বাইবেলের অভিব্যক্তিগুলোর শব্দকোষ
অ আ ই ঈ উ এ ক খ গ ঘ চ ছ জ ট ড ত দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ স হ
অ
অঙ্গীকার।
এটা হল কোনো কাজ করার, কোনো কিছু উৎসর্গ করার অথবা দান হিসেবে দেওয়ার, কোনো সেবা শুরু করার অথবা আইন অনুযায়ী ভুল নয় এমন কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ঈশ্বরের কাছে করা এক প্রতিজ্ঞা। এটা একটা শপথকে আরও জোরদার করত।—মথি ৫:৩৩.
অছিন্নত্বক।—
ত্বকচ্ছেদ দেখুন।
অতল গহ্বর।
গ্রিক শব্দ অ্যাবিসস্ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “অত্যন্ত গভীর” অথবা “অগাধ, সীমাহীন।” খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এই শব্দটা আটকে রাখার স্থানকে বা আটক অবস্থাকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এই শব্দের অন্তর্ভুক্ত কবর, তবে এটা কেবল কবরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।—লূক ৮:৩১; রোমীয় ১০:৭; প্রকা ২০:৩.
অধ্যক্ষ।
এমন একজন পুরুষ, যার প্রধান দায়িত্ব হল মণ্ডলীর দেখাশোনা করা এবং মণ্ডলীকে পালন করা। এর গ্রিক শব্দ ইপিসকোপস্-এর মূল ধারণা হল কাউকে রক্ষা করার জন্য তার দেখাশোনা করা। “অধ্যক্ষ” ও “প্রাচীন” শব্দগুলো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একই পদকে নির্দেশ করে। “প্রাচীন” শব্দটা নির্দেশ করে, সেই ব্যক্তিকে এইজন্য নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তার মধ্যে এমন গুণাবলি রয়েছে, যা দেখায়, তিনি পরিপক্ব। আর “অধ্যক্ষ” শব্দটা তার নিযুক্তিকরণের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বের উপর জোর দেয়।—প্রেরিত ২০:২৮; ১তীম ৩:২-৭; ১পিতর ৫:২.
অধ্যাপক।
ইব্রীয় শাস্ত্র-এর একজন প্রতিলিপিকারী। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন এই শব্দ দ্বারা এমন এক শ্রেণীর পুরুষদের বোঝানো হতো, যারা ব্যবস্থায় অভিজ্ঞ ছিলেন। তারা যিশুর বিরোধিতা করত।—ইষ্রা ৭:৬; মার্ক ১২:৩৮, ৩৯; ১৪:১.
অনুতাপ।
বাইবেলে ব্যবহৃত এই শব্দের অর্থ মন পরিবর্তন করা ও সেইসঙ্গে পূর্বের জীবনধারার জন্য, অন্যায় কাজের জন্য অথবা কিছু করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হৃদয় থেকে অনুশোচনা করা। প্রকৃত অনুতাপ কাজের মাধ্যমে দেখানো হয়, যখন একজন ব্যক্তি মন্দ পথ পরিবর্তন করে সঠিক পথে চলতে শুরু করেন।—মথি ৩:৮; প্রেরিত ৩:১৯; ২পিতর ৩:৯.
অভিষিক্ত করা।
এর ইব্রীয় শব্দের অর্থ মূলত “তরল পদার্থ লেপন করা।” কোনো বিশেষ সেবার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুর উপর তেল ঢেলে দেওয়া হতো। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এই শব্দটা সেই ব্যক্তিদের উপর পবিত্র শক্তি বর্ষণ করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের স্বর্গীয় আশা প্রদান করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।—যাত্রা ২৮:৪১; ১শমূ ১৬:১৩; লূক ৪:১৮; প্রেরিত ১০:৩৮; ২করি ১:২১.
অরামীয়।
একটা ভাষা, যা বলতে গেলে প্রায় ইব্রীয় ভাষার মতোই এবং এই ভাষার বর্ণমালা ইব্রীয় ভাষার মতো একই। প্রথমে কেবল অরামীয়েরা এই ভাষায় কথা বলত কিন্তু পরবর্তী সময়ে অশূরীয় ও বাবিলীয় সাম্রাজ্যে ব্যাবসাবাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, এটা ছিল পারসিক সাম্রাজ্যে সরকারি কাজকর্মে ব্যবহৃত ভাষা। (ইষ্রা ৪:৭) ইষ্রা, যিরমিয় ও দানিয়েল বইয়ের কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ কিছু অরামীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।—ইষ্রা ৪:৮–৬:১৮; ৭:১২-২৬; যির ১০:১১; দানি ২:৪খ–৭:২৮; মার্ক ১৪:৩৬; প্রেরিত ৯:৩৬.
অশুচি।
এটা শারীরিকভাবে নোংরা অবস্থাকে অথবা নৈতিক আইনগুলো ভাঙাকে বোঝাতে পারে। কিন্তু, বাইবেলে এই শব্দ প্রায়ই এমন কিছুকে নির্দেশ করে, যা মোশির ব্যবস্থা অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয় অথবা শুচি নয়। (লেবীয় ৫:২; ১৩:৪৫; মথি ১০:১; প্রেরিত ১০:১৪; ইফি ৫:৫)—শুচি দেখুন।
অ্যাসেলগেইয়া।—
নির্লজ্জভাবে করা পাপ কাজ দেখুন।
আ
আখায়া।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ দক্ষিণ গ্রিসের রোমীয় প্রদেশ, যেটার রাজধানী করিন্থ। আখায়ার অন্তর্ভুক্ত হল সম্পূর্ণ পেলোপনিস এবং মধ্যগ্রিসের কেন্দ্রীয় অংশ।—প্রেরিত ১৮:১২.
আগুনের হ্রদ।
এক রূপক স্থান, যেখানে ‘আগুন ও গন্ধক’ জ্বলতে থাকে। এ ছাড়া, এটাকে ‘দ্বিতীয় মৃত্যু’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অনুতাপহীন পাপীদের, দিয়াবলকে এবং মৃত্যু ও কবরকে (অথবা হেডিস) এই হ্রদে ফেলে দেওয়া হবে। যেহেতু একজন অদৃশ্য প্রাণী আর সেইসঙ্গে মৃত্যু ও হেডিসের উপর আগুনের কোনো প্রভাব পড়ে না, তাই এটা দেখায় যে, এই হ্রদ হল এক রূপক বিষয়। এটা অনন্তকাল ধরে যন্ত্রণা ভোগ করাকে বোঝায় না, বরং অনন্তধ্বংসকে বোঝায়।—প্রকা ১৯:২০; ২০:১৪, ১৫; ২১:৮.
আঙুর পেষার গর্ত।
সাধারণত প্রাকৃতিক চুনাপাথর থেকে কেটে তৈরি করা দুটো চৌবাচ্চা। একটা চৌবাচ্চা উঁচুতে এবং আরেকটা একটু নীচুতে থাকত এবং এই দুটো চৌবাচ্চা একটা ছোটো প্রণালীর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকত। উঁচুতে রাখা চৌবাচ্চায় যখন আঙুর পেষা হতো, তখন আঙুরের রস নীচু চৌবাচ্চায় গিয়ে পড়ত। ঈশ্বরের বিচার বোঝানোর জন্য এই শব্দগুলো রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।—প্রকা ১৯:১৫.
আমেন।
“তা-ই হোক” অথবা “অবশ্যই।” এই শব্দটা ইব্রীয় শব্দ অ্যামান থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “বিশ্বস্ত হওয়া, নির্ভরযোগ্য হওয়া।” কোনো শপথ, প্রার্থনা অথবা বিবৃতির সঙ্গে একমত হয়ে “আমেন” বলা হতো। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে এই শব্দটাকে যিশুর একটা উপাধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।—দ্বিতীয় ২৭:২৬; ১বংশা ১৬:৩৬; রোমীয় ১:২৫; প্রকা ৩:১৪.
আয়োজন দিন।
বিশ্রামবারের আগের দিনের নাম, যে-দিন যিহুদিরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিত। বর্তমান সময় অনুসারে এই দিন শুক্রবার সূর্যাস্তের পর শেষ হতো আর সেই সময় বিশ্রামবার শুরু হতো। যিহুদিরা এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা পর্যন্ত দিন গণনা করত।—মার্ক ১৫:৪২; লূক ২৩:৫৪.
আরেয়পাগ।
এথেন্সের এক উঁচু পাহাড়, যা অ্যাক্রোপলিসের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এ ছাড়া, এটা সেই পরিষদের (আদালত) নামও ছিল, যেটা সেখানে সভা করত। স্তোয়িকীয় ও ইপিকুরেয় দার্শনিকেরা পৌলকে আরেয়পাগে নিয়ে এসেছিল, যেন তিনি তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন।—প্রেরিত ১৭:১৯.
আলফা ও ওমেগা।
গ্রিক বর্ণমালার প্রথম ও শেষ অক্ষরের নাম; প্রকাশিত বাক্য বইয়ে ঈশ্বরের উপাধি হিসেবে এগুলো একসঙ্গে তিন বার ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গগুলোতে এই অভিব্যক্তির অর্থ “প্রথম ও শেষ” এবং “শুরু ও শেষ” অভিব্যক্তিগুলোর মতো একই।—প্রকা ১:৮; ২১:৬; ২২:১৩.
ই
ইউফ্রেটিস।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী ও সেইসঙ্গে মেসোপটেমিয়ার প্রধান দুটো নদীর মধ্যে একটা। আদিপুস্তক ২:১৪ পদে এদনের চারটে নদীর মধ্যে একটা নদীর নাম [ফরাৎ] হিসেবে প্রথম এই নদীর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনো কখনো এটাকে কেবল “নদী” বলা হয়েছে। (গীত ৭২:৮) এই নদী ইজরায়েলের নির্ধারিত এলাকার উত্তর সীমানা ছিল।—আদি ১৫:১৮; প্রকা ৯:১৪; ১৬:১২.
ইপিকুরেয় দার্শনিক।
গ্রিক দার্শনিক ইপিকুরের (খ্রিস্টপূর্ব ৩৪১-২৭০ সাল) অনুসারী। তাদের দর্শনবিদ্যা এই ধারণার উপর কেন্দ্র করে ছিল যে, সুখ ভোগ করাই একজন ব্যক্তির জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।—প্রেরিত ১৭:১৮.
ইব্রীয়।
একটা আখ্যা, যা অব্রামের (অব্রাহাম) ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল আর এটা তাকে ইমোরীয় প্রতিবেশীদের থেকে পৃথক করেছিল। পরবর্তী সময়ে এই শব্দ অব্রাহামের নাতি যাকোবের মাধ্যমে আসা অব্রাহামের বংশধরদের ও সেইসঙ্গে তাদের ভাষাকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হতো। যিশুর সময়ের মধ্যে ইব্রীয় ভাষায় অনেক অরামীয় অভিব্যক্তি ঢুকে যায় আর খ্রিস্ট এবং তাঁর শিষ্যেরা এই ভাষায়ই কথা বলত।—আদি ১৪:১৩; যাত্রা ৫:৩; প্রেরিত ২৬:১৪.
