যা মন্দ তা প্রকাশ করবেন কেন?
“যেকোন বিষয়কে প্রকাশ করে সে লোকেদের শত্রুতে পরিণত হয়,” পশ্চিম আফ্রিকার একটি উক্তি। উলুর প্রতি তাই ঘটেছিল যখন সে তার বড় ভাইকে বোনের সাথে অজাচার করার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। ভাইটি চিৎকার করে বলেছিল “তুই একটা মিথ্যাবাদী!” সে তারপর উলুকে প্রচণ্ডভাবে মেরেছিল, তাকে পারিবারিক গৃহ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং উলুর সমস্ত কাপড় পুড়িয়ে দিয়েছিল। গ্রামবাসীরা ভাইটিকে সমর্থন করেছিল। গ্রামে প্রবেশের আর অনুমতি না পাওয়ার ফলে উলুকে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। কেবলমাত্র মেয়েটিকে গর্ভবতী দেখার পর লোকেরা বুঝতে পেরেছিল যে উলু সত্য কথা বলেছিল। ভাইটি স্বীকার করেছিল এবং উলুর প্রতি অনুগ্রহ দেখানো হয়েছিল। ঘটনাগুলি কিছুটা অন্যভাবেও ঘটতে পারত। উলুকে মেরে ফেলতে পারত।
স্পষ্টভাবে, যিহোবার প্রতি যাদের প্রেম নেই তারা সম্ভবত তাদের ভুল প্রকাশ হওয়াকে উপলব্ধি করে না। পাপী মানুষের প্রবণতা হল অনুযোগ প্রতিরোধ করা এবং যারা করে তাদের প্রতি বিরক্ত হওয়া। (যোহন ৭:৭ পদের সাথে তুলনা করুন।) এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে অনেকে পাথরের মত নিশ্চুপ থাকে যখন অন্যদের অপরাধগুলি তাদের কাছে প্রকাশ করার দায়িত্ব আসে যাদের সংশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে।
অনুযোগের মূল্য উপলব্ধি করা
কিন্তু, যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনুযোগ সম্বন্ধে ভিন্ন মনোভাব রয়েছে। ঈশ্বরীয় পুরুষ ও নারীরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অভ্যন্তরে বিপথগামী ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা যে ব্যবস্থা করেছেন তার প্রতি গভীরভাবে উপলব্ধি দেখায়। তারা উপলব্ধি করে যে এইরূপ শাসন তাঁর প্রেমপূর্ণ দয়ার একটি অভিব্যক্তি।—ইব্রীয় ১২:৬-১১.
এটি হয়ত রাজা দায়ূদের জীবনের একটি ঘটনার সাথে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যদিও অল্পবয়স থেকেই তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন, তথাপি এমন এক সময় এসেছিল যখন তিনি গুরুতর অপরাধ করেছিলেন। প্রথমত, তিনি ব্যভিচার করেছিলেন। তারপর, তার অপরাধ ঢাকার চেষ্টায় তিনি স্ত্রীলোকটির স্বামীকে হত্যা করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু যিহোবা দায়ূদের পাপ নাথন ভাববাদীর কাছে প্রকাশ করেছিলেন যিনি সাহসের সাথে বিষয়টি সম্বন্ধে দায়ূদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। একটি বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে নাথন দায়ূদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে সেই ধনী ব্যক্তির প্রতি কী করা উচিত যার অনেক মেষ ছিল কিন্তু সে তার বন্ধুকে আপ্যায়ন করার জন্য দরিদ্র ব্যক্তির মূল্যবান পোষা প্রাণী, একমাত্র মেষটিকে নিয়ে হত্যা করেছিল। প্রাক্তন মেষপালক, দায়ূদ ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি সেই কর্ম্ম করিয়াছে, সে মৃত্যুর সন্তান।” তখন নাথন দৃষ্টান্তটিকে দায়ূদের প্রতি প্রয়োগ করেন এই বলে: “আপনিই সেই ব্যক্তি।”—২ শমূয়েল ১২:১-৭.
দায়ূদ নাথনের উপর রেগে যাননি; তিনি নিজেকে রক্ষা করার অথবা পালটা অভিযোগ করার চেষ্টা করেননি। পরিবর্তে, নাথনের তিরস্কার তার বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। হৃদয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে দায়ূদ স্বীকার করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি।”—২ শমূয়েল ১২:১৩.
