আমাদের কি সর্বদাই সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজন হবে?
সৈন্যবাহিনী মানব সম্পদের এক বিরাট অংশ অপব্যয় এবং মানুষের অনেকটা সুখ নষ্ট করেছে। তাই কিছু লোকেরা চিন্তা করে থাকেন, ‘মানবজাতি কি কখনও এমন ধরনের বিশ্ব নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে যা সৈন্যবাহিনীর বিলুপ্তিকে অনুমোদন করে?’ বর্তমানে গণধ্বংসের সেই অস্ত্রগুলি যথাসম্ভব জীবন ধ্বংস করেছে, ফলে প্রশ্নটি জরুরী হয়ে পড়ে। সৈন্যবাহিনী বিহীন এক জগতের আশা কতটা বাস্তব?
পূর্ববর্তী অনেক ঘটনা প্রমাণ করে যে অনুকূল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যখন আস্থা উৎপন্ন করে, তখন তা হয়ত কিছুটা অস্ত্রবল হ্রাসকরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাধারণ বন্ধুত্বের অর্থ, তাদের সীমান্তের ৫,০০০ কিলোমিটার এলাকা দেড় শতাব্দী ধরে সৈন্যবাহিনীর দ্বারা সুরক্ষিত নয়। নরওয়ে ও সুইডেনও একইধরনের ঐক্য অর্জন করেছে, যেমন অন্যান্য বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিদ্যমান। সমস্ত জাতির মধ্যে ঐক্যচুক্তি কি সৈন্যবাহিনী বিহীন একটি জগতে পৌঁছে দিতে পারবে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক থাকা সত্ত্বেও, ধারণাটি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
১৯১৮ সালে যখন শান্তি স্থাপিত হয়েছিল, তখন ভার্সেলির শান্তি চুক্তির একটি উদ্দেশ্য ছিল “সমস্ত জাতির যুদ্ধাস্ত্রগুলি সীমিতকরণের এক সর্বজনীন চুক্তিকে কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করা।” পরবর্তী বছরগুলিতে, শান্তিবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিছু শান্তিবাদীরা এই তত্ত্ব গঠন করেছিলেন যে যুদ্ধ হল নিকৃষ্টতম বিষয় যা একটি জাতির ভাগ্যে ঘটতে পারে এবং সেই কারণে তা পরাজয় ভোগ করার চেয়ে নিকৃষ্ট। শান্তিবাদের বিরোধীরা একমত ছিলেন না, তারা উল্লেখ করেছিলেন যে শতাব্দীগুলি ধরে যিহূদীরা বৃহৎ এলাকায় আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সামান্য সামরিক প্রতিরোধ স্থাপন করেছিল, ফলে তাদের নির্মূল করার জন্য নিষ্ঠুর আক্রমণগুলি চলতে থাকে। আফ্রিকাবাসীদের তাদেরকে প্রতিরোধ করার সামান্য সুযোগ ছিল যারা তাদের আমেরিকায় দাস হিসাবে নিয়ে এসেছিলেন এবং বহু শতাব্দী ধরে তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণও করা হয়েছিল।
কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায়, অনেক শান্তিবাদী এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে দেশগুলির সুরক্ষা প্রয়োজন। সুতরাং ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন অস্ত্রবল হ্রাস করার উপর কম কিন্তু আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। সদস্য দেশগুলি আশা করেছিল, প্রদানকৃত নিরাপত্তা জাতিগুলিকে অস্ত্রবল হ্রাস করার প্রত্যয় দান করবে।
আরেকটি সমস্যা ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। প্রায়ই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য একটি জাতির প্রচেষ্টাগুলির দ্বারা এর প্রতিবেশী দেশ অরক্ষিত বোধ করেছিল। এই বিদ্বেষপূর্ণ চক্র অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু আরও সম্প্রতি, প্রধান জাতিগুলির মধ্যে উন্নত সম্পর্ক অস্ত্রবল হ্রাস করার আশাকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু, তখন থেকে উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার সমস্যাগুলি অনেকের অস্ত্রবল হ্রাসকরণের আশাকে চূর্ণ করেছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে, টাইম পত্রিকা মন্তব্য করেছিল: “যদিও ঠাণ্ডা লড়াই শেষ, তবুও বিশ্ব এক অধিক বিপদজনক স্থানে পরিণত হয়েছে।”
এক বিশ্বব্যাপী “পুলিশ” এর আকাঙ্ক্ষা