ইল্লুরিকা।
উত্তর-পশ্চিম গ্রিসের এক রোমীয় প্রদেশ। পৌল তার পরিচর্যার জন্য এতটা পথ ভ্রমণ করেছিলেন, তবে তিনি ইল্লুরিকায় প্রচার করেছিলেন, না কি শুধু সেই জায়গার আগে পর্যন্ত প্রচার করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে কিছু বলা হয়নি।—রোমীয় ১৫:১৯.
ইজরায়েল।
ঈশ্বর যাকোবকে এই নাম দিয়েছিলেন। সেই সময়ের পর থেকে তার সমস্ত বংশধরকে সমষ্টিগতভাবে এই নামে ডাকা হতো। যাকোবের ১২ জন ছেলের বংশধরদের প্রায়ই ইজরায়েলসন্তান, ইজরায়েলের লোক অথবা ইজরায়েলীয় বলা হতো। এ ছাড়া, দক্ষিণ রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া উত্তর রাজ্যের দশ বংশের নাম হিসেবেও ইজরায়েল শব্দটা ব্যবহার করা হতো। আর পরবর্তী সময়ে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘ঈশ্বরের ইজরায়েল’ বলা হয়।—গালা ৬:১৬; আদি ৩২:২৮; প্রেরিত ৪:১০; রোমীয় ৯:৬.
ঈ
ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি।
ঈশ্বরের রাজ্য।
বিশেষভাবে সেই সরকারকে নির্দেশ করে, যা চিত্রিত করে যে, নিখিলবিশ্বের শাসক হলেন ঈশ্বর। আর এই রাজ্যের রাজা হলেন তাঁর পুত্র, খ্রিস্ট যিশু।—মথি ১২:২৮; লূক ৪:৪৩; ১করি ১৫:৫০.
উ
উপবাস।
নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য কোনো খাবারই গ্রহণ না করা। ইজরায়েলীয়েরা প্রায়শ্চিত্তদিনে, দুর্দশার সময়গুলোতে এবং যখন ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের নির্দেশনার প্রয়োজন হতো, তখন উপবাস করত। যিহুদিরা তাদের ইতিহাসের বিপর্যয়মূলক ঘটনাগুলো স্মরণ করার জন্য বছরে চার বার উপবাস করার রীতি স্থাপন করেছিল। উপবাস করা খ্রিস্টানদের জন্য কোনো চাহিদা নয়।—ইষ্রা ৮:২১; যিশা ৫৮:৫; মথি ৪:২; ৯:১৪; লূক ১৮:১২; প্রেরিত ১৩:২, ৩; ২৭:৯.
উপস্থিতি।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ কোনো কোনো প্রসঙ্গে এই শব্দ যিশু খ্রিস্টের রাজকীয় উপস্থিতিকে বোঝায়। তাঁর উপস্থিতি স্বর্গে মশীহ রাজা হিসেবে সিংহাসনে অদৃশ্যভাবে তাঁর অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকে শুরু হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত অর্থাৎ এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত চলছে। খ্রিস্টের উপস্থিতি তাঁর আসার পর সঙ্গেসঙ্গে তাঁর চলে যাওয়াকে বোঝায় না; বরং এটা একটা নির্দিষ্ট সময়কালকে বোঝায়।—মথি ২৪:৩.
এ
এশিয়া।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ রোমীয় প্রদেশের নাম, যেটার অন্তর্ভুক্ত বর্তমান দিনের তুর্কির পশ্চিমাংশ আর সেইসঙ্গে কিছু উপকূলবর্তী দ্বীপ, যেমন সামোস ও পাট্ম। এর রাজধানী ছিল ইফিষ।—প্রেরিত ২০:১৬; প্রকা ১:৪.
এসোব।
খুবই সরু শাখা ও পাতাবিশিষ্ট এক উদ্ভিদ, যা শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় রক্ত অথবা জল ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। বাইবেলে যে-গ্রিক ও ইব্রীয় অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়তো বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ। যোহন ১৯:২৯ পদে উল্লেখিত ‘এসোব’ হয়তো এমন এক শ্রেণীর উদ্ভিদ, যা এতটা দীর্ঘ হয় যে, সেটার লম্বা বৃন্তের মধ্যে সির্কায় ভেজানো স্পঞ্জ লাগিয়ে যিশুর মুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।—ইব্রীয় ৯:১৯.
ক
কবর।
এটা কোনো ব্যক্তি-বিশেষের কবরকে নির্দেশ করতে পারে; আবার এটা মানবজাতির সাধারণ কবরকেও নির্দেশ করতে পারে, যেটার ইব্রীয় শব্দ হল “শিওল” এবং গ্রিক শব্দ হল “হেডিস।” বাইবেলে এটাকে এমন এক রূপক স্থান অথবা অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে কোনো কাজ করা যায় না এবং যেখানে পুরোপুরি অচেতন অবস্থা থাকে।—আদি ৪৭:৩০; উপ ৯:১০; মথি ২৭:৬১; প্রেরিত ২:৩১.
করূব।
উচ্চশ্রেণীর স্বর্গদূত, যাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তারা সরাফদের থেকে আলাদা।—আদি ৩:২৪; যাত্রা ২৫:২০; যিশা ৩৭:১৬; ইব্রীয় ৯:৫.
কল্দীয় লোক।
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর ব-দ্বীপ এলাকায় বসবাসরত লোকেরা। প্রাচীন কালে কল্দীয়দের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল ঊর, যেখানে অব্রাহামের বাড়ি ছিল।—প্রেরিত ৭:৪.
কারো উপর হাত রাখা।
একজন ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ কাজের জন্য নিযুক্ত করার অথবা তাকে কোনো আশীর্বাদ দেওয়ার কিংবা তাকে সুস্থ করার অথবা দান হিসেবে পবিত্র শক্তি দেওয়ার জন্য তার উপর হাত রাখা হতো।—গণনা ২৭:১৮; প্রেরিত ১৯:৬; ১তীম ৫:২২.
কুটিরবাস উৎসব।
এই উৎসবকে ফলসংগ্রহের উৎসবও বলা হয়। এটা ইব্রীয় এথানিম মাসের ১৫-২১ তারিখে পালন করা হতো। ইজরায়েলের কৃষিবছরের শেষে যে-শস্য কাটা হতো, সেটার খুশিতে এই উৎসব পালন করা হতো। এই সময়টাতে লোকেরা আনন্দ করত এবং তাদের শস্যের উপর যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ দিত। উৎসবের দিনগুলোতে লোকেরা কুটিরে অথবা ছাউনি দেওয়া স্থানে থাকত আর এটা তাদের মিশর থেকে যাত্রার কথা মনে করিয়ে দিত। এটা ছিল সেই তিনটে উৎসবের মধ্যে একটা, যেগুলো পালন করার জন্য পুরুষদের জেরুসালেমে যেতে হতো।—লেবীয় ২৩:৩৪; ইষ্রা ৩:৪; যোহন ৭:২.
কুপা।
এটা ছাগল অথবা মেষের মতো পশুর চামড়া থেকে তৈরি করা হতো আর এতে দ্রাক্ষারস রাখা হতো। দ্রাক্ষারস নতুন কুপাতে রাখা হতো, কারণ এটা যখন গেজিয়ে উঠত, তখন এটা থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হতো আর চামড়ার তৈরি বোতলে চাপ সৃষ্টি করত। নতুন চামড়া প্রসারিত হয়; কিন্তু পুরোনো চামড়া অনমনীয় বলে চাপের কারণে ফেটে যায়।—যিহো ৯:৪; মথি ৯:১৭.
কুমোর।
এর ইব্রীয় শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “গঠনকারী।” কাদামাটির উপর কুমোরের অধিকারকে প্রায়ই ব্যক্তি-বিশেষ এবং বিভিন্ন জাতির উপর যিহোবার শাসন করার অধিকারকে তুলে ধরার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।—যিশা ৬৪:৮; রোমীয় ৯:২১.
কুষ্ঠ রোগ; কুষ্ঠ রোগী।
এক গুরুতর চর্মরোগ। শাস্ত্রে ব্যবহৃত কুষ্ঠ শব্দটা রোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, যেমনটা বর্তমান সময়ে আমরা জানি, কারণ এটা কেবল মানুষেরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে কাপড়চোপড় ও ঘরেও দেখা দিত। যে-ব্যক্তির কুষ্ঠ রোগ হতো, তাকে কুষ্ঠ রোগী বলা হতো।—লেবীয় ১৪:৫৪; লূক ৫:১২.
কৈসর।
এক রোমীয় পদবি, যা পরে রোমের সম্রাটদের উপাধি হয়ে ওঠে। বাইবেলে আগস্ত, তিবিরিয় ও ক্লৌদিয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর যদিও নিরোর নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই উপাধি তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ “কৈসর” উপাধিটা সরকারি কর্তৃপক্ষকে চিত্রিত করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।—মার্ক ১২:১৭; প্রেরিত ২৫:১২.
কোণের পাথর।
যে-পাথর একটা দালানের কোণে অর্থাৎ যেখানে দুটো দেওয়াল একত্রে মিলিত হয়, সেখানে স্থাপন করা হয়। দুটো দেওয়ালকে সংযুক্ত করার এবং আটকে রাখার জন্য এই কোণের পাথর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোণের প্রধান পাথরই হল ভিত্তির কোণের অতি গুরুত্বপূর্ণ পাথর; সরকারি ভবন অথবা নগরের প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য নির্দিষ্টভাবে খুবই দৃঢ় পাথরই সাধারণত বেছে নেওয়া হতো। এই শব্দটা পৃথিবীর ভিত্তিস্থাপন সম্বন্ধে বলার জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে আর যিশুকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর “ভিত্তির কোণের অতি গুরুত্বপূর্ণ পাথর” বলা হয়েছে, যে-মণ্ডলী ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা এক গৃহের মতো।—ইফি ২:২০; ইয়োব ৩৮:৬.
কোর।
এটা হল শুকনো ও তরল দ্রব্যের পরিমাপ। ১ কোর সমান ২২০ লিটার, যা বাৎ পরিমাপ অনুযায়ী পরিমাণ করা হতো।—১রাজা ৫:১১; লূক ১৬:৭, পাদ.।
খ
খামির।
এমন এক উপাদান, যা ময়দার তাল কিংবা তরল পদার্থকে ফাঁপিয়ে তোলার জন্য সেগুলোর মধ্যে মেশানো হতো। যদিও বাইবেলে এটাকে প্রায়ই পাপ ও কলুষতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু এটা গোপনে ঘটা ব্যাপক বৃদ্ধিকে নির্দেশ করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।—যাত্রা ১২:২০; মথি ১৩:৩৩; গালা ৫:৯.
