অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৪
যেভাবে একটা নতুন কার্যভারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়
“ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.
গান সংখ্যা ৬০ তিনি তোমায় সবল করবেন
সারাংশa
১-৩. কয়েকটা কারণ কী, যেগুলোর জন্য হয়তো পূর্ণসময়ের দাসদের কার্যভার পরিবর্তিত হতে পারে?
ভাই রবার্ট ও বোন মেরি জো স্মরণ করে বলেন: “মিশনারি কার্যভারে ২১ বছর কাটানোর পর আমাদের দু-জনেরই বাবা-মা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন। আমরা তাদের যত্ন নিতে পেরে আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের জন্য সেই প্রিয় কার্যভারের এলাকা ছেড়ে যাওয়া দুঃখের এক বিষয় ছিল।”
২ ভাই উইলিয়াম ও বোন টেরি ব্যাখ্যা করে বলেন: “আমরা যখন জানতে পেরেছিলাম, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমরা আর আমাদের কার্যভারের এলাকায় ফিরে যেতে পারব না, তখন আমরা কেঁদে ফেলেছিলাম। বিদেশে গিয়ে যিহোবার সেবা করার বিষয়ে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল।”
৩ ভাই আলিকসিয়ে বলেন: “আমরা জানতাম, আমরা যে-শাখা অফিসে সেবা করি, তাড়নাকারীরা সেটাকে বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু তারপরও, সেটা যখন বাস্তবে ঘটেছিল আর আমাদের বেথেল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল, তখন আমরা দুঃখ পেয়েছিলাম।”
৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করব?
৪ এই ভাই-বোনদের পাশাপাশি বেথেল পরিবারের হাজার হাজার সদস্য ও সেইসঙ্গে অন্যেরা নতুন নতুন কার্যভার লাভ করেছে।b এই বিশ্বস্ত ভাই-বোনদের জন্য তাদের প্রিয় কার্যভার ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টা প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ হতে পারে। কী তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? কীভাবে আপনি তাদের সাহায্য করতে পারেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের সবাইকে জীবনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।
যেভাবে কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়
৫. কার্যভার পরিবর্তিত হলে, তা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে?
৫ আমরা ক্ষেত্রে অথবা বেথেলে, যেখানেই সেবা করি না কেন, আমরা সেখানকার লোকেদের আর এমনকী সেই এলাকাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলতে পারি। কোনো কারণে আমাদের যদি সেখান থেকে চলে যেতে হয়, তা হলে আমরা প্রচণ্ড দুঃখ পেতে পারি। সেই ভাই-বোনেরা পাশে না থাকায় আমরা হয়তো শূন্যতা অনুভব করি এবং তাদের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করি, বিশেষভাবে আমাদের যদি তাড়নার কারণে সেই এলাকা ছেড়ে আসতে হয়। (মথি ১০:২৩; ২ করি. ১১:২৮, ২৯) এ ছাড়া, অন্য কোনো এলাকায় যাওয়া আমাদের জন্য অনেক কঠিন হতে পারে কারণ আমাদের হয়তো নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। আমরা এমনকী বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরও এইরকম অনুভব করতে পারি। ভাই রবার্ট ও বোন মেরি জো বলেন: “আমরা আমাদের সংস্কৃতি আর এমনকী নিজেদের মাতৃভাষায় প্রচার করতে ভুলে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা এক দীর্ঘসময় ধরে অন্য এক এলাকায় প্রচার করেছিলাম, তাই আমরা নিজেদের দেশেই বিদেশিদের মতো অনুভব করেছিলাম।” কার্যভার পরিবর্তিত হওয়ার পর কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো হঠাৎই আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। তারা হয়তো অনিশ্চয়তা, অসুরক্ষিত ও নিরুৎসাহিত বোধ করতে পারে। কী তাদের সাহায্য করতে পারে?
৬. কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটে থাকতে পারি?