অনেক মন্তব্যকারী এই সিদ্ধান্তে আসেন যে প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী সহ মানবজাতির কেবলমাত্র একটি বিশ্ব কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন। যেহেতু রাষ্ট্রসংঘ অথবা বিশ্বের মুখ্য সামরিক শক্তিগুলি এটি করতে সমর্থ নয়, তাই কেউ কেউ মনে করেন, ভবিষ্যতের জন্য সামান্যই আশা আছে। কিন্তু আপনি যদি বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এই জরুরী প্রয়োজনকে পূরণ করবেন কি না সেই বিষয়ে হয়ত চিন্তা করেছেন।
বাইবেল যাঁকে “প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বর” বলে, তিনি কি ন্যায়বিচার সম্পাদন করতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন? যদি করেন, তবে কোন্ সৈন্যবাহিনী? আজকের অনেক সৈন্যবাহিনী তাদের প্রতি ঈশ্বরের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করে কিন্তু তারা কি প্রকৃতই ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদন করছে? অথবা হস্তক্ষেপ করার এবং শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করার অন্য কোন উপায় কি ঈশ্বরের আছে?—২ করিন্থীয় ১৩:১১.
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এদন থেকে আদম হবাকে বের করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রথম বিদ্রোহীদের প্রতিহত করেছিলেন এবং তাদের ফিরে আসাকে প্রতিরোধ করতে নির্দিষ্ট স্থানে করূবগণকে স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি তাঁর সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধাচারী সমস্ত বিদ্রোহীদের চূর্ণ করার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫) এটি কি ঈশ্বরের এক সৈন্যবাহিনী ব্যবহার করাকে জড়িত করে?
বাইবেল সেই উপলক্ষগুলি সম্বন্ধে বলে যখন ঈশ্বর তাঁর ন্যায়বিচার সম্পাদন করার জন্য সৈন্যবাহিনী ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, কনান দেশের রাজ্যগুলি পশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক, শিশু বলি এবং ধর্ষকামমূলক লড়াই অভ্যাস করত। ঈশ্বর তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংসের নির্দেশ জারি এবং দণ্ডাজ্ঞা সম্পাদন করতে যিহোশূয়ের সৈন্যবাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১, ২) একইভাবে, ঈশ্বর কিভাবে তাঁর চূড়ান্ত বিচারের দিনে সমস্ত দুষ্টতাকে ধ্বংস করবেন তার দৃষ্টান্তস্বরূপ, রাজা দায়ূদের সৈন্যবাহিনী পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার সম্পাদন করেছিল।
সেই ঘটনাগুলি শিক্ষামূলক ছিল। যিহোবা প্রদর্শন করেছিলেন যে লোকেদের নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য তিনি সৈন্যবাহিনী ব্যবহার করতে পারেন। বাস্তবিকপক্ষে, যিহোবার এক অদ্বিতীয় সৈন্যবাহিনী আছে যা তাঁর শাসনের বিরুদ্ধাচারী সর্বজনীন বিদ্রোহীদের প্রতিহত করবে।
“বাহিনীগণের সদাপ্রভু”
বাইবেল ২৫০ বারেরও বেশি “বাহিনীগণের সদাপ্রভু” অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করে। অভিব্যক্তিটি মূলত বিরাট দূত বাহিনীর প্রধান নির্দেশক হিসাবে ঈশ্বরের পদমর্যাদাকে উল্লেখ করে। একটি উপলক্ষে ভাববাদী মীখা রাজা আহাব ও রাজা যিহোশাফটকে বলেছিলেন: “আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে তাঁহার নিকটে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান।” (১ রাজাবলি ২২:১৯) এখানে দূতেদের সৈন্যবাহিনী সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষিত করতে এই সৈন্যবাহিনীগুলি ব্যবহার করেছিলেন। দোথন নগর যখন অবরোধ করা হয়েছিল, তখন ইলীশায়ের পরিচারক আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাকে আশ্বস্ত করার জন্য, ঈশ্বর তাঁর আত্মিক প্রাণীদের সৈন্যবাহিনীর অলৌকিক দর্শন দিয়েছিলেন। “সদাপ্রভু সেই যুবকটির চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, . . . অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্ব্বত পরিপূর্ণ।”—২ রাজাবলি ৬:১৫-১৭.