খামিরবিহীন রুটির উৎসব।
ইজরায়েলীয়দের তিনটে প্রধান বার্ষিক উৎসবের মধ্যে প্রথম উৎসব। এটা নিস্তারপর্বের পরের দিন, নিশান মাসের ১৫ তারিখে শুরু হতো এবং সাত দিন ধরে চলত। এই উৎসব মিশর থেকে যাত্রার কথা মনে করিয়ে দিত এবং এই সময়টাতে কেবলমাত্র খামিরবিহীন রুটি খাওয়া হতো।—যাত্রা ২৩:১৫; মার্ক ১৪:১.
খামিরবিহীন।
এমন রুটিকে বোঝায়, যা খামির ছাড়া তৈরি করা হতো।—দ্বিতীয় ১৬:৩; মার্ক ১৪:১২; ১করি ৫:৮.
খ্রিস্ট।
খ্রিস্টান।
যিশু খ্রিস্টের অনুসারীদের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া নাম।—প্রেরিত ১১:২৬; ২৬:২৮.
খ্রিস্টের বিরোধী।
শাস্ত্রে এটা সেই ব্যক্তিদের নির্দেশ করে, যারা খ্রিস্টের বিরোধী। এ ছাড়া, এটা একজন মিথ্যা খ্রিস্টকেও নির্দেশ করতে পারে। এমন সমস্ত লোক, সংগঠন অথবা দলকে উপযুক্তভাবে খ্রিস্টের বিরোধী বলা যেতে পারে, যারা খ্রিস্টকে প্রতিনিধিত্ব করার অথবা মশীহ হওয়ার মিথ্যা দাবি করে কিংবা খ্রিস্ট এবং তাঁর শিষ্যদের বিরোধিতা করে।—১যোহন ২:২২.
গ
গন্ধরস।
সুগন্ধি আঠালো রজন, যা বিভিন্ন ধরনের কাঁটাঝোপ অথবা কমিফোরা প্রজাতির ছোটো ছোটো গাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো। অভিষিক্ত করার জন্য যে-পবিত্র তেল ব্যবহার করা হতো, সেই তেলের একটা উপাদান ছিল গন্ধরস। এটা বিভিন্ন জিনিসকে সুগন্ধযুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হতো যেমন, পোশাক-আশাক অথবা বিছানা। এ ছাড়া, এটা মালিশ করার তেল এবং শরীরে মাখার লেপনের মধ্যে দেওয়া হতো। অনুভূতিহীন করে তোলার জন্য এটা দ্রাক্ষারসের সঙ্গে মেশানো হতো। এ ছাড়া, কবর দেওয়ার আগে মৃতদেহে গন্ধরস লাগানো হতো।—যাত্রা ৩০:২৩; হিতো ৭:১৭; মার্ক ১৫:২৩; যোহন ১৯:৩৯.
গিহেন্না।
প্রাচীন জেরুসালেমের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত হিন্নোম উপত্যকার গ্রিক নাম। (যির ৭:৩১) ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে এটাকে এমন এক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। (যির ৭:৩২; ১৯:৬) এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, জীবন্ত অবস্থায় পোড়ানোর জন্য অথবা যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য পশুপাখি অথবা মানুষকে গিহেন্নায় নিক্ষেপ করা হতো। তাই, এই স্থান এমন কোনো অদৃশ্য জায়গাকে চিত্রিত করতে পারে না, যেখানে মানুষকে মৃত্যুর পর চিরকাল আগুনে যন্ত্রণা দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে, যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরা যখন গিহেন্না শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, তখন তারা ‘দ্বিতীয় মৃত্যু’ অর্থাৎ অনন্তধ্বংসকে বুঝিয়েছিলেন।—প্রকা ২০:১৪; মথি ৫:২২; ১০:২৮.
গোটানো পুস্তক।
পশুর চামড়া অথবা প্যাপিরাস থেকে তৈরি লম্বা পত্র, যেটার কেবল এক দিকে লেখা থাকত। সাধারণত এটা একটা লাঠির মধ্যে মোড়ানো থাকত। শাস্ত্র লেখার এবং সেগুলোর প্রতিলিপি করার জন্য এই গোটানো পুস্তকগুলো ব্যবহার করা হতো। বাইবেলের সময় সাধারণত বইগুলো এইরকম হতো।—লূক ৪:১৭-২০; ২তীম ৪:১৩.
গ্রিক।
গ্রিসের লোকদের ভাষা; এ ছাড়া, যে-ব্যক্তি গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা যার পরিবার গ্রিসের লোক। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এই শব্দ সমস্ত ন-যিহুদি লোকদের অথবা গ্রিক ভাষা ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত লোকদের নির্দেশ করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।—যোয়েল ৩:৬; যোহন ১২:২০.
ঘ
ঘুঁটি।
ছোটো ছোটো পাথর অথবা কাঠের টুকরো, যেগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এগুলো একটা কাপড়ের ভাঁজে অথবা একটা পাত্রের মধ্যে রেখে ঝাঁকানো হতো। যে-ব্যক্তির নামের পাথর অথবা কাঠের টুকরো বাইরে পড়ত অথবা বের করা হতো, তাকে বেছে নেওয়া হতো। এই কাজ প্রায়ই প্রার্থনা সহকারে করা হতো।—মথি ২৭:৩৫; প্রেরিত ১:২৬.
চ
চট।
এক অমসৃণ কাপড়, যা বস্তা অথবা থলি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো আর যেখানে শস্য ভরা হতো। এটা সাধারণত গাঢ় রঙের ছাগলের লোম থেকে তৈরি করা হতো। প্রথা অনুসারে এটা শোক করার জন্য পরা হতো।—আদি ৩৭:৩৪; লূক ১০:১৩.
চাবুক।
যিশুর সময়ে একটা চাবুকের মাথায় লোহার ছোটো ছোটো বল অথবা হাড়ের ধারালো টুকরো থাকত আর এই চাবুক শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো।—যোহন ১৯:১.
চিহ্ন।
চুক্তি।
কোনো কিছু করার অথবা কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে অথবা দু-পক্ষের মানুষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক এক সম্মতি। কখনো কখনো কেবল একটা পক্ষ শর্ত পালন করতে বাধ্য ছিল (একপক্ষীয় চুক্তি, যা মূলত একটা প্রতিজ্ঞা)। আবার কখনো কখনো দু-পক্ষই শর্ত পালন করতে বাধ্য ছিল (দ্বিপক্ষীয় চুক্তি)। মানুষের সঙ্গে করা ঈশ্বরের চুক্তি ছাড়াও বাইবেলে মানুষ, বংশ, জাতি অথবা লোকদের দলের মধ্যে করা চুক্তির বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। যে-চুক্তিগুলোর সঙ্গে সুদূরপ্রসারী প্রভাব জড়িত ছিল, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অব্রাহামের সঙ্গে, দায়ূদের সঙ্গে, ইজরায়েল জাতির সঙ্গে (ব্যবস্থা চুক্তি) এবং ঈশ্বরের ইজরায়েলের সঙ্গে (নতুন চুক্তি) করা ঈশ্বরের চুক্তি।—আদি ৯:১১; ১৫:১৮; ২১:২৭; যাত্রা ২৪:৭; ২বংশা ২১:৭; লূক ২২:২৯; প্রেরিত ৩:২৫; ২করি ৩:৬; ইব্রীয় ৮:৬.
চুক্তির সিন্দুক।
বাবলা-জাতীয় গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এবং সোনায় মোড়ানো সিন্দুক, যেটা আবাসের মহাপবিত্র স্থানে এবং পরবর্তী সময়ে শলোমনের দ্বারা নির্মিত মন্দিরের মহাপবিত্র স্থানে রাখা ছিল। এটার উপর খাঁটি সোনার একটা ঢাকনা ছিল, যেটাতে দু-জন করূব মুখোমুখি অবস্থায় ছিল। এই সিন্দুকের ভিতরে যে-বিষয়গুলো ছিল, সেগুলোর মধ্যে প্রধান হল দশ আজ্ঞা লিখিত দুটো পাথরের ফলক।—দ্বিতীয় ৩১:২৬; ১রাজা ৬:১৯; ইব্রীয় ৯:৪.
ছ
ছিন্নত্বক।—
ত্বকচ্ছেদ দেখুন।
জ
জটামাংসী।
হালকা লাল রঙের খুব দামি সুগন্ধি তেল, যা জটামাংসীর চারাগাছ (নারডোস্ট্যাচিস্ জাটামানসি) থেকে সংগ্রহ করা হতো। যেহেতু জটামাংসী খুব দামি ছিল, তাই এটা প্রায়ই সস্তা তেলের সঙ্গে মেশানো হতো আর এই নকল তেলকে আসল জটামাংসী বলে বিক্রি করা হতো। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মার্ক ও যোহন উভয়ই বলেছেন যে, “আসল জটামাংসীর” তেল যিশুর উপর ঢেলে দেওয়া হয়েছিল।—মার্ক ১৪:৩; যোহন ১২:৩.
জাঁতা।
এক গোলাকৃতি পাথর, যেটা একইরকম পাথরের উপর বসানো হতো এবং শস্য পিষে ময়দা তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হতো। নীচের পাথরের মাঝখানে একটা গজাল বসানো থাকত, যেটা উপরের পাথরের আবর্তন শলাকা হিসেবে কাজ করে। বাইবেলের সময়ে বেশির ভাগ বাড়িতে মহিলাদের দ্বারা চালিত হাতে-ঘোরানো জাঁতা ব্যবহার করা হতো। যেহেতু একটা পরিবারের প্রতিদিনের খাবার হাতে-ঘোরানো জাঁতার উপর নির্ভর করত, তাই মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী জাঁতা কিংবা এর উপরের পাথরটা বাজেয়াপ্ত করা নিষেধ ছিল। হাতে-ঘোরানো জাতার মতো বড়ো বড়ো জাঁতাও ছিল, যেগুলো পশুদের দ্বারা ঘোরানো হতো।—দ্বিতীয় ২৪:৬; মার্ক ৯:৪২.