৬ যিহোবার নিকটে থাকুন। (যাকোব ৪:৮) কীভাবে আমরা তাঁর নিকটে থাকতে পারি? “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” হিসেবে তাঁর উপর আস্থা রাখার মাধ্যমে। (গীত. ৬৫:২) গীতসংহিতা ৬২:৮ পদ বলে: “তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল।” যিহোবা “আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম” করতে পারেন। (ইফি. ৩:২০) যিহোবা কেবলমাত্র সেই বিষয়গুলোই আমাদের প্রদান করেন না, যেগুলো প্রার্থনায় আমরা চাই। কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি হয়তো আমাদের সমস্যাগুলো এমনভাবে সমাধান করেন, যেটার বিষয়ে আমরা হয়তো কখনো কল্পনাও করিনি।
৭. (ক) কী আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে সাহায্য করবে? (খ) ইব্রীয় ৬:১০-১২ পদ অনুযায়ী বিশ্বস্তভাবে ক্রমাগত যিহোবার সেবা করার ফলে কী হবে?
৭ যিহোবার নিকটে থাকার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পড়ুন এবং যা পড়েন, তা নিয়ে ধ্যান করুন। একজন প্রাক্তন মিশনারি ভাই বলেন: “কার্যভার পরিবর্তিত হওয়ার পরও আগের মতোই নিয়মিতভাবে পারিবারিক উপাসনা করুন এবং সভার জন্য প্রস্তুতি নিন।” এ ছাড়া, আপনার নতুন মণ্ডলীর এলাকায় সুসমাচার প্রচার করার জন্য যথাসাধ্য করুন। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের স্মরণে রাখেন, যারা বিশ্বস্তভাবে ক্রমাগত তাঁর সেবা করে আর তা এমনকী তারা আগের মতো যিহোবার সেবা করতে না পারলেও।—পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০-১২.
৮. প্রথম যোহন ২:১৫-১৭ পদে পাওয়া কথাগুলো কীভাবে আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৮ আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখুন। শয়তানের জগতের কাছ থেকে আসা উদ্বিগ্নতার দ্বারা আপনার আধ্যাত্মিক কার্যকলাপকে ‘চাপিয়া রাখিতে’ দেবেন না। (মথি ১৩:২২) জগতের লোকেরা অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবরা কিংবা পরিবারের সদস্যরা যখন শয়তানের বিধিব্যবস্থায় আর্থিক সুরক্ষা লাভ করার জন্য চাপ দেয়, তখন তা প্রতিরোধ করুন। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) যিহোবার উপর আস্থা রাখুন, যিনি আমাদের “সময়ের উপযোগী” বা উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক, আবেগগত ও বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা মেটানোর বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন।—ইব্রীয় ৪:১৬; ১৩:৫, ৬.
৯. হিতোপদেশ ২২:৩, ৭ পদ অনুযায়ী কেন অযথা ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ এবং কী আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৯ অযথা ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলুন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৩, ৭.) অন্য জায়গায় গিয়ে বাস করার জন্য অনেক খরচ হতে পারে এবং আপনি হয়তো খুব সহজেই ঋণ নিয়ে ফেলতে পারেন। যে-বিষয়গুলো আপনার আসলে প্রয়োজন নেই, সেগুলো কেনার জন্য ঋণ নেবেন না। আবেগগতভাবে চাপের মধ্যে থাকার সময়ে, হতে পারে পরিবারের কোনো অসুস্থ ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার সময়ে, আমরা হয়তো এটা নির্ধারণ করাকে কঠিন বলে মনে করতে পারি যে, কতটা পরিমাণ ঋণ নেব। মনে রাখবেন, এইরকম পরিস্থিতিতে “প্রার্থনা ও বিনতি” আপনাকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। আপনার প্রার্থনার উত্তরে যিহোবা আপনাকে সেই শান্তি প্রদান করতে পারেন, যেটা “[আপনার] হৃদয় ও মন . . . রক্ষা” করবে। আর এটা আপনাকে শান্তভাবে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।—ফিলি. ৪:৬, ৭; ১ পিতর ৫:৭.
১০. কীভাবে আমরা নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারি?
