, যে-পর্যন্ত না তুমি আমাকে চিনতে তিন বার অস্বীকার করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না।”
৩৫ তিনি তাদের আরও বললেন: “আমি যখন টাকার থলি, খাবারের থলি এবং জুতো ছাড়াই তোমাদের পাঠিয়েছিলাম, তখন তোমাদের কি কোনো কিছুর অভাব হয়েছিল?” তারা বললেন: “না!” ৩৬ তখন তিনি তাদের বললেন: “কিন্তু, এখন যার কাছে টাকার থলি এবং খাবারের থলি রয়েছে, সে সেগুলো সঙ্গে নিক। আর যার খড়্গ নেই, সে যেন নিজের চাদর বিক্রি করে একটা খড়্গ কিনে নেয়। ৩৭ কারণ আমি তোমাদের বলছি, শাস্ত্রের এই কথাগুলো আমার ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে, ‘তাঁকে আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে গণনা করা হল।’ আমার সম্বন্ধে বলা এই কথাগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে।” ৩৮ তখন তারা বললেন: “প্রভু, এই দেখুন! দুটো খড়্গ আছে।” তিনি তাদের বললেন: “এই যথেষ্ট।”
৩৯ পরে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যথারীতি জৈতুন পর্বতে গেলেন আর শিষ্যেরাও তাঁর পিছন পিছন গেলেন। ৪০ সেই স্থানে পৌঁছে তিনি তাদের বললেন: “ক্রমাগত প্রার্থনা করো, যাতে তোমরা প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার না কর।” ৪১ আর তিনি তাদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে* গেলেন এবং হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন, ৪২ বললেন: “পিতা, যদি তুমি চাও, তা হলে এই পেয়ালা আমার কাছ থেকে দূর করো। তবে, আমার ইচ্ছা নয়, বরং তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।” ৪৩ তখন একজন স্বর্গদূত দেখা দিয়ে তাঁকে শক্তিশালী করলেন। ৪৪ কিন্তু, তিনি মানসিকভাবে এতটাই কষ্টের মধ্যে ছিলেন যে, তিনি আরও আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন; আর তাঁর ঘাম যেন রক্তের ফোঁটা হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল। ৪৫ তিনি প্রার্থনা শেষ করে যখন শিষ্যদের কাছে গেলেন, তখন তিনি দেখলেন, তারা মনের দুঃখে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ৪৬ তিনি তাদের বললেন: “তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো, ক্রমাগত প্রার্থনা করো, যাতে তোমরা প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার না কর।”
৪৭ তিনি কথা বলছিলেন, এমন সময় দেখো! অনেক লোক তাঁর কাছে এল। আর যিহূদা, সেই ১২ জনের মধ্যে একজন, তাদের আগে আগে আসছিল। সে যিশুকে চুম্বন করার জন্য তাঁর কাছে এল। ৪৮ কিন্তু, যিশু তাকে বললেন: “যিহূদা, তুমি কি চুম্বন করে মনুষ্যপুত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছ?” ৪৯ তাঁর আশেপাশে যারা ছিলেন, তারা যখন দেখলেন কী ঘটতে যাচ্ছে, তখন তারা বললেন: “প্রভু, আমরা কি খড়্গ দিয়ে আঘাত করব?” ৫০ এমনকী তাদের মধ্যে একজন মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেলেন। ৫১ কিন্তু যিশু বললেন: “যথেষ্ট হয়েছে।” আর তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন। ৫২ এরপর যিশু, যারা তাঁকে ধরতে এসেছিল, সেই প্রধান যাজকদের, মন্দিরের রক্ষীদের অধ্যক্ষদের এবং যিহুদি নেতাদের বললেন: “একটা দস্যুকে যেমন ধরতে যায়, তেমনই তোমরা কি খড়্গ ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? ৫৩ আমি যখন প্রতিদিন মন্দিরে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন তো তোমরা আমাকে গ্রেপ্তার করনি। কিন্তু, এখন তোমাদের সময়, অন্ধকারের কর্তৃত্বের সময়।”
৫৪ পরে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে চলল এবং তাঁকে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে এল; কিন্তু পিতর কিছুটা দূরে থেকে তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলেন। ৫৫ লোকেরা যখন প্রাঙ্গণের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে একসঙ্গে বসল, তখন পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন। ৫৬ কিন্তু, একজন দাসী তাকে আগুনের সামনে বসে থাকতে দেখে তার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল: “এই ব্যক্তিও ওর সঙ্গে ছিল।” ৫৭ কিন্তু, পিতর তা অস্বীকার করে বললেন: “আমি তাঁকে চিনি না।” ৫৮ একটু পরে আরেকজন তাকে দেখে বলল: “তুমি ওদেরই একজন।” কিন্তু পিতর বললেন: “না, আমি নই।” ৫৯ আর প্রায় এক ঘণ্টা পর, আরেকজন ব্যক্তি জোর দিয়ে বলতে লাগল: “এই ব্যক্তি অবশ্যই ওর সঙ্গে ছিল, কারণ এ একজন গালীলীয়!” ৬০ কিন্তু পিতর বললেন: “তুমি কী বলছ, তা আমি বুঝতে পারছি না।” তিনি কথা বলছিলেন, আর ঠিক সেই মুহূর্তে একটা মোরগ ডেকে উঠল। ৬১ এতে প্রভু মুখ ঘুরিয়ে সরাসরি পিতরের দিকে তাকালেন। তখন পিতরের মনে পড়ে গেল, প্রভু তাকে বলেছিলেন: “আজ মোরগ ডাকার আগে তুমি আমাকে তিন বার অস্বীকার করবে।” ৬২ পরে তিনি বাইরে চলে গেলেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
৬৩ আর যে-লোকেরা যিশুকে ধরে গ্রেপ্তার করেছিল, তারা তাঁকে নিয়ে উপহাস করতে লাগল, তাঁকে আঘাত করতে লাগল; ৬৪ আর তাঁর মুখ ঢেকে তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল: “তুই যদি ভাববাদী হস, তা হলে বল দেখি, কে তোকে মারল?” ৬৫ তারা তাঁকে নিন্দা করে আরও অনেক কথা বলতে লাগল।
৬৬ আর যখন দিন হল, তখন যিহুদি পরিষদের সমস্ত সদস্য অর্থাৎ প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকেরা মহাসভায়* একত্রিত হল। আর তারা যিশুকে তাদের সামনে নিয়ে এসে বলল: ৬৭ “তুমি যদি খ্রিস্ট হও, তা হলে আমাদের তা বলো।” কিন্তু, তিনি তাদের বললেন: “আমি যদি তোমাদের বলি, তবুও তোমরা তা বিশ্বাস করবে না। ৬৮ আর আমি যদি তোমাদের প্রশ্ন করি, তোমরা উত্তর দেবে না। ৬৯ তবে, এখন থেকে মনুষ্যপুত্র শক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে বসে থাকবেন।” ৭০ এতে তারা সকলে বলল: “তুমি কি তাহলে ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি তাদের বললেন: “তোমরা নিজেরাই তা বললে।” ৭১ তারা বলল: “আমাদের আর সাক্ষ্যের কী প্রয়োজন? কারণ আমরা নিজেরাই তো ওর মুখ থেকে শুনলাম।”