জিউস।
বহুঈশ্বরবাদী গ্রিকদের সবচেয়ে বড়ো দেবতা। লুস্ত্রায় বার্ণবাকে ভুলভাবে জিউস বলে মনে করা হয়েছিল। লুস্ত্রার কাছাকাছি পাওয়া প্রাচীন অভিলিখনে এই কথাগুলো পাওয়া যায়, “জিউসের পুরোহিতেরা” এবং “সূর্যদেবতা জিউস।” মাল্টা দ্বীপ থেকে পৌল যে-জাহাজে উঠেছিলেন, সেটার সামনের দিকে “জিউসের যমজ ছেলে” কাস্তর ও পোলাক্সের চিহ্ন ছিল।—প্রেরিত ১৪:১২; ২৮:১১.
জীবনবৃক্ষ।
এদন বাগানের একটা গাছ। এই গাছের ফলের মধ্যে জীবন দেওয়ার মতো কোনো শক্তি ছিল কি না, সেই বিষয়ে বাইবেলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না; এর পরিবর্তে, এটা ঈশ্বরের এই নিশ্চয়তাকে তুলে ধরে যে, যাদের তিনি এই গাছের ফল খেতে দেবেন, তাদের তিনি অনন্তজীবন দান করবেন। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে, রূপক অর্থে এটা দীর্ঘজীবনের বিষয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা।—আদি ২:৯; ৩:২২; প্রকা ২:৭; ২২:১৯.
জোয়াল।
একজন ব্যক্তির কাঁধের উপর রাখা একটা দণ্ড, যেটার দু-দিকেই ভার ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। কিংবা কাঠের দণ্ড অথবা কাঠামো, যা সেইসময় দুটো ভারবাহী পশুর (সাধারণত গবাদি পশু) উপর রাখা হতো, যখন এগুলো খামারের জিনিসপত্র অথবা মালবাহী গাড়ি টেনে নিয়ে যেত। যেহেতু দাসেরা ভারী বোঝা বহন করার জন্য প্রায়ই জোয়াল ব্যবহার করত, তাই কারো দাসত্বে অথবা অধীনে থাকার বিষয়টা ও সেইসঙ্গে নিপীড়ন ও কষ্টকে বোঝানোর জন্য জোয়াল শব্দটা রূপকভাবে ব্যবহার করা হতো। জোয়াল দূর করা অথবা ভেঙে ফেলা দাসত্ব, নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়াকে বোঝায়।—লেবীয় ২৬:১৩; মথি ১১:২৯, ৩০.
জ্যোতিষী।
যে-ব্যক্তি ভবিষ্যতের ঘটনা আগে থেকে বলার জন্য সূর্য, চাঁদ ও তারার গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করেন।—মথি ২:১.
ট
টারটারাস।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এক বন্দিতুল্য অবমাননাকর অবস্থা, যেখানে নোহের দিনের অবাধ্য স্বর্গদূতদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ২ পিতর ২:৪ পদে ব্যবহৃত ক্রিয়া পদ টারটারু (“টারটারাসে নিক্ষেপ“ করা) বোঝায় না যে, ‘সেই স্বর্গদূতদের, যারা পাপ করেছিল,’ পৌত্তলিক পৌরাণিক কাহিনির টারটারাসে (অর্থাৎ ছোটোখাটো দেব-দেবীদের জন্য ভূগর্ভস্থ কারাগার এবং অন্ধকারময় স্থান) নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে, এটা বোঝায় যে, ঈশ্বর স্বর্গীয় স্থান ও সুযোগ থেকে তাদের বিতাড়িত করেছেন এবং তাদের মনকে এক অন্ধকারময় অবস্থার মধ্যে রেখেছেন, যেন তারা ঈশ্বরের গৌরবময় উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে না পারে। অন্ধকার তাদের নিজেদের শেষ পরিণতিকেও নির্দেশ করে। আর শাস্ত্র অনুযায়ী সেটা হল তাদের শাসক শয়তান দিয়াবল-সহ তাদের অনন্তধ্বংস। তাই, টারটারাস সেই বিদ্রোহী স্বর্গদূতদের জন্য সবচেয়ে নীচু অবস্থাকে নির্দেশ করে। তবে, এটা প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩ পদে বলা ‘অতল গহ্বর’ নয়।
ড
ড্রাকমা।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এই শব্দ গ্রিক রৌপ্যমুদ্রাকে নির্দেশ করে, যেটার ওজন সেই সময় ৩.৪ গ্রাম ছিল।—মথি ১৭:২৪.
ত
তালন্ত।
ইব্রীয় পরিমাপের এবং মুদ্রার সবচেয়ে বড়ো একক। এর ওজন ছিল ৩৪.২ কিলোগ্রাম। গ্রিক তালন্ত কিছুটা ছোটো ছিল, যেটার ওজন ছিল প্রায় ২০.৪ কিলোগ্রাম।—১বংশা ২২:১৪; মথি ১৮:২৪, পাদ.।
তুষ।
তূরী।
ধাতু দিয়ে তৈরি এক বাদ্যযন্ত্র, যা ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়। এটা সতর্ক করার এবং সংগীতের জন্য ব্যবহার করা হতো। তূরীধ্বনি প্রায়ই রূপকভাবেও ব্যবহৃত হয়েছে। যিহোবার বিচার ঘোষণা করার অথবা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা অন্যান্য তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তূরীধ্বনি শোনা যেত।—১করি ১৫:৫২; প্রকা ৮:৭–১১:১৫.
ত্বকচ্ছেদ।
পুরুষ লিঙ্গাগ্রের ত্বক কেটে ফেলা। অব্রাহাম এবং তার বংশধরদের জন্য এই প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল কিন্তু এটা খ্রিস্টানদের জন্য কোনো চাহিদা নয়। বিভিন্ন প্রসঙ্গে এটাকে রূপক অর্থেও ব্যবহার করা হয়েছে।—আদি ১৭:১০; ১করি ৭:১৯; ফিলি ৩:৩.
দ
দণ্ড।
একটা সোজা খুঁটি, যেখানে একজন অপরাধীকে বেঁধে রাখা হতো। কোনো কোনো জাতির মধ্যে শাস্তি দেওয়ার জন্য এবং/বা অন্যদের জন্য সাবধানবাণী হিসেবে অথবা জনসমক্ষে লজ্জাজনক শাস্তি হিসেবে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখার জন্য এটা ব্যবহার করা হতো। অশূরীয়েরা, যারা তাদের হিংস্র যুদ্ধের জন্য কুখ্যাত ছিল, বন্দিদের দেহ একটা সুচালো দণ্ডের একেবারে উপরে ঝুলিয়ে বিদ্ধ করত। তারা সেই দণ্ড একজন বন্দির পেট দিয়ে ঢুকিয়ে একেবারে বুকের মধ্য দিয়ে বের করে দিত। কিন্তু, যিহুদি আইন অনুযায়ী যারা ঈশ্বরনিন্দা অথবা প্রতিমাপূজা করার মতো ঘৃণ্য অপরাধ করার দোষে দোষী ছিল, তাদের প্রথমে পাথর ছুড়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে হত্যা করা হতো এবং এরপর অন্যদের জন্য সাবধানবাণী হিসেবে তাদের মৃতদেহ দণ্ডে অথবা গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। (দ্বিতীয় ২১:২২, ২৩; ২শমূ ২১:৬, ৯) রোমীয়েরা কখনো কখনো একজন অপরাধীকে একটা দণ্ডের মধ্যে বেঁধে রাখত, যেখানে হয়তো সে যন্ত্রণা, তৃষ্ণা, ক্ষুধা ও রোদের কারণে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত কয়েক দিন বেঁচে থাকত। অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির হাত ও পা দণ্ডে বিদ্ধ করত, যেমনটা যিশুর মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে করেছিল। (লূক ২৪:২০; যোহন ১৯:১৪-১৬; ২০:২৫; প্রেরিত ২:২৩, ৩৬)—যাতনাদণ্ড দেখুন।
দর্শন-রুটি।
১২টা রুটি, যেগুলো আবাস ও মন্দিরের পবিত্র অংশে টেবিলের উপর দুটো সারিতে ছ-টা ছ-টা করে রাখা হতো। প্রতি বিশ্রামবারে এই রুটিগুলো পরিবর্তন করে নতুন রুটি রাখা হতো, যেগুলো ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করার হতো। যে-রুটিগুলো সরিয়ে ফেলা হতো, সেগুলো সাধারণত কেবল যাজকেরা খেত।—২বংশা ২:৪; যাত্রা ২৫:৩০; লেবীয় ২৪:৫-৯; মথি ১২:৪; ইব্রীয় ৯:২.
দল।
লোকদের একটা সমষ্টি, যারা দৃঢ়ভাবে কোনো মতবাদ অথবা কোনো নেতাকে মেনে চলে এবং তাদের নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী চলে। যিহুদি ধর্মের দুটো প্রধান সম্প্রদায়, ফরীশী ও সদ্দূকীদের জন্য দল শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ন-খ্রিস্টীয় লোকেরাও খ্রিস্ট ধর্মকে ‘দল’ বা ‘নাসরতীয় দল’ বলত, কারণ সম্ভবত তারা মনে করত, এই ধর্ম যিহুদি ধর্ম থেকে বিভক্ত হওয়া এক দল। পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যেও দল তৈরি হতে শুরু করে; প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বিশেষভাবে ‘নীকলায়ের দল’ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।—প্রেরিত ৫:১৭; ১৫:৫; ২৪:৫; ২৮:২২; প্রকা ২:৬, পাদ.; ২পিতর ২:১.
দশমাংশ।
যেকোনো কিছুর দশ শতাংশ, যা প্রশংসাস্বরূপ, বিশেষভাবে ধর্মীয় উদ্দেশে দেওয়া হতো। (মালাখি ৩:১০; দ্বিতীয় ২৬:১২; মথি ২৩:২৩; ইব্রীয় ৭:৫) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতি বছর ভূমিতে উৎপন্ন জিনিসের দশমাংশ এবং বৃদ্ধিরত পশুপালের দশমাংশ লেবীয়দের দিতে হতো, যাতে তা দিয়ে তারা জীবিকানির্বাহ করতে পারে। আর লেবীয়েরা এই দশমাংশের দশমাংশ হারোণের যাজকগোষ্ঠীকে দিত, যাতে তারা তাদের জীবিকানির্বাহ করতে পারে। এ ছাড়া, আরও কিছু দশমাংশ ছিল। দশমাংশ খ্রিস্টানদের জন্য আবশ্যক নয়।
দায়ূদসন্তান।
এই শব্দ প্রায়ই যিশুর জন্য ব্যবহৃত হতো। এটা এই বিষয়টার উপর জোর দিত যে, যিশু দায়ূদের বংশধর এবং তিনি দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী এক রাজ্যের উত্তরাধিকারী।—মথি ১২:২৩; ২১:৯.