এইধরনের ঘটনাগুলির অর্থ কি এই যে ঈশ্বর আজকের সৈন্যবাহিনীগুলিকে সমর্থন করেন? খ্রীষ্টীয় জগতের কিছু সৈন্যবাহিনী হয়ত নিজেদের ঈশ্বরের সৈন্যবাহিনী হিসাবে দাবি করতে পারে। অনেকে পাদ্রিবর্গকে তাদের আশীর্বাদ করতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু খ্রীষ্টীয় জগতের সৈন্যবাহিনীগুলি প্রায়ই পরস্পর এবং সহবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে থাকে। এই শতাব্দীর দুটি বিশ্বযুদ্ধ সেই সৈন্যবাহিনীদের মধ্যে শুরু হয় যারা নিজেদের খ্রীষ্টান হিসাবে দাবি করেছিল। এটি ঈশ্বরের কাজ হতে পারে না। (১ যোহন ৪:২০) যদিও এইধরনের সামরিক শক্তিগুলি হয়ত দাবি করতে পারে যে তারা শান্তির জন্য লড়াই করে কিন্তু জগতের অশান্তি প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টায় এইধরনের সৈন্যবাহিনী সংগঠিত করতে যীশু কি তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন?
শান্তি গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল যখন এক সশস্ত্র জনতা একটি বাগানে যীশুর উপর হস্তক্ষেপ করেছিল যেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের সাথে প্রার্থনা করছিলেন। শিষ্যদের একজন খড়্গ দিয়ে জনতার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে আঘাত করেছিলেন। যীশু সেই উপলক্ষটিকে এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমার খড়্গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়্গ ধারণ করে, তাহারা খড়্গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে। আর তুমি কি মনে কর যে আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না?” যীশুর নিয়ন্ত্রণাধীনে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী ছিল কিন্তু একজন সৈনিক হিসাবে পিতর এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না কিংবা অন্য কোন মানুষও নন। বরঞ্চ, পিতর এবং যীশুর বাকি অনুগামীদের “মনুষ্যধারী” হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল। (মথি ৪:১৯; ২৬:৪৭-৫৩) কয়েক ঘন্টা পরে, যীশু পীলাতকে পরিস্থিতিটি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত দায়ূদের রাজ্যের বৈসাদৃশ্যে, ঈশ্বর যীশুকে যে রাজ্য দিয়েছেন তা স্বর্গে অবস্থিত এবং সেটি পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসবে।
ঈশ্বরের সৈন্যবাহিনীগণ যুদ্ধক্ষেত্রে যান
ঈশ্বরের সৈন্যবাহিনীগণ শীঘ্রই কার্যরত হবেন। সম্মুখে যে যুদ্ধ রয়েছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে, প্রকাশিত বাক্য যীশুকে “ঈশ্বরের বাক্য” বলে অভিহিত করে। আমরা পড়ি: “স্বর্গস্থ সৈন্যগণ তাঁহার অনুগমন করে, তাহারা শুক্লবর্ণ অশ্বে আরোহী, এবং শ্বেত শুচি মসীনা-বস্ত্র পরিহিত। আর তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন।” বাইবেল বলে, এই যুদ্ধের ফলে “পৃথিবীর রাজগণ ও তাহাদের সৈন্যগণ” ধ্বংস হবে। অন্যান্যেরা যারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়, তাদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীটি আরও বলে: “অবশিষ্ট সকলে সেই অশ্বারোহী ব্যক্তির মুখ হইতে নির্গত তরবারি দ্বারা হত হইল।” এমনকি শয়তান দিয়াবলকে নিষ্ক্রিয় করা হবে। এটি প্রকৃতই সৈন্যবাহিনী বিহীন এক শান্তির জগৎকে অনুমোদন করবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১; ২০:১-৩.
যুদ্ধবিহীন এক জগৎ সম্বন্ধে কল্পনা করুন
আপনি কি এমন একটি জগৎকে মনশ্চক্ষুতে দেখতে পারেন যা এতটাই নিরাপদ যে সেখানে সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজন নেই? বাইবেলের একটি গীত বলে: “চল সদাপ্রভুর কার্য্যকলাপ সন্দর্শন কর, যিনি পৃথিবীতে ধ্বংস সাধন করিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯.
