পাঠ ৪২
অবিবাহিত থাকা এবং বিয়ে করার বিষয়ে বাইবেল কী বলে?
কিছু সংস্কৃতিতে লোকেরা মনে করে, বিয়ে না করলে একজন ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। কিন্তু, যারা বিয়ে করে তারা যে সবাই সুখী, এমন নয়। আবার যারা বিয়ে করে না, তারা যে সবাই অসুখী, সেটাও নয়। আসলে, সত্য বিষয়টা কী, তা বাইবেল আমাদের জানায়। এটি বলে, অবিবাহিত থাকা এবং বিয়ে করা, দুটোই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহার।
১. অবিবাহিত থাকার কিছু উপকার কী?
বাইবেল বলে: “যে বিয়ে করে, সে ভালো করে, কিন্তু যে বিয়ে না করে, সে আরও ভালো করে।” (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩২, ৩৩, ৩৮.) কীভাবে? একজন অবিবাহিত ব্যক্তির তার সাথির প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করার চিন্তা থাকে না আর সাধারণত তিনি স্বাধীন থাকেন। তাই, অবিবাহিত ব্যক্তিরা যিহোবার সেবায় আরও বেশি কিছু করতে পারে, যেমন, তারা সেই জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে পারে, যেখানে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মজবুত করার জন্য তারা বেশি সময় দিতে পারে।
২. একজন পুরুষ ও নারী যখন আইনত বিয়ে করে, তখন সেটার কোন কোন উপকারিতা রয়েছে?
অবিবাহিত থাকার যেমন একরকম উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি বিয়ে করার আরেক রকমের উপকারিতা রয়েছে। বাইবেল বলে: “এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল।” (উপদেশক ৪:৯) এই কথাগুলো বিশেষ করে সেই স্বামী ও স্ত্রীর প্রতি প্রযোজ্য, যারা বিয়ের বিষয়ে বাইবেলে দেওয়া নীতি মেনে চলে। একজন পুরুষ ও নারী যদি আইনত বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে, তা হলে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, তারা সারাজীবন একসঙ্গেই থাকবে। বিয়ে একজন পুরুষ ও নারীকে এক অটুট বন্ধনে বেঁধে রাখে। তাই, আইনত বিয়ে করলে স্বামী ও স্ত্রী সুরক্ষিত বোধ করে আর যখন তাদের সন্তান হয়, তখন সেও সুরক্ষিত বোধ করে।
৩. বিয়ের বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
যিহোবা যখন প্রথম পুরুষ ও নারীর বিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২৪) এর অর্থ হল, যিহোবা চান একজন স্বামী ও স্ত্রী যেন সারাজীবন একে অন্যকে ভালোবাসে এবং তারা যেন কখনো একে অন্যকে ছেড়ে না দেয়। যিহোবা বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি শুধু তখনই দেন, যখন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন ব্যভিচার করে। আর এই পরিস্থিতিতে একজন নির্দোষ সাথি বিবাহবিচ্ছেদa করবে, কি করবে না, সেটা যিহোবা তার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। (মথি ১৯:৯) যিহোবা খ্রিস্টানদের একের অধিক স্বামী অথবা স্ত্রী রাখার অনুমতি দেননি।—১ তীমথিয় ৩:২.
গভীরভাবে গবেষণা করুন
আপনি অবিবাহিত অথবা বিবাহিত হোন, কীভাবে আপনি সুখী হতে পারেন? আর কীভাবে আপনি যিহোবার হৃদয়কে খুশি করতে পারেন? আসুন তা জানি।
৪. অবিবাহিত থাকা হল একটা উপহার, এটাকে ভালোভাবে কাজে লাগান
যিশু অবিবাহিত থাকাকে এক দান বা উপহার হিসেবে দেখেছিলেন। (মথি ১৯:১১, ১২) মথি ৪:২৩ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
যিশু অবিবাহিত ছিলেন। কীভাবে তিনি এই উপহারকে তাঁর পিতার সেবা করার এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন?
যিশুর মতো অবিবাহিত খ্রিস্টানেরাও জীবনে সুখী হতে পারে। ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন।
কীভাবে অবিবাহিত ভাই-বোনেরা নিজেদের পরিস্থিতিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে?
আপনি কি জানেন?
একজন ব্যক্তি কোন বয়সে বিয়ে করবে, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু বলে না। কিন্তু, এটি আমাদের উৎসাহিত করে, যেন একজন ব্যক্তি “যৌবনের কচি বয়স পার” করার পরেই বিয়ে করার কথা চিন্তা করে। কারণ এই বয়সে যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেক প্রবল থাকে আর তাই একজন তরুণ বা তরুণী সেই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থায় না-ও থাকতে পারে।—১ করিন্থীয় ৭:৩৬.