দিকাপলি।
গ্রিক নগরসমষ্টি, যা মূলত দশটা নগর নিয়ে গঠিত (গ্রিক শব্দ দিকা ও পলিস থেকে এসেছে, যেগুলোর অর্থ যথাক্রমে “দশ” ও “নগর”)। এ ছাড়া, এটা গালীল সাগর এবং জর্ডন নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত অঞ্চলের নাম, যেখানে এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ নগর ছিল। এগুলো হেলিনিস্ট (প্রাচীন গ্রিক) সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। যিশু এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, তবে তিনি এগুলোর কোনো একটা নগরে গিয়েছিলেন কি না, সেই বিষয়ে কোনো নথি নেই।—মথি ৪:২৫; মার্ক ৫:২০.
দিনার।
রোমীয় রৌপ্যমুদ্রা, যেটার ওজন প্রায় ৩.৮৫ গ্রাম এবং যেটার এক পাশে কৈসরের ছবি ছিল। এটা এক জন মজুরের এক দিনের বেতন ছিল এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত কর ছিল, যা রোমীয়েরা যিহুদিদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করত।—মথি ২২:১৭; লূক ২০:২৪.
দিয়াবল।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ শয়তানের বর্ণনামূলক নাম, যেটার অর্থ “অপবাদক।” শয়তানকে দিয়াবল নাম দেওয়া হয়েছিল, কারণ সে যিহোবা, তাঁর সত্য বাক্য এবং তাঁর পবিত্র নামের বিরুদ্ধে মুখ্য এবং সবচেয়ে প্রধান অপবাদক এবং মিথ্যা দোষারোপকারী।—মথি ৪:১; যোহন ৮:৪৪; প্রকা ১২:৯.
দু-দিকে স্তম্ভবিশিষ্ট শলোমনের বারান্দা।
যিশুর দিনে মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণের পূর্ব দিকে ছাদযুক্ত বারান্দা। মনে করা হতো, এটা শলোমনের মন্দিরের অবশিষ্ট অংশ। এখানেই যিশু ‘শীত কালে’ হেঁটেছিলেন আর এখানেই প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা উপাসনার জন্য মিলিত হতো।—যোহন ১০:২২, ২৩; প্রেরিত ৫:১২.
দেশাধ্যক্ষ।
রোমীয় সিনেট (প্রাচীন রোমে উচ্চতর রাষ্ট্রীয় পরিষদ) দ্বারা শাসিত কোনো প্রদেশের প্রধান রাজ্যপাল। তার কাছে বিচার সংক্রান্ত ও সেইসঙ্গে সামরিক ক্ষমতা ছিল আর যদিও তাকে তার কাজের জন্য সিনেটের কাছে জবাবদিহি করতে হতো, কিন্তু প্রদেশের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।—প্রেরিত ১৩:৭; ১৮:১২.
দ্রাক্ষারস উৎসর্গ।
দ্রাক্ষারস উৎসর্গ করা, যা বেদিতে ঢেলে দেওয়া হতো এবং অন্যান্য বেশিরভাগ উৎসর্গের সঙ্গে দেওয়া হতো। পৌল তার সহখ্রিস্টানদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তার ইচ্ছুক মনোভাব প্রকাশ করার জন্য রূপক অর্থে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছেন।—গণনা ১৫:৫, ৭; ফিলি ২:১৭.
ধ
ধর্মভ্রষ্টতা।
গ্রিক ভাষায় এই অভিব্যক্তিটা (অ্যাপোস্তাসিয়া) এমন একটা ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে, যেটার আক্ষরিক অর্থ “সরে যাওয়া।” আর বিশেষ্য পদের ধারণা হল, “ছেড়ে চলে যাওয়া, পরিত্যাগ করা বা বিদ্রোহ করা।” খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ “ধর্মভ্রষ্টতা” শব্দটা মূলত সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যারা সত্য উপাসনা ত্যাগ করেছে।—হিতো ১১:৯; প্রেরিত ২১:২১; ২থিষল ২:৩.
ধর্মান্তরিত ব্যক্তি।
শাস্ত্রে এই শব্দ এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি যিহুদি ধর্ম গ্রহণ করতেন। আর একজন পুরুষের জন্য এর অন্তর্ভুক্ত ছিল ত্বকচ্ছেদ করা।—মথি ২৩:১৫; প্রেরিত ১৩:৪৩.
ধার্মিকতা।
শাস্ত্রে ব্যবহৃত এই শব্দের অর্থ, সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে ঈশ্বরের মান অনুযায়ী যা সঠিক।—আদি ১৫:৬; দ্বিতীয় ৬:২৫; সফ ২:৩; মথি ৬:৩৩.
ধূপ।
সুগন্ধি রজন ও নির্যাসের মিশ্রণ, যা ধীরে ধীরে পুড়ে সুন্দর গন্ধ ছড়ায়। আবাসে ও মন্দিরে ব্যবহার করার জন্য চারটে উপাদানবিশিষ্ট বিশেষ ধূপ তৈরি করা হতো। পবিত্র অংশে ধূপবেদিতে সকালে ও রাতে আর প্রায়শ্চিত্তদিনে মহাপবিত্র অংশের মধ্যে এই ধূপ জ্বালানো হতো। এই ধূপ ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের গ্রহণযোগ্য প্রার্থনার প্রতীক ছিল। তবে, খ্রিস্টানদের জন্য ধূপের ব্যবহার আবশ্যক ছিল না।—যাত্রা ৩০:৩৪, ৩৫; লেবীয় ১৬:১৩; প্রকা ৫:৮.
ধূপদানি।
সোনা, রুপো অথবা তামা দিয়ে তৈরি পাত্র, যা ধূপ জ্বালানোর জন্য আর সেইসঙ্গে বলিদানের বেদি থেকে কয়লা এবং সোনার দীপবৃক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া সলতে সরানোর জন্য আবাসে ও মন্দিরে ব্যবহার করা হতো। এগুলোকে অঙ্গারধানীও বলা হতো।—২বংশা ২৬:১৯; ইব্রীয় ৯:৪.
ন
নগরাধ্যক্ষ।
রোমীয় উপনিবেশে, নগরাধ্যক্ষেরা সরকারের প্রশাসক ছিলেন। তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারের অর্থ ব্যবস্থা পরিচালনা করা, আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচার করা এবং শাস্তি দেওয়ার আদেশ দেওয়া।—প্রেরিত ১৬:২০.
নতুন চাঁদ।
যিহুদি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক মাসের প্রথম দিন। এই দিন সবাই একত্রিত হতো, ভোজ খেত এবং বিশেষ বিশেষ বলি উৎসর্গ করত। পরবর্তী সময়ে, এই দিন এক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উৎসব হয়ে ওঠে আর লোকেরা এই দিন কোনো কাজ করত না।—গণনা ১০:১০; ২বংশা ৮:১৩; কল ২:১৬.
নপুংসক।
আক্ষরিক অর্থে, একজন খোজা পুরুষ। এইরকম পুরুষদের প্রায়ই রাজদরবারে পরিচারক হিসেবে অথবা রানি ও উপপত্নীদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হতো। এই শব্দ এমন কোনো পুরুষকেও নির্দেশ করে, যিনি আক্ষরিক অর্থে নপুংসক নন, কিন্তু রাজদরবারের বিভিন্ন কাজের জন্য নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা। এই শব্দ রূপকভাবে ‘স্বর্গরাজ্যের জন্য নপুংসক’ অভিব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি সবসময় আত্মসংযম করে থাকেন, যেন ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে আরও বেশি বিলিয়ে দিতে পারেন।—মথি ১৯:১২, পাদ.; ইষ্টের ২:১৫; প্রেরিত ৮:২৭.
নলখাগড়া।
এই শব্দ এমন অসংখ্য উদ্ভিদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো সাধারণত জলাবদ্ধ স্থানে বেড়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে এই উদ্ভিদ হল এরোণ্ড ডোনেক্স।—মথি ২৭:২৯; প্রকা ১১:১.
নাসরতীয়।
যিশুকে দেওয়া একটা নাম, কারণ তিনি নাসরৎ নগরের লোক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে, যিশুর অনুসারীদেরও এই নামে ডাকা হতো।—মথি ২:২৩; প্রেরিত ২৪:৫.
নিন্দা।
গ্রিক শব্দ ব্লাসফেমিয়া-র অর্থ মূলত মন্দ, সুনাম হানিকর অথবা অপমানজনক কথা। এইরকম কথাবার্তা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কিংবা মানুষের বিরুদ্ধে বলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। নতুন জগৎ অনুবাদ-এ এটা মূলত ঈশ্বর এবং পবিত্র বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে বলা অসম্মানজনক ও অপমানজনক কথাবার্তাকে নির্দেশ করে।—লূক ১২:১০; প্রকা ১৬:৯.
নির্লজ্জভাবে করা পাপ কাজ।
গ্রিক শব্দ অ্যাসেলগেইয়া থেকে এসেছে, যে-শব্দসমষ্টির সঙ্গে এমন ধরনের কাজ সম্পর্কযুক্ত, যেগুলো ঈশ্বরের আইনগুলোকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করে আর যেগুলো নির্লজ্জ বা দুঃসাহসপূর্ণ উদ্ধত মনোভাবকে প্রতিফলিত করে; এমন মনোভাব, যা কর্তৃত্ব, আইনকানুন ও মানগুলোর প্রতি অসম্মান অথবা এমনকী ঘৃণা প্রকাশ করে। এই অভিব্যক্তি কোনো ছোটোখাটো অন্যায় আচরণকে নির্দেশ করে না।—গালা ৫:১৯; ২পিতর ২:৭.
নিশান।
বাবিলে নির্বাসনের পর, আবীব মাসের নতুন নাম, যেটা হল যিহুদি পবিত্র ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস এবং জাগতিক ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হল নিশান (নীসন) মাস। (নহি ২:১) যিহুদি নিস্তারপর্ব নিশান মাসের ১৪ তারিখে উদ্যাপন করা হতো আর সেই দিনই যিশু প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন। (লূক ২২:১৫, ১৯, ২০) সেই একই দিনে তাঁকে যাতনাদণ্ডে হত্যা করা হয়েছিল।
নিস্তারপর্ব।
প
পঙ্গপাল।
এক প্রকারের ফড়িং, যা বড়ো বড়ো ঝাঁকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী এগুলোকে শুচি বলে মনে করা হতো আর তাই খাওয়ার যোগ্য ছিল। পঙ্গপালের বিশাল ঝাঁক কোনো পথ দিয়ে যাওয়ার সময় যখন সমস্ত কিছু খেয়ে ফেলত এবং ব্যাপক ধ্বংস সাধন করত, তখন সেটাকে মহামারি বলা হতো।—যাত্রা ১০:১৪; মথি ৩:৪.