১০ উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখুন। আপনার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ভালো বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিন, বিশেষভাবে যারা হয়তো একইরকম পরিস্থিতিতে ছিল। আপনি যদি এমনটা করেন, তা হলে এটা আপনাকে আবেগগতভাবে স্বস্তি প্রদান করবে। (উপ. ৪:৯, ১০) আপনার প্রাক্তন কার্যভারের জায়গায় যাদের সঙ্গে আপনি বন্ধুত্ব করেছেন, তারা সবসময়ই আপনার বন্ধু থাকবে। তবে, এখন আপনার নতুন কার্যভারের জায়গায় আপনাকে নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তা হলে আপনাকে বন্ধুত্বপরায়ণ হতে হবে। কীভাবে আপনি নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন? যিহোবার সেবায় আপনার যে-ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছে, সেগুলো অন্যদের জানান, যাতে তারা আপনার আনন্দ অনুভব করতে পারে। মণ্ডলীর কোনো কোনো সদস্য হয়তো এটা বোঝার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে যে, কেন আপনি পূর্ণসময়ের সেবাকে ভালোবাসেন কিন্তু অন্যেরা হয়তো আরও বেশি জানার বিষয়ে আগ্রহী হতে পারে এবং আপনার ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। তবে, আপনার নিজের বিষয়ে অথবা যিহোবার সেবায় আপনি যা-কিছু সম্পাদন করেছেন, সেই বিষয়ে অতিরিক্ত কথা বলবেন না। এ ছাড়া, আপনার কোনো নেতিবাচক অনুভূতির বিষয়ে কথা বলবেন না।
১১. কীভাবে আপনারা আপনাদের বিয়েতে আনন্দ বজায় রাখতে পারেন?
১১ আপনার বিবাহসাথির স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আপনাদের যদি কার্যভার ছাড়তে হয়, তা হলে এর জন্য তাকে দোষ দেবেন না। অন্যদিকে, আপনি যদি নিজে স্বাস্থ্যগত সমস্যা ভোগ করেন, তা হলে এইরকম ভেবে নিজেকে দোষী বলে মনে করবেন না, আপনি আপনার সাথিকে হতাশ করেছেন। মনে রাখবেন, আপনারা “একাঙ্গ” এবং আপনারা যিহোবার সামনে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনারা একে অপরের যত্ন নেবেন। (মথি ১৯:৫, ৬) অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে আপনারা যদি কার্যভার ত্যাগ করে থাকেন, তা হলে খেয়াল রাখবেন যেন আপনাদের সন্তান এটা বুঝতে পারে যে, আপনাদের কার্যভারের চেয়ে সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যে তাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক “পুরস্কার” হিসেবে দেখেন, সেই বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করুন। (গীত. ১২৭:৩-৫) একইসঙ্গে আপনাদের প্রাক্তন কার্যভারে আপনারা যে-চমৎকার অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করেছেন, সেগুলোর বিষয়ে তাকে জানান। এমনটা করা আপনাদের সন্তানকে আপনাদের মতোই যিহোবার আনন্দপূর্ণ সেবায় নিজের জীবন ব্যবহার করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে।
যেভাবে অন্যেরা সাহায্য করতে পারে
১২. (ক) পূর্ণসময়ের দাসেরা যাতে তাদের কার্যভারের জায়গায় থেকে পূর্ণসময়ের সেবা চালিয়ে যেতে পারে, সেইজন্য আমরা কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি? (খ) কীভাবে আমরা তাদের নতুন কার্যভারের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারি?