কী এক স্বস্তিই না এটি হবে! সৈন্যবাহিনী ও তাদের সরঞ্জামের জন্য প্রদেয় ক্ষতিকর করের বোঝা থেকে অবশেষে মানব সমাজের মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাগুলি সম্বন্ধে কল্পনা করুন! লোকেরা তাদের শক্তি প্রত্যেকের জীবনযাত্রা উন্নত, পৃথিবী পরিষ্কার এবং এটিকে পুনরায় আবাদ করার জন্য ব্যবহার করতে সমর্থ হবেন। সেখানে বিভিন্ন জিনিস উদ্ভাবন করার নতুন সুযোগগুলি থাকবে যা মানবজাতির জন্য প্রকৃতই উপকারী হবে।
এই প্রতিজ্ঞাটি বিশ্বব্যাপী পরিপূর্ণ হবে: “আর শোনা যাইবে না—তোমার দেশে উপদ্রবের কথা, তোমার সীমার মধ্যে ধ্বংস ও বিনাশের কথা।” (যিশাইয় ৬০:১৮) আর কখনও লক্ষ লক্ষ হতাশাগ্রস্ত শরণার্থীরা যুদ্ধাঞ্চলগুলি থেকে স্রোতের ন্যায় ভেসে আসবে না, দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় শিবিরগুলিতে বাস করার জন্য তাদের গৃহ ও সম্পত্তি ত্যাগ করতে বাধ্য করানো হবে না। আর কখনও লোকেরা তাদের নিহত প্রিয়জনদের জন্য বিলাপ করবে না অথবা জাতিগুলির সংঘর্ষের কারণে বিকলাঙ্গ হবে না। যিহোবার স্বর্গীয় রাজা স্থায়ী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবেন। “তাঁহার সময়ে ধার্ম্মিক লোক প্রফুল্ল হইবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হইবে। তিনি চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হইতে তাহাদের প্রাণ মুক্ত করিবেন।”—গীতসংহিতা ৭২:৭, ১৪.
লোকেরা যারা ঘৃণা করতে নয় কিন্তু ঈশ্বরের প্রেমের পথগুলি অনুকরণ করতে শিখেছেন, তাদের মধ্যে জীবন এমনকি আরও আনন্দদায়ক হবে। ঈশ্বরের বাক্য ভাববাণী করে: “সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” সেই লোকেদের মধ্যে বাস করা কেমন হবে যারা যিহোবাকে জানেন ও ভালবাসেন? একই পুস্তক ভবিষ্যদ্বাণী করে: “শান্তিই ধার্ম্মিকতার কার্য্য হইবে, এবং চিরকালের জন্য সুস্থিরতা ও নিঃশঙ্কতা ধার্ম্মিকতার ফল হইবে। আর আমার প্রজাগণ শান্তির আশ্রমে, নিঃশঙ্কতার আবাসে ও নিশ্চিন্ততার বিশ্রামস্থানে বাস করিবে।”—যিশাইয় ১১:৯; ৩২:১৭, ১৮.
যে লোকেদের বিশ্বাস বাইবেলের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তারা উপলব্ধি করেন যে ঈশ্বরের সৈন্যবাহিনী শান্তির সমস্ত শত্রুদের কাছ থেকে পৃথিবীকে পরিষ্কার করার জন্য প্রস্তুত আছেন। এই জ্ঞান তাদের “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে,” বলে বাইবেল যা বলে সেই অনুযায়ী কাজ করতে প্রত্যয় দান করে। তা হল: “তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।”—যিশাইয় ২:২-৪.
বিভিন্ন জাতি থেকে যারা যিহোবার সাক্ষী হয়েছেন তারা ইতিমধ্যে ‘যুদ্ধ শেখা’ থেকে বিরত হয়েছেন। তারা ঈশ্বরের স্বর্গীয় সৈন্যবাহিনীর সুরক্ষার প্রতি তাদের প্রত্যয় গড়ে তুলেছেন। তাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করার দ্বারা, আপনিও একই প্রত্যয় গড়ে তুলতে পারেন।
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
U.S. National Archives photo