পঞ্চাশত্তমী।
তিনটে প্রধান উৎসবের মধ্যে দ্বিতীয় উৎসব, যা সমস্ত যিহুদি পুরুষকে জেরুসালেমে উদ্যাপন করতে হতো। পঞ্চাশত্তমীর অর্থ “পঞ্চাশতম (দিন)।” ইব্রীয় শাস্ত্র-এ যে-উৎসবকে শস্যচ্ছেদনের উৎসব এবং সাত সপ্তাহের উৎসব বলা হয়েছে, সেটাকে খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ পঞ্চাশত্তমী বলা হয়েছে। নিশান মাসের ১৬ তারিখ থেকে গণনা করে পঞ্চাশতম দিনে এই উৎসব উদ্যাপন করা হতো।—যাত্রা ২৩:১৬; ৩৪:২২; প্রেরিত ২:১.
পবিত্র (অংশ)।
আবাসের অথবা মন্দিরের প্রথম এবং সবচেয়ে বড়ো অংশ, যা একেবারে ভিতরের অংশ অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থান থেকে আলাদা ছিল। আবাসে পবিত্র অংশের মধ্যে ছিল সোনার দীপবৃক্ষ, সোনার ধূপবেদি, দর্শন-রুটির টেবিল এবং সোনার বিভিন্ন পাত্র; মন্দিরে পবিত্র অংশের মধ্যে ছিল সোনার বেদি, দশটা সোনার দীপবৃক্ষ এবং দর্শন-রুটির দশটা টেবিল।—যাত্রা ২৬:৩৩; ইব্রীয় ৯:২.
পবিত্র রহস্য।
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের একটা দিক, যা তিনি নিজের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাঁর কাছে রাখেন। এরপর তিনি কেবল তাদের কাছেই সেটা প্রকাশ করেন, যাদের কাছে তিনি প্রকাশ করতে চান।—মার্ক ৪:১১; কল ১:২৬.
পবিত্র শক্তি।
প্রবল বল প্রদানকারী অদৃশ্য শক্তি, যা ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার করেন। এটা পবিত্র, কারণ এটা যিহোবার কাছ থেকে আসে, যিনি সর্বোচ্চ মাত্রায় শুদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ আর ঈশ্বর এটার মাধ্যমে তাঁর পবিত্র উদ্দেশ্য সম্পাদন করেন।—লূক ১:৩৫; প্রেরিত ১:৮.
পবিত্র সেবা।
এমন পরিচর্যা অথবা কাজ, যা পবিত্র এবং সরাসরি ঈশ্বরের উপাসনা করার সঙ্গে যুক্ত।—রোমীয় ১২:১; প্রকা ৭:১৫.
পবিত্র স্থান।
সাধারণত উপাসনার জন্য পৃথক্কৃত এক স্থান। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়ই এটা আবাস অথবা জেরুসালেমের মন্দিরকে বোঝাত। এই শব্দ স্বর্গে ঈশ্বরের আবাসকে বোঝানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।—যাত্রা ২৫:৮, ৯; ২রাজা ১০:২৫; ১বংশা ২৮:১০; প্রকা ১১:১৯.
পবিত্র; পবিত্রতা।
যিহোবার এক অন্তর্নিহিত গুণ; নৈতিক দিক দিয়ে পুরোপুরি শুদ্ধ এক অবস্থা। (১শমূ ২:২; যোহন ১৭:১১; প্রকা ৪:৮) যখন মানুষ (মার্ক ৬:২০; ২থিষল ১:১০), বিভিন্ন বিষয় (রোমীয় ৭:১২; ১১:১৬; ২তীম ৩:১৫), স্থান (মথি ৪:৫; প্রেরিত ৭:৩৩; ইব্রীয় ৯:১) এবং কাজের (রোমীয় ১৫:১৬) ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, তখন মূল ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দগুলো পৃথক হওয়ার অথবা পবিত্র ঈশ্বরের উদ্দেশে পবিত্র হওয়ার ধারণাকে প্রকাশ করে; যিহোবার সেবার জন্য আলাদা হওয়া। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ যে-শব্দগুলোকে “পবিত্র” ও “পবিত্রতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেগুলো একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আচরণের শুদ্ধতাকে নির্দেশ করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে।—২করি ৭:১; ১পিতর ১:১৫, ১৬.
পরনিয়া।—
যৌন অনৈতিকতা দেখুন।
পরমদেশ।
এক অপূর্ব বাগান। এইরকম প্রথম স্থান ছিল এদন, যা যিহোবা প্রথম মানবদম্পতির জন্য তৈরি করেছিলেন। যাতনাদণ্ডে থাকার সময় যিশু তাঁর দু-পাশে থাকা দু-জন অপরাধীর মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলার সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পৃথিবী এক পরমদেশ হয়ে উঠবে। ২ করিন্থীয় ১২:৪ পদে এই শব্দটা স্পষ্টতই এক রূপক পরমদেশকে নির্দেশ করে আর প্রকাশিত বাক্য ২:৭ পদে এটা এক স্বর্গীয় পরমদেশকে নির্দেশ করে।—পরম ৪:১৩; লূক ২৩:৪৩.
পরিচারক দাস।
এর গ্রিক শব্দ হল ডিয়াকোনোস, যেটাকে প্রায়ই “পরিচারক” অথবা “দাস” হিসেবে অনুবাদ করা হয়। “পরিচারক দাস” এমন একজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যিনি মণ্ডলীতে প্রাচীনগোষ্ঠীর সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেন। সেবার এই বিশেষ সুযোগ লাভ করার ব্যাপারে যোগ্য হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই বাইবেলের মানগুলো পূরণ করতে হবে।—১তীম ৩:৮-১০, ১২.
পর্দা।
সূচীশিল্প দ্বারা করূবদের নকশা করা চমৎকারভাবে বোনা কাপড়, যা আবাস ও মন্দির উভয় স্থানেই পবিত্র স্থানকে মহাপবিত্র স্থান থেকে পৃথক করত।—যাত্রা ২৬:৩১; ২বংশা ৩:১৪; মথি ২৭:৫১; ইব্রীয় ৯:৩.
পাঁচনি।
এমন একটা দণ্ড বা লাঠি, যেটার ডগা ধাতু দিয়ে তৈরি এবং সুচালো ছিল। কৃষকেরা কোনো পশুকে খোঁচা দেওয়ার জন্য এটা ব্যবহার করত। পাঁচনিকে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির কথার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা শ্রোতাদের বিজ্ঞ পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার জন্য পরিচালিত করত। ‘পাঁচনির মুখে লাথি মারা’ অভিব্যক্তিটা এই বাস্তব চিত্র থেকে নেওয়া হয়েছে যে, একটা একগুঁয়ে ষাঁড়কে যখন পাঁচনি দিয়ে খোঁচা দেওয়া হয়, তখন সে সেটার মুখে লাথি মেরে প্রতিরোধ করে আর এর ফলে নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত করে।—প্রেরিত ২৬:১৪; বিচার ৩:৩১.
পাপের জন্য দেওয়া বলি।
অসিদ্ধ দেহের দুর্বলতার কারণে করা অনিচ্ছাকৃত পাপের জন্য যে-বলি উৎসর্গ করা হতো। যে-ব্যক্তির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা হতো, তার সংগতি ও পরিস্থিতি অনুযায়ী, ষাঁড় থেকে শুরু করে ঘুঘু পর্যন্ত, বিভিন্ন ধরনের পশু বা পাখি উৎসর্গ করা হতো।—লেবীয় ৪:২৭, ২৯; ইব্রীয় ১০:৮.
পুনরায় সম্মিলিত করার আচ্ছাদন।
চুক্তির সিন্দুকের আচ্ছাদন, যেটার সামনে মহাযাজক প্রায়শ্চিত্তদিনে পাপের জন্য দেওয়া বলির রক্ত ছিটিয়ে দিতেন। এর ইব্রীয় শব্দ এমন একটা মূল ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “(পাপ) আচ্ছাদন করা” অথবা সম্ভবত “(পাপ) মুছে ফেলা।” এটা পুরোটা সোনা দিয়ে তৈরি ছিল আর এর উপর দু-প্রান্তে দুটো করূব ছিল।—যাত্রা ২৫:১৭-২২; ১বংশা ২৮:১১; ইব্রীয় ৯:৫.
পুনরুত্থান।
মৃত্যু থেকে উত্থিত হওয়া। এর গ্রিক শব্দ আনাস্টাসিস্-এর আক্ষরিক অর্থ হল “ওঠা; উঠে দাঁড়ানো।” বাইবেলে নয়টা পুনরুত্থানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে যিহোবার মাধ্যমে যিশুর পুনরুত্থানও রয়েছে। যদিও অন্যান্য পুনরুত্থান এলিয়, ইলীশায়, যিশু, পিতর ও পৌল করেছিলেন, কিন্তু এই অলৌকিক কাজগুলো স্পষ্টতই ঈশ্বরের ক্ষমতায় করা হয়েছিল। পৃথিবীতে “ধার্মিক ও অধার্মিক উভয় প্রকার লোকের” পুনরুত্থান ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের এক অপরিহার্য অংশ। (প্রেরিত ২৪:১৫) বাইবেলে স্বর্গীয় পুনরুত্থানের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে, যেটাকে “প্রথম পুনরুত্থান” বলা হয়েছে আর যিশুর অভিষিক্ত ভাইয়েরা এই পুনরুত্থানের অংশী।—ফিলি ৩:১১; প্রকা ২০:৫, ৬; যোহন ৫:২৮, ২৯; ১১:২৫.
পেয় নৈবেদ্য।—
দ্রাক্ষারস উৎসর্গ দেখুন।
প্রতিমা; প্রতিমাপূজা।
প্রতিমা হল কোনো মূর্তি, যেকোনো কিছুর প্রতিকৃতি—হোক তা বাস্তব অথবা কল্পনা—যা হয়তো লোকেরা উপাসনায় ব্যবহার করে। প্রতিমাপূজা হল প্রতিমার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রেম, উপাসনা অথবা ভক্তি দেখানো।—গীত ১১৫:৪; প্রেরিত ১৭:১৬; ১করি ১০:১৪.
প্রথম ফল।
শস্য কাটার মরসুমের সবচেয়ে প্রথম ফল; যেকোনো কিছুর প্রথম ফল। যিহোবা চেয়েছিলেন যেন ইজরায়েল জাতি তাদের প্রথম ফল তাঁর কাছে উৎসর্গ করে, হোক তা মানুষের, পশুর কিংবা ভূমির প্রথম ফল। খামিরবিহীন রুটির উৎসবের সময় এবং পঞ্চাশত্তমীর দিনে ইজরায়েলীয়েরা একটা জাতি হিসেবে ঈশ্বরের কাছে তাদের প্রথম ফল উৎসর্গ করত। “প্রথম ফল” অভিব্যক্তিটা রূপকভাবে খ্রিস্টের ক্ষেত্রে এবং তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।—১করি ১৫:২৩, পাদ.; গণনা ১৫:২১; হিতো ৩:৯; প্রকা ১৪:৪.