১২ প্রশংসনীয় বিষয়টা হল অনেক মণ্ডলী আর সেইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ভাই-বোনেরা পূর্ণসময়ের দাসদের সাহায্য করে, যাতে তারা তাদের কার্যভারের জায়গায় থেকে পূর্ণসময়ের সেবা চালিয়ে যেতে পারে। তারা পূর্ণসময়ের দাসদের উৎসাহ দেওয়ার, অর্থ অথবা বস্তুগত বিষয় দিয়ে সাহায্য করার কিংবা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা পরিবারের সদস্যদের যত্ন নিতে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের সমর্থন জুগিয়ে থাকে। (গালা. ৬:২) পূর্ণসময়ের দাসদের যদি আপনাদের মণ্ডলীতে কার্যভার দেওয়া হয়, তা হলে এইরকম চিন্তা করবেন না, তারা কোনো ভুল করেছে অথবা কোনো খারাপ কাজ করেছে।c এর পরিবর্তে, তাদের সাহায্য করুন, যাতে তারা এই পরিবর্তনের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান এবং তারা যে-ভালো কাজগুলো করেছে, সেগুলোর জন্য তাদের প্রশংসা করুন আর তা এমনকী বর্তমানে তারা স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আগের মতো না করতে পারলেও। তাদের জানার চেষ্টা করুন। তাদের সমস্ত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।
১৩. যারা নতুন কার্যভার লাভ করে, তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৩ যারা নতুন কার্যভার লাভ করে, তাদের হয়তো শুরুর দিকে থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়ার, যাতায়াতের, কাজের ও অন্যান্য মৌলিক বিষয়ের জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া, তাদের হয়তো দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য বিষয়েও যেমন বিমা করার বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু, এগুলো ছাড়াও তাদের সবচেয়ে বেশি যে-বিষয়টার প্রয়োজন হয়, সেটা হল আপনি যেন তাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। তাদের অথবা তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের হয়তো স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। তারা হয়তো কোনো প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে শোকের মধ্যে রয়েছে।d আর তারা এমনকী না বললেও হয়তো তাদের প্রাক্তন কার্যভারের বন্ধুদের পাশে না পাওয়ার কারণে শূন্যতা অনুভব করে। তাদের মনে হয়তো বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর অনুভূতি আসতে পারে আর সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সময় লাগতে পারে।
১৪. কীভাবে স্থানীয় প্রকাশকরা একজন বোনকে তার নতুন কার্যভারের এলাকায় মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে?
১৪ আপনি যদি তাদের সঙ্গে প্রচার করেন এবং নিজের উত্তম উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দেন, তা হলে তাদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারবেন। বিদেশে অনেক বছর ধরে সেবা করেছেন, এমন একজন বোন বলেন: “আমার প্রাক্তন কার্যভারের এলাকায় আমি প্রতিদিন বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতাম। কিন্তু, আমার নতুন কার্যভারের এলাকায় বাইবেল খুলে একটা শাস্ত্রপদ পড়া অথবা একটা ভিডিও দেখানোর সুযোগ পাওয়াও অনেক কঠিন। তবে, স্থানীয় প্রকাশকরা পুনর্সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার অথবা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার সময়ে তাদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে যায়। সেই উদ্যোগী ও সাহসী ভাই-বোনদের উন্নতিশীল বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে দেখা আমাকে এই এলাকা সম্বন্ধে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। আমি নতুন এলাকায় কথোপকথন শুরু করতে শিখেছি। এই সমস্ত কিছু আমাকে পুনরায় আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।”
আপনার সর্বোত্তমটা করে চলুন!
১৫. কীভাবে আপনি আপনার নতুন কার্যভারে সফল হতে পারেন?
১৫ আপনি আপনার নতুন কার্যভারে সফল হতে পারেন। এইরকম ভাববেন না যে, আপনি আপনার প্রাক্তন কার্যভারে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা এখন আপনার আর কোনো প্রয়োজন নেই। বর্তমানে, যিহোবা আপনাকে যে-বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন এবং প্রচার করে চলুন। প্রথম শতাব্দীর বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের অনুকরণ করুন। তারা যেখানে ছিল, সেখানে ‘চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিয়াছিল।’ (প্রেরিত ৮:১, ৪) আপনি যদি প্রচার করে চলেন, তা হলে আপনি হয়তো উত্তম ফল লাভ করবেন। উদাহরণ স্বরূপ, এক দল অগ্রগামীকে যখন একটা দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা পাশের দেশে চলে গিয়েছিল, যে-দেশেও তাদের ভাষায় সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দ্রুত উন্নতি হয়েছিল এবং সেই ভাষায় অনেক দল গড়ে উঠেছিল।
১৬. কীভাবে আপনি আপনার নতুন কার্যভারে আনন্দ খুঁজে পেতে পারেন?
১৬ বাইবেল বলে: “সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই তোমাদের শক্তি।” (নহি. ৮:১০) আমরা যদিও আমাদের কার্যভারকে ভালোবাসি, তারপরও সেটার কারণে নয় বরং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কারণে আমাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হওয়া উচিত। তাই, ক্রমাগত যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করুন অর্থাৎ প্রজ্ঞা, নির্দেশনা ও সমর্থন লাভ করার জন্য তাঁর উপর আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন, আপনি আপনার প্রাক্তন কার্যভারকে ভালোবাসতেন কারণ আপনি সেখানকার লোকেদের সাহায্য করার জন্য আপনার সর্বোত্তমটা করেছিলেন। আপনার নতুন কার্যভারেও আপনার সর্বোত্তমটা করুন এবং দেখুন, যিহোবা কীভাবে আপনাকে এই কার্যভারকেও ভালোবাসতে সাহায্য করেন।—উপ. ৭:১০.