নাথনের দ্বারা দায়ূদের পাপ প্রকাশ আর তারপর ঈশ্বরীয় অনুযোগ উত্তম ফলগুলি উৎপন্ন করেছিল। যদিও দায়ূদ তার অপরাধের পরিণতিগুলি থেকে রক্ষা পাননি, তথাপি তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং পুনরায় যিহোবার সাথে সম্মিলিত হয়েছিলেন। দায়ূদ এইরূপ অনুযোগ সম্বন্ধে কিরূপ বোধ করেছিলেন? তিনি লিখেছিলেন: “ধার্ম্মিক লোক আমাকে প্রহার করুক, সেটী দয়া; সে আমাকে অনুযোগ করুক, তাহা মস্তকের তৈল; আমার মস্তক তাহা অগ্রাহ্য না করুক।”—গীতসংহিতা ১৪১:৫.
আমাদের দিনেও যিহোবার দাসেরা গুরুতর অপরাধে জড়িত হতে পারে, এমনকি তারাও যারা অনেক বছর যাবৎ বিশ্বস্ত হয়ে আসছেন। প্রাচীনেরা সহায়তা করতে পারেন তা উপলব্ধি করে অধিকাংশ লোকেরা সাহায্যের জন্য তাদের নিকটবর্তী হতে এগিয়ে যান। (যাকোব ৫:১৩-১৬) কিন্তু কখনও কখনও একজন অপরাধী হয়ত তার পাপ ঢাকার চেষ্টা করতে পারে যেমন রাজা দায়ূদ করেছিলেন। আমাদের কী করা উচিত যখন আমরা মণ্ডলীতে গুরুতর অপরাধ সম্বন্ধে জানতে পারি?
এটি কার দায়িত্ব?
যখন প্রাচীনেরা গুরুতর অপরাধ সম্বন্ধে জানতে পারেন, তখন তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান ও সংশোধন করার জন্য সেই জড়িত ব্যক্তিটির সম্মুখীন হন। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অভ্যন্তরে এইরূপ ব্যক্তিদের বিচার করার দায়িত্ব প্রাচীনদের রয়েছে। আধ্যাত্মিক অবস্থার উপর এক সতর্ক দৃষ্টি রেখে তারা যে কোন ব্যক্তিকে সহযোগিতা করেন এবং পরামর্শ দেন যারা মুর্খতাপূর্ণ অথবা ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে।—১ করিন্থীয় ৫:১২, ১৩; ২ তীমথিয় ৪:২; ১ পিতর ৫:১, ২.
কিন্তু কী হবে যদি আপনি একজন প্রাচীন না হন কিন্তু অন্য খ্রীষ্টানদের কিছু গুরুতর অপরাধ সম্বন্ধে জানতে পারেন? যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তাতে নির্দেশাবলি পাওয়া যায়। ব্যবস্থা উল্লেখ করে যে যদি একজন ব্যক্তি ধর্মভ্রষ্ট কাজ, কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, হত্যা অথবা অন্য কোন গুরুতর অপরাধগুলির সাক্ষী হন, তাহলে এটি প্রকাশ করা এবং তিনি যা জানতেন সেই সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া তার দায়িত্ব ছিল। লেবীয় পুস্তক ৫:১ পদ উল্লেখ করে: “আর যদি কেহ এইরূপে পাপ করে, সাক্ষী হইয়া, দিব্য করাইবার কথা শুনিলেও, যাহা দেখিয়াছে কিম্বা জানে, তাহা সে প্রকাশ না করে, তবে সে আপন অপরাধ বহন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:৬-৮; ইষ্টের ৬:২; হিতোপদেশ ২৯:২৪ পদের সাথে তুলনা করুন।
যদিও মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই, তথাপি আজকে খ্রীষ্টানেরা এর পশ্চাতের নীতিগুলি দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। (গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮) তাই আপনি যদি একজন সহখ্রীষ্টানের গুরুতর অপরাধ সম্বন্ধে জানেন, তাহলে আপনার কী করা উচিত?
বিষয়টি পরিচালনা করা
সর্বপ্রথমে, গুরুতর অপরাধ প্রকৃতই করা হয়েছে তা বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞ ব্যক্তি উল্লেখ করেছিলেন, “অকারণে তোমার প্রতিবাসীর বিপক্ষে সাক্ষী হইও না; তুমি কি ওষ্ঠ দ্বারা প্রতারণা করিতে চাহ?”—হিতোপদেশ ২৪:২৮.