প্রথমজাত।
মূলত, একজন বাবার সবচেয়ে বড়ো ছেলে। বাইবেলের সময়, পরিবারের মধ্যে প্রথমজাত ছেলের এক সম্মানজনক স্থান ছিল এবং বাবা যখন মারা যেতেন, তখন পরিবারে তাকে মস্তকপদের দায়িত্ব দেওয়া হতো। যিহোবার প্রথমজাত সন্তান হওয়া ছাড়াও যিশু সমস্ত সৃষ্টির প্রথমজাত এবং মৃতদের মধ্য থেকে প্রথমজাত ছিলেন।—আদি ২৫:৩৩; যাত্রা ১১:৫; কল ১:১৫; প্রকা ১:৫.
প্রধান যাজক।
ইব্রীয় শাস্ত্র-এ ব্যবহৃত “মহাযাজক” শব্দের এক বিকল্প শব্দ। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ “প্রধান যাজক” অভিব্যক্তি স্পষ্টতই যাজকবর্গের প্রধান ব্যক্তিদের নির্দেশ করে, সম্ভবত এর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রাক্তন মহাযাজক এবং ২৪টা যাজকদলের প্রধান ব্যক্তিরা।—২বংশা ২৬:২০; ইষ্রা ৭:৫; মথি ২:৪; মার্ক ৮:৩১.
প্রধান স্বর্গদূত।
বাইবেলে “প্রধান স্বর্গদূত” অভিব্যক্তিটা কেবল একবচনে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই এটা নির্দেশ করে যে, কেবল এক জন প্রধান স্বর্গদূত রয়েছেন। বাইবেল প্রধান স্বর্গদূতের নাম প্রকাশ করে, তাঁকে মীখায়েল হিসেবে শনাক্ত করে।—দানি ১২:১; যিহূদা ৯; প্রকা ১২:৭.
প্রবাদ।
বিজ্ঞ উক্তি অথবা ছোটো গল্প, যা কোনো শিক্ষা প্রদান করে অথবা খুবই কম শব্দে অত্যন্ত গভীর সত্য প্রকাশ করে। বাইবেলে বলা প্রবাদগুলো সহজে বোঝা যায় না এমন উক্তির অথবা ধাঁধার আকারে তুলে ধরা হয়েছে। একটা প্রবাদের মধ্যে অর্থপূর্ণ ভাষা অথবা প্রায়ই শব্দালংকার ব্যবহার করে কোনো সত্য তুলে ধরা হয়। কিছু উক্তি উপহাস করার অথবা নির্দিষ্ট লোকদের অবজ্ঞা করার জন্য সাধারণ অভিব্যক্তি হয়ে উঠেছিল।—উপ ১২:৯; ২পিতর ২:২২.
প্রভুর পথ।
এমন এক অভিব্যক্তি, যা শাস্ত্রে রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা এমন কোনো কাজ বা আচরণকে নির্দেশ করে, যা যিহোবার দৃষ্টিতে হয় সঠিক নতুবা ভুল। যারা যিশু খ্রিস্টের অনুসারী হয়েছিল, তাদের ‘প্রভুর পথে’ চলে এমন লোক বলা হয়েছিল অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ অনুসরণ করে তারা এমনভাবে জীবনযাপন করত, যা দেখাত যে, খ্রিস্টের উপর তাদের বিশ্বাস রয়েছে।—প্রেরিত ১৯:৯.
প্রভুর সান্ধ্যভোজ।
এক আক্ষরিক ভোজ, যেখানে খামিরবিহীন রুটি ও দ্রাক্ষারস খাওয়া হয়, যেগুলো যথাক্রমে খ্রিস্টের দেহ ও রক্তকে চিত্রিত করে। সমস্ত খ্রিস্টানকে খ্রিস্টের মৃত্যু স্মরণ করতে হয়।—১করি ১১:২০, ২৩-২৬.
প্রহরী।
এমন একজন ব্যক্তি, যিনি প্রায়ই রাতে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে লোকদের অথবা সম্পত্তি রক্ষা করতেন এবং কোনো বিপদ আসতে দেখলে সংকেত দিতেন। প্রহরীরা প্রায়ই নগরের প্রাচীর ও দুর্গের উপর থাকত, যাতে কেউ নগরের দিকে আসতে থাকলে দূর থেকেই তাকে দেখতে পায়। সৈন্যদের মধ্যেও প্রহরী ছিল।—মথি ২৭:৬৫; ২৮:৪.
প্রাইতোরিয়ার রক্ষী।
রোমীয় সৈন্যদের এক দল, যা রোমীয় সম্রাটের দেহরক্ষী হিসেবে গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়, এই দল এতটাই ক্ষমতাবান এক রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছিল যে, তারা চাইলে একজন সম্রাটকে সমর্থন করতে অথবা তাকে তার পদ থেকে সরাতে পারত।—ফিলি ১:১৩.
প্রাঙ্গণ।
এটা হল আবাসের চারদিকে বেড়া দেওয়া খোলা জায়গা এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরের প্রধান দালানের চারদিকে দেওয়াল দেওয়া খোলা উঠোনগুলোর মধ্যে একটা। হোমবলির বেদি আবাসের প্রাঙ্গণে এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরের ভিতরের প্রাঙ্গণে ছিল। বিভিন্ন বাড়ি ও প্রাসাদের মধ্যেও প্রাঙ্গণ ছিল বলে বাইবেলে উল্লেখ করা আছে।—যাত্রা ৮:১৩; ২৭:৯; ১রাজা ৭:১২; মথি ২৬:৩; মার্ক ১৫:১৬; প্রকা ১১:২.
প্রাচীন; বয়স্ক ব্যক্তি।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, তবে শাস্ত্রে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যার মূলত কোনো সমাজে অথবা জাতির মধ্যে কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব রয়েছে। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে এই শব্দ স্বর্গীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রিক প্রেস্বিটেরস শব্দকে সেইসময় “প্রাচীন” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, যখন এটা এমন ব্যক্তিদের নির্দেশ করে, মণ্ডলীতে যাদের নেতৃত্ব নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।—যাত্রা ৪:২৯; হিতো ৩১:২৩; ১তীম ৫:১৭; প্রকা ৪:৪.
প্রায়শ্চিত্তদিন।
ইজরায়েলীয়দের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র দিন, যে-দিনকে ইয়োম কিপুরও (এটা ইব্রীয় শব্দ ইয়োম হাকিপুরিম থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “ঢেকে দেওয়ার দিন“) বলা হতো আর এটা এথানিম মাসের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হতো। কেবল বছরের এই দিনে মহাযাজক তার নিজের পাপের জন্য, অন্য লেবীয়দের পাপের জন্য এবং লোকদের পাপের জন্য দেওয়া বলিদানের রক্ত উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে আবাসের মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতেন। ওই বলিগুলো যিশুর বলিদানকে নির্দেশ করত, যা এক বার, চিরকালের জন্য পুরোপুরিভাবে মানবজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ ছিল আর এটা লোকদের পুনরায় যিহোবার সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই প্রায়শ্চিত্তদিন পবিত্র সভা ও উপবাসের সময় ছিল আর সেইসঙ্গে এটা বিশ্রামবার অর্থাৎ নিয়মিত কাজ থেকে বিরত থাকার সময় ছিল।—লেবীয় ২৩:২৭, ২৮; প্রেরিত ২৭:৯; কল ১:২০; ইব্রীয় ৯:১২.
প্রেতচর্চা।
এটা এই বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে, মানুষ মারা যাওয়ার পর তাদের আত্মা বেঁচে থাকে এবং তারা জীবিত লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং যোগাযোগ করেও থাকে। তারা বিশেষভাবে এমন কোনো ব্যক্তির (মাধ্যম) দ্বারা তা করে, যে নির্দিষ্টভাবে তাদের প্রভাবের অধীনে রয়েছে। এর গ্রিক শব্দ হচ্ছে ফারমাকিয়া, যেটার আক্ষরিক অর্থ “নেশাকর ওষুধ গ্রহণ করা।” এই শব্দ প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ে, কারণ প্রাচীন কালে মন্ত্র উচ্চারণ করে প্রেতশক্তিকে আহ্বান করার জন্য নেশাকর ওষুধ ব্যবহার করা হতো।—গালা ৫:২০; প্রকা ২১:৮.
প্রেরিত।
এই শব্দের মৌলিক ধারণা হল “কাউকে পাঠানো” আর এটা যিশুর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের অন্যদের সেবা করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই শব্দটা সেই শিষ্যদের প্রতি ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের যিশু ১২ জন অভিষিক্ত প্রতিনিধির একটা দল হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে বাছাই করেছিলেন।—মার্ক ৩:১৪; প্রেরিত ১৪:১৪.
ফ
ফরীশী।
প্রথম শতাব্দীতে যিহুদি ধর্মের এক সুপরিচিত ধর্মীয় দল। যদিও তারা যাজকীয় বংশধর ছিল না, তবুও তারা ব্যবস্থার প্রতিটা বিষয় কঠোরভাবে পালন করত আর তারা মৌখিক পরম্পরাগত রীতিনীতিকেও একই গুরুত্ব দিত। (মথি ২৩:২৩) তারা গ্রিক সংস্কৃতির যেকোনো প্রভাবের বিরোধিতা করত আর তারা ব্যবস্থা এবং পরম্পরাগত রীতিনীতির ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ছিল বলে লোকদের উপর কর্তৃত্ব করত। (মথি ২৩:২-৬) তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকী মহাসভার সদস্য ছিল। বিশ্রামবারপালন, পরম্পরাগত রীতিনীতি ও সেইসঙ্গে পাপী এবং কর আদায়কারীদের সঙ্গে মেলামেশার বিষয়ে তারা প্রায়ই যিশুর বিরোধিতা করত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খ্রিস্টান হয়েছিল, যাদের মধ্যে তার্ষের শৌলও ছিলেন।—মথি ৯:১১; ১২:১৪; মার্ক ৭:৫; লূক ৬:২; প্রেরিত ২৬:৫.
ফরৌণ।
মিশরের রাজাদের একটা উপাধি। বাইবেলে পাঁচ জন ফরৌণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে (শীশক, সো, তির্হকঃ, নখো ও হফ্রা) কিন্তু, বাকিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এদের মধ্যে সেই ফরৌণেরাও রয়েছেন, যাদের বিষয়ে অব্রাহাম, মোশি ও যোষেফের বিবরণে বলা হয়েছে।—যাত্রা ১৫:৪; রোমীয় ৯:১৭.