১৭. আমাদের বর্তমান কার্যভার সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১৭ আমরা যেন এটা স্মরণে রাখি, যিহোবার প্রতি আমাদের সেবা অনন্তকালস্থায়ী কিন্তু আমাদের বর্তমান কার্যভার ক্ষণকালস্থায়ী। নতুন জগতে আমাদের সবারই কার্যভার হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ভাই আলিকসিয়ে, যার বিষয়ে এই প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছিল, বলেন, তার কার্যভারের পরিবর্তন তাকে ভবিষ্যতের পরিবর্তনগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করছে। ভাই বলেন: “আমি এটা জানতাম, যিহোবা একজন বাস্তব ব্যক্তি এবং নতুন জগৎ আসবেই কিন্তু আগে আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতাম না। এখন আমি যিহোবার আরও বেশি নিকটবর্তী বোধ করি এবং এটা অনুভব করি, নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই আসবে।” (প্রেরিত ২:২৫) আমাদের কার্যভার যা-ই হোক না কেন, আমরা যেন ক্রমাগত যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করি। তিনি আমাদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না। এর পরিবর্তে, আমরা তাঁর সেবায় যা-ই করি না কেন এবং যেখানেই তাঁর সেবা করি না কেন, তিনি আমাদের আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন।—যিশা. ৪১:১৩.
গান সংখ্যা ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা
a পূর্ণসময়ের সেবায় রত ভাই-বোনদের হয়তো কখনো কখনো তাদের কার্যভার ছাড়তে হয় অথবা তারা হয়তো একটা নতুন কার্যভার লাভ করে। তারা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়, সেগুলো নিয়ে আর সেইসঙ্গে কী তাদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে, তা নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া, তাদের উৎসাহিত করার এবং সমর্থন জোগানোর জন্য অন্যেরা কী করতে পারে আর সেইসঙ্গে যে-নীতিগুলো আমাদের সবাইকে পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে, সেগুলো নিয়ে এই প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।
b একইভাবে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই তাদের কার্যভার অল্পবয়সি ভাইদের দিয়ে দিয়েছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “বয়স্ক খ্রিস্টানরা—যিহোবা আপনাদের আনুগত্যকে মূল্যবান বলে মনে করেন” এবং ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পরিস্থিতির পরিবর্তন সত্ত্বেও মনের শান্তি বজায় রাখুন” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো দেখুন।
c তারা যে-মণ্ডলীতে সেবা করে আসছে, সেখানকার প্রাচীনদের উচিত, যত দ্রুত সম্ভব তাদের সম্বন্ধে পরিচিতি পত্র লেখা, যাতে তারা অবিলম্বে তাদের নতুন মণ্ডলীতে অগ্রগামী হিসেবে, প্রাচীন হিসেবে অথবা পরিচারক দাস হিসেবে তাদের সেবা চালিয়ে যেতে পারে।
d ২০১৮ সালের নং ৩ সংখ্যার সজাগ হোন! পত্রিকায় “শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সাহায্য” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো দেখুন।
e ছবি সম্বন্ধে: বিদেশে এক দম্পতিকে তাদের মিশনারি কার্যভার ত্যাগ করে ফিরে যেতে হচ্ছে আর তারা চোখের জলে তাদের মণ্ডলীকে বিদায় জানাচ্ছেন।
f ছবি সম্বন্ধে: সেই দম্পতি নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার পর যে-সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যিহোবার কাছে বার বার প্রার্থনা করছেন।
g ছবি সম্বন্ধে: যিহোবার সাহায্যে সেই দম্পতি আবারও পূর্ণসময়ের সেবা করতে শুরু করেছেন। মিশনারি হিসেবে সেবা করার সময়ে তারা যে-ভাষা শিখেছেন, তা ব্যবহার করে তাদের নতুন মণ্ডলীর এলাকায় থাকা অভিবাসীদের কাছে সুসমাচার জানাচ্ছেন।