আপনি হয়ত সরাসরি প্রাচীনদের কাছে যাওয়া স্থির করতে পারেন। এটি করা ভুল নয়। কিন্তু, সাধারণত সর্বাপেক্ষা প্রেমময় পথ হল জড়িত ব্যক্তির কাছে যাওয়া। সম্ভবত প্রকৃত ঘটনাটি তেমন নয় যা আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে। অথবা পরিস্থিতিটি সম্ভবত ইতিমধ্যেই প্রাচীনদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ব্যক্তির সাথে বিষয়টি নিয়ে শান্তভাবে আলোচনা করুন। একটি গুরুতর অপরাধ করা হয়েছে তা বিশ্বাস করার যদি কারণ থেকে থাকে, তাহলে তাকে সাহায্যের জন্য প্রাচীনদের নিকটবর্তী হতে উৎসাহিত করুন এবং তা করার বিজ্ঞতা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন। অন্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন না কারণ সেটি পরচর্চা করা হবে।
ব্যক্তিটি যদি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে প্রাচীনদের কাছে প্রকাশ না করে, তাহলে তখন আপনার তা করা উচিত। একজন অথবা দুইজন প্রাচীন তখন অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। অপরাধ করা হয়েছে কি না তা দেখতে প্রাচীনদের ‘জিজ্ঞাসা করা, অনুসন্ধান করা ও যত্নপূর্ব্বক প্রশ্ন করা’ প্রয়োজন। যদি তা করা হয়, তাহলে তারা শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলী অনুযায়ী বিষয়টি পরিচালনা করবেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:১২-১৪.
একটি অপরাধের অভিযোগ স্থাপন করার জন্য কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন। (যোহন ৮:১৭; ইব্রীয় ১০:২৮) যদি ব্যক্তিটি অভিযোগ অস্বীকার করে এবং আপনার প্রামাণিক সাক্ষ্যই একমাত্র সাক্ষ্য হয়, তাহলে বিষয়টি যিহোবার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। (১ তীমথিয় ৫:১৯, ২৪, ২৫) এটি এই জ্ঞানে করা হয় যে যিহোবার কাছে সমস্তকিছু “অনাবৃত” আর এই কারণে, একজন ব্যক্তি যদি অপরাধী হয় তাহলে পরিণামে তার পাপ তাকে “ধরিবে।”—ইব্রীয় ৪:১৩; গণনাপুস্তক ৩২:২৩.
কিন্তু ধরুন ব্যক্তিটি অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে আপনিই একমাত্র সাক্ষী। আপনাকে কি এখন অপবাদের পালটা অভিযোগে অভিযুক্ত করা যেতে পারে? না, যারা বিষয়টির সাথে জড়িত নয় তাদের সাথে যদি না আপনি পরচর্চা করে থাকেন। যে পরিস্থিতিগুলি মণ্ডলীকে প্রভাবিত করে সেই সম্বন্ধে যাদের দেখাশোনা করার এবং বিষয়গুলি সংশোধন করার কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব রয়েছে তাদের কাছে প্রকাশ করা অপবাদ দেওয়া নয়। বাস্তবিকপক্ষে, এটি যা সঠিক এবং নিষ্ঠাযুক্ত সর্বদা তা করার আমাদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ।—লূক ১:৭৪, ৭৫ পদের সাথে তুলনা করুন।
মণ্ডলীতে পবিত্রতা বজায় রাখা
অপরাধ প্রকাশ করার একটি কারণ হল যে এটি মণ্ডলীর পরিচ্ছন্নতা সংরক্ষণ করার জন্য কাজ করে। যিহোবা হলেন একজন পরিচ্ছন্ন ঈশ্বর, একজন পবিত্র ঈশ্বর। তিনি চান যারা তাকে উপাসনা করে তারা সকলে যেন আধ্যাত্মিক এবং নৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে। তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য পরামর্শ দেয়: “আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার অজ্ঞানতাকালের অভিলাষের অনুরূপ হইও না, কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, ‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র’।” (১ পিতর ১:১৪-১৬) যে ব্যক্তিরা অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরাধ অনুশীলন করে তারা সম্পূর্ণ মণ্ডলীর উপর মালিন্যতা এবং যিহোবার অনুমোদহীনতা নিয়ে আসতে পারে যদি না তাদের সংশোধন করার অথবা সরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।—যিহোশূয় ৭ অধ্যায়ের সাথে তুলনা করুন।
করিন্থের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি প্রেরিত পৌলের পত্রগুলি দেখায় যে কিভাবে অপরাধের প্রকাশ সেখানে ঈশ্বরের লোকেদের পরিচ্ছন্নকরণে কাজ করেছিল। তার প্রথম পত্রে পৌল লিখেছিলেন: “বাস্তবিক শুনা যাইতেছে যে তোমাদের মধ্যে ব্যভিচার আছে, আর এমন ব্যভিচার, যাহা পরজাতীয়দের মধ্যেও নাই, এমন কি, তোমাদের মধ্যে এক জন আপন পিতার ভার্য্যাকে রাখিয়াছে।”—১ করিন্থীয় ৫:১.