ব
বলি।
ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ প্রকাশ করার, দোষ স্বীকার করার এবং তাঁর সঙ্গে পুনরায় উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাঁর কাছে করা উৎসর্গ। হেবলের সময় থেকে শুরু করে মানুষ পশুবলি-সহ বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাকৃত বলি উৎসর্গ করত। কিন্তু, মোশির ব্যবস্থা চুক্তি আসার পর সেগুলো অবশ্যপালনীয় বিষয় হয়ে উঠেছিল। একেবারে নিখুঁত বলি হিসেবে যিশু তাঁর নিজের জীবন দেওয়ার পর থেকে পশুবলির আর দরকার ছিল না। তা সত্ত্বেও, খ্রিস্টানেরা এই অর্থে বলিদান করে চলে যে, তারা এমন কাজ করে, যেটাতে ঈশ্বর খুশি হন।—আদি ৪:৪; ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬; ১যোহন ৪:১০.
বাপ্তিস্ম; বাপ্তিস্ম দেওয়া।
এই ক্রিয়া পদের অর্থ “নিমজ্জিত করা” অথবা জলে ডোবানো। যিশু বলেছিলেন, তাঁর অনুসারী হওয়ার জন্য বাপ্তিস্ম নেওয়া আবশ্যক। এ ছাড়া, শাস্ত্রে অন্যান্য বাপ্তিস্মের মধ্যে যোহনের বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হওয়ার, পবিত্র শক্তির মাধ্যমে এবং আগুনে বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়েও উল্লেখ করা আছে।—মথি ৩:১১, ১৬; ২৮:১৯; যোহন ৩:২৩; ১পিতর ৩:২১.
বাল।
একজন কনানীয় দেবতা। মনে করা হতো যে, সে আকাশের মালিক এবং সে বৃষ্টি ও উর্বরতা দান করে। এ ছাড়া, স্থানীয় ছোটোখাটো দেবতাদেরও “বাল” বলা হতো। এর ইব্রীয় শব্দের অর্থ “মালিক; প্রভু।”—১রাজা ১৮:২১; রোমীয় ১১:৪.
বিচারদিন।
নির্দিষ্ট একটা দিন অথবা সময়কাল, যখন নির্দিষ্ট দল, জাতি কিংবা সাধারণ মানবজাতিকে ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে। এটা হয়তো সেই সময়, যখন মৃত্যুর যোগ্য বলে যাদের বিচার করা হয়েছে, তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। অথবা কারো কারো জন্য সেই বিচার হয়তো রক্ষা পাওয়ার এবং অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ করে দেবে। যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর প্রেরিতেরা ভবিষ্যতের এমন এক ‘বিচারদিনের’ বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যে-দিনের সঙ্গে কেবল জীবিতেরাই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে অতীতে মারা গিয়েছে এমন ব্যক্তিরাও জড়িত রয়েছে।—মথি ১২:৩৬.
বিচারাসন।
সাধারণত খোলা জায়গায় এক উঁচু প্ল্যাটফর্ম, যেখানে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি থাকত। এই আসনের মধ্যে বসে কর্মকর্তারা জনতার উদ্দেশে কথা বলতেন এবং তাদের রায় জানাতেন। ‘ঈশ্বরের বিচারাসন’ এবং ‘খ্রিস্টের বিচারাসন’ অভিব্যক্তিগুলো মানবজাতির বিচারের জন্য যিহোবার ব্যবস্থার এক প্রতীক।—রোমীয় ১৪:১০; ২করি ৫:১০; যোহন ১৯:১৩.
বিধিব্যবস্থা; বিধিব্যবস্থাগুলো বা বিভিন্ন বিধিব্যবস্থা।
গ্রিক শব্দ আইয়ন থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। এটা বিদ্যমান পরিস্থিতি অথবা বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে, যেগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়কাল অথবা যুগকে অন্য সময়কাল অথবা যুগ থেকে পৃথক করে। বাইবেল ‘বর্তমান বিধিব্যবস্থা’ সম্বন্ধে বলে, যেটা জগতে বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং জগতের জীবনধারাকে নির্দেশ করে। (২তীম ৪:১০) ব্যবস্থা চুক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর এক নতুন বিধিব্যবস্থার সূচনা করেন, যেটাকে ইজরায়েলীয় অথবা যিহুদি যুগও বলা যেতে পারে। যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে ঈশ্বর এক ভিন্ন বিধিব্যবস্থার সূচনা করেন, যেটার সঙ্গে মূলত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলী জড়িত। এর মাধ্যমে এক নতুন যুগের শুরু হয়, যেটার দ্বারা সেই বাস্তবতাগুলো পরিপূর্ণ হতে থাকে, যেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা চুক্তির মধ্যে বলা হয়েছিল। যখন এই অভিব্যক্তি বহুবচন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তখন এটা অতীত অথবা ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিধিব্যবস্থা অথবা পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে।—মথি ২৪:৩; মার্ক ৪:১৯; রোমীয় ১২:২; ১করি ১০:১১.
বিধিব্যবস্থার শেষ সময়।
যে-সময়কাল শয়তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিধিব্যবস্থার বা বিভিন্ন পরিস্থিতির শেষের দিকে নিয়ে যায়। এই সময়কাল এবং খ্রিস্টের উপস্থিতির সময়কাল একইসঙ্গে চলছে। যিশুর নির্দেশনায় স্বর্গদূতেরা “ধার্মিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দুষ্ট ব্যক্তিদের আলাদা করবেন” এবং সেই দুষ্ট ব্যক্তিদের ধ্বংস করে দেবেন। (মথি ১৩:৪০-৪২, ৪৯) যিশুর শিষ্যেরা সেই “শেষ সময়ের” বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। (মথি ২৪:৩) স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে, তিনি তাঁর অনুসারীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সেই সময় পর্যন্ত তিনি তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।—মথি ২৮:২০.
বিশ্রামবার।
এটা এক ইব্রীয় শব্দ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “বিশ্রাম নেওয়া; বিরত থাকা।” এটা যিহুদি সপ্তাহের সপ্তম দিন (শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে শনিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত)। বছরের অন্যান্য কিছু উৎসবের দিনকে বিশ্রামবার ও সেইসঙ্গে সপ্তম ও পঞ্চাশতম বছরকে বিশ্রাম বছর বলা হতো। বিশ্রামবারে কেবল পবিত্র স্থানে যাজকীয় সেবা ছাড়া আর কোনো কাজ করা হতো না। বিশ্রাম বছরগুলোতে জমিতে কোনো চাষ করা যেত না আর সহইব্রীয়দের ঋণ পরিশোধ করার জন্য চাপ দেওয়া যেত না। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী বিশ্রামবারের জন্য দেওয়া বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলা কঠিন ছিল না। কিন্তু, ধর্মীয় নেতারা ধীরে ধীরে সেগুলোর সঙ্গে আরও নিয়ম যুক্ত করেছিল আর এর ফলে যিশুর দিন পর্যন্ত এগুলো পালন করা লোকদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল।—যাত্রা ২০:৮; লেবীয় ২৫:৪; লূক ১৩:১৪-১৬; কল ২:১৬.
বেদি।
মাটি, ছোটো পাথর, পাথরের একটা খণ্ড অথবা ধাতু দ্বারা মোড়ানো কাঠ দিয়ে তৈরি এক উঁচু কাঠামো অথবা মঞ্চ, যেটার উপর উপাসনার জন্য বলি অথবা ধূপ উৎসর্গ করা হতো। আবাস ও মন্দিরের প্রথম কামরায় ধূপ উৎসর্গ করার জন্য একটা ছোটো “স্বর্ণময় বেদি” ছিল। এটা সোনায় মোড়ানো কাঠের তৈরি ছিল। হোমবলি উৎসর্গ করার জন্য একটা বড়ো “পিত্তলময় বেদি” বাইরে প্রাঙ্গণে রাখা হতো। মিথ্যা উপাসনায়ও বেদি ব্যবহার করা হতো।—যাত্রা ৩৯:৩৮, ৩৯; ১রাজা ৬:২০; মথি ৫:২৩, ২৪; লূক ১:১১; প্রেরিত ১৭:২৩.
বেদির শিং।
কিছু কিছু বেদির চার কোণায় শিঙের মতো খাড়া অংশ ছিল, যেগুলোর মুখ বাইরের দিকে থাকত।—লেবীয় ৮:১৫; ১রাজা ২:২৮; প্রকা ৯:১৩.
বেল্সবূব।
একটা উপাধি, যা মন্দ স্বর্গদূতদের অধ্যক্ষ বা রাজা, শয়তানকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা সম্ভবত বাল্-সবূবের এক পরিবর্তিত নাম। ইক্রোণে বসবাসরত পলেষ্টীয়েরা বাল্-সবূব নামে এই বালের উপাসনা করত।—২রাজা ১:৩; মথি ১২:২৪.
বেশ্যা।
এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বিবাহবন্ধনের বাইরে যৌনসম্পর্কে রত হয়, বিশেষভাবে টাকার জন্য। (“বেশ্যা” শব্দের গ্রিক শব্দ পরনি এমন একটা মূল শব্দ থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “বিক্রি করা।”) এই শব্দ সাধারণত একজন মহিলাকে বোঝায়, যদিও বাইবেলে পুরুষ বেশ্যা সম্বন্ধেও উল্লেখ করা হয়েছে। মোশির ব্যবস্থায় বেশ্যাবৃত্তিকে নিন্দা করা হয়েছে আর একজন বেশ্যার বেতন যিহোবার পবিত্র স্থানে দান হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। অন্যদিকে, পৌত্তলিক ধর্মগুলোর মন্দিরে বেশ্যাদের রাখা হতো, কারণ তারা আয়ের উৎস ছিল। (দ্বিতীয় ২৩:১৭, ১৮; ১রাজা ১৪:২৪) এ ছাড়া, এমন লোক, জাতি অথবা সংগঠনকে বোঝানোর জন্য বাইবেলে এই শব্দটা রূপকভাবেও ব্যবহার করা হয়েছে, যারা নিজেদের ঈশ্বরের উপাসক বলে দাবি করার পাশাপাশি কোনো-না-কোনো ধরনের প্রতিমাপূজায় রত ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, “মহতী বাবিল” হিসেবে অভিহিত যৌথ ধর্মীয় সংগঠনকে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বেশ্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কারণ সে ক্ষমতা ও বস্তুগত লাভের জন্য এই জগতের শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে।—প্রকা ১৭:১-৫; ১৮:৩; ১বংশা ৫:২৫.
ব্যবস্থা।
এটা হয়তো মোশির ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যা খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালে সীনয় প্রান্তরে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের দিয়েছিলেন। বাইবেলের প্রথম পাঁচটা বইকে প্রায়ই ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। (যিহো ২৩:৬; লূক ২৪:৪