৫. ভেবে-চিন্তে জীবনসঙ্গী বাছাই করুন
জীবনের বড়ো বড়ো সিদ্ধান্তের মধ্যে একটা হল, আমরা কাকে বিয়ে করব। মথি ১৯:৪-৬, ৯ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
কেন একজন খ্রিস্টানের তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করা উচিত নয়?
বাইবেল আমাদের জানায়, একজন জীবনসঙ্গীর মধ্যে কোন কোন গুণ থাকা প্রয়োজন। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো যে-গুণটা থাকতে হবে, তা হল, সে যেন যিহোবাকে ভালোবাসে।b ১ করিন্থীয় ৭:৩৯ এবং ২ করিন্থীয় ৬:১৪ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
কেন আমাদের কেবলমাত্র যিহোবার একজন উপাসককে বিয়ে করা উচিত?
আপনি যদি এমন কাউকে বিয়ে করেন, যিনি যিহোবাকে ভালোবাসেন না, তা হলে যিহোবার কেমন লাগবে?
৬. বিয়েকে যিহোবার মতো করে দেখুন
প্রাচীন কালে, কিছু ইজরায়েলীয় পুরুষ নিজেদের স্বার্থে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিল। মালাখি ২:১৩, ১৪, ১৬ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
কেউ যখন ব্যভিচার ছাড়া অন্য কোনো কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করে, তখন কেন যিহোবা এই বিষয়টাকে ঘৃণা করেন?
ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন।
আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী যদি যিহোবাকে সেবা না করে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন, যাতে আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখের হয়?
৭. বিয়ের বিষয়ে যিহোবার মান মেনে চলুন
বিয়ের বিষয়ে যিহোবার মান মেনে চলার জন্য একজন ব্যক্তিকে কঠোর প্রচেষ্টা করতে হতে পারে।c তবে, তিনি যদি তা করেন, তা হলে যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করবেন। ভিডিওটা দেখুন।
ইব্রীয় ১৩:৪ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
আপনার কি মনে হয়, বিয়ের বিষয়ে যিহোবার মান মেনে চলা কঠিন? কেন আপনি তা মনে করেন?
যিহোবা চান, একজন খ্রিস্টান যখন বিয়ে করেন কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তখন তা যেন আইনত বৈধ হয়। তীত ৩:১ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি নিশ্চিত যে, আপনার বিয়ে আইনত বৈধ?
কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে: “একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে একসঙ্গে থাকতেই পারে, বিয়ে করার কি কোনো প্রয়োজন আছে?”
উত্তরে আপনি কী বলবেন?
সারাংশ
অবিবাহিত থাকা এবং বিয়ে করা, এই দুটোই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। অবিবাহিত এবং বিবাহিত ব্যক্তিরা যদি যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তা হলে তারা উভয়েই সুখী হবে।
পুনরালোচনা
একজন অবিবাহিত ব্যক্তি কীভাবে তার পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে পারে?
বাইবেল কেন আমাদের বলে, কেবলমাত্র একজন যিহোবার উপাসককে বিয়ে করা উচিত?
বাইবেলের কোন নীতির উপর ভিত্তি করে বিবাহবিচ্ছেদ করা যেতে পারে?
আরও জানুন
“প্রভুতেই” বিয়ে করার অর্থ কী?
কীভাবে আপনি বিবাহসাথি বাছাই এবং বিয়ে করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? আসুন, এই বিষয়ে দুটো ছোটো ভিডিও দেখি।
একজন ভাই মনে করেন, তিনি যে-ত্যাগস্বীকার করেছেন, সেটার চেয়ে যিহোবার কাছ থেকে যে-আশীর্বাদ পেয়েছেন, তা অনেক বেশি। কেন তিনি এইরকম মনে করেন? আসুন তা জানি।
একজন ব্যক্তির তার জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে আলাদা থাকা কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ করার আগে, কোন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত?
“বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখান” (প্রহরীদুর্গ, ডিসেম্বর, ২০১৮)
b কিছু সংস্কৃতিতে, বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য জীবনসঙ্গী বাছাই করে। যে-বাবা ও মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসে, তারা ছেলে-মেয়েদের জন্য জীবনসঙ্গী বাছাই করার সময় এটা দেখবে না যে, সেই ব্যক্তির কাছে কত টাকাপয়সা রয়েছে অথবা জাগতিক পদমর্যাদা কী রয়েছে বরং এটা দেখবে যে, সেই ব্যক্তি যিহোবাকে কতটা ভালোবাসে।
c আপনি যদি বিয়ে না করে কারো সাথে একসঙ্গে বাস করেন, তা হলে এই পরিস্থিতিতে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি তাকে বিয়ে করবেন, না ছেড়ে দেবেন।