বাইবেল আমাদের বলে না যে কোথা থেকে প্রেরিত এই রিপোর্ট পেয়েছিলেন? এটি হতে পারে যে পৌল স্তিফান, ফর্তুনাত এবং আখায়িকের কাছ থেকে পরিস্থিতিটি সম্বন্ধে জেনেছিলেন যারা করিন্থ থেকে ইফিষে ভ্রমণ করেছিলেন যেখানে পৌল থাকতেন। এছাড়াও পৌল করিন্থের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কাছ থেকে একটি অনুসন্ধানমূলক পত্র পেয়েছিলেন। উৎস যাই হোক না কেন, একবার যখন নির্ভরযোগ্য সাক্ষীদের কাছ থেকে পৌল রিপোর্ট পেয়েছিলেন, তখন তিনি বিষয়টি সম্বন্ধে নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” মণ্ডলী থেকে ব্যক্তিটিকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।—১ করিন্থীয় ৫:১৩; ১৬:১৭, ১৮.
পৌলের নির্দেশনা কি উত্তম ফল এনেছিল? বাস্তবিকপক্ষে এটি এনেছিল! পরিশেষে, সেই অপরাধী তার বোধশক্তি ফিরে পেয়েছিল। করিন্থীয়দের প্রতি তার দ্বিতীয় পত্রে, পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন মণ্ডলী যেন অনুতপ্ত ব্যক্তিটিকে ‘ক্ষমা করে ও সান্ত্বনা দেয়।’ (২ করিন্থীয় ২:৬-৮) এইভাবে অপরাধের প্রকাশ সেই পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে পরিচালিত করেছিল যার ফলে মণ্ডলী পরিচ্ছন্নকরণ এবং একজন ব্যক্তি যে ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্কের ক্ষতি করেছিল তাকে ঈশ্বরের অনুগ্রহে পুনর্স্থাপিত করেছিল।
আমরা করিন্থের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি পৌলের প্রথম পত্রে আরও একটি উদাহরণ দেখতে পাই। এই ক্ষেত্রে পৌল সেই সাক্ষীর নাম বলেন যিনি বিষয়টি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, আমি ক্লোয়ীর পরিজনের দ্বারা তোমাদের বিষয়ে সংবাদ পাইয়াছি যে, তোমাদের মধ্যে বিবাদ আছে।” (১ করিন্থীয় ১:১১) পৌল জেনেছিলেন যে এই বিরোধ আর সেই সাথে মানুষের প্রতি অনুচিত সম্মান প্রদর্শন সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করেছিল যা মণ্ডলীর একতাকে ধ্বংস করার ভীতিস্বরূপ ছিল। অতএব, সেখানে তার সহবিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য গভীর চিন্তার কারণে পৌল শীঘ্রই কাজ করেছিলেন এবং মণ্ডলীর প্রতি সংশোধনমূলক পরামর্শ লিখেছিলেন।
আজকে, পৃথিবীর সর্বত্রই মণ্ডলীগুলিতে বৃহৎ সংখ্যক ভাই ও বোনেরা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের সম্মুখে অনুমোদিত মান বজায় রাখার মাধ্যমে মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা সংরক্ষণ করতে কঠোর পরিশ্রম করে। কেউ কেউ তা করতে কষ্টভোগ করে থাকে; অন্যান্যেরা এমনকি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। অপরাধ উপেক্ষা অথবা গোপন করা অবশ্যই এই প্রচেষ্টাগুলির প্রতি উপলব্ধিবোধের অভাব প্রদর্শন করবে।
বিপথগামী ব্যক্তির জন্য সাহায্য
যারা গুরুতর পাপে পতিত হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেন মণ্ডলীর প্রাচীনদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত থাকে? প্রায়ই এই কারণে যে তারা প্রাচীনদের কাছে যাওয়ার উপকারগুলি সম্বন্ধে সচেতন নয়। কেউ কেউ ভুলভাবে বিশ্বাস করে যে তারা যদি স্বীকার করে, তাহলে তাদের পাপ সম্পূর্ণ মণ্ডলীর কাছে প্রকাশিত হয়ে যাবে। অন্যান্যেরা তাদের আচরণের গুরুত্ব সম্বন্ধে নিজেদের ভুল পথে চালিত করে। এছাড়াও অন্যান্যেরা মনে করে যে তারা প্রাচীনদের সহযোগিতা ছাড়াই নিজেদের পুনর্বিন্যস্ত করতে পারে।
কিন্তু এইধরনের অপরাধীদের মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে প্রেমময় সাহায্যের প্রয়োজন। যাকোব লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ কি রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা প্রভুর নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।”—যাকোব ৫:১৪, ১৫.
বিপথগামী ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকতা পুনর্স্থাপনে সাহায্য করার জন্য কী এক বিস্ময়কর ব্যবস্থা! ঈশ্বরের বাক্য থেকে সান্ত্বনাদায়ক পরামর্শ প্রয়োগ এবং তাদের জন্য প্রার্থনার মাধ্যমে প্রাচীনেরা আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের তাদের ভুল পথগুলি থেকে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারেন। এইভাবে, অপরাধী বোধ করার চেয়ে বরঞ্চ অনুতপ্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সতেজ এবং স্বস্তি বোধ করে যখন তারা প্রেমময় প্রাচীনদের সম্মুখীন হয়। পশ্চিম আফ্রিকার একজন যুবক ব্যক্তি ব্যভিচার করেছিল এবং কয়েক মাস তার পাপ গোপন করেছিল। তার পাপ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর, সে প্রাচীনদের বলেছিল: “সেই মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক সম্বন্ধে কেউ প্রশ্ন করবে তা আমি কতই না কামনা করেছি! এই বিষয়টি প্রকাশ হওয়া বিরাট এক স্বস্তি।”—গীতসংহিতা ৩২:৩-৫ পদের সাথে তুলনা করুন।
নীতিগত প্রেমের এক কাজ
ঈশ্বরের বাপ্তাইজিত দাসেরা ‘মৃত্যু হইতে জীবনে উত্তীর্ণ হইয়াছে।’ (১ যোহন ৩:১৪) কিন্তু যদি তারা গুরুতর পাপ করে, তাহলে তারা মৃত্যুর পথে ফিরে গিয়েছে। যদি তাদের সাহায্য করা না হয়, তাহলে তারা হয়ত অনুতপ্ত হওয়ার এবং সত্য ঈশ্বরের উপাসনায় ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বর্জন করে অপরাধে আরও দৃঢ় হতে পারে।—ইব্রীয় ১০:২৬-২৯.
অপরাধ প্রকাশ করা অপরাধীর প্রতি আন্তরিক আগ্রহ প্রদর্শনের একটি কাজ। যাকোব লিখেছিলেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমাদের মধ্যে যদি কেহ সত্য হইতে ভ্রান্ত হয়, এবং কেহ তাহাকে ফিরাইয়া আনে, তবে জানিও, যে ব্যক্তি কোন পাপীকে তাহার পথ-ভ্রান্তি হইতে ফিরাইয়া আনে, সে তাহার প্রাণকে মৃত্যু হইতে রক্ষা করিবে, এবং পাপরাশি আচ্ছাদন করিবে।”—যাকোব ৫:১৯, ২০.
সুতরাং, যা মন্দ তা প্রকাশ করবেন কেন? কারণ এটি উত্তম বিষয়ের জন্য কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, অপরাধ প্রকাশ করা হল খ্রীষ্টীয় নীতিগত প্রেমের একটি কাজ যা ঈশ্বর, মণ্ডলী এবং অপরাধীদের প্রতি দেখান হয়। যখন মণ্ডলীর প্রতিটি সদস্য নিষ্ঠার সাথে ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলি তুলে ধরবেন, তখন যিহোবা সম্পূর্ণ মণ্ডলীকে প্রচুর পরিমাণে আশীর্বাদ করবেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আর তিনি [যিহোবা] তোমাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত স্থির রাখিবেন, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দিনে অনিন্দনীয় রাখিবেন।”—১ করিন্থীয় ১:৮.
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন বিপথগামী সাক্ষীকে প্রাচীনদের সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করা প্রেম প্রদর্শন করে
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা বিপথগামী ব্যক্তিদের ঈশ্বরের অনুগ্রহে পুনর্স্থাপিত করতে সাহায্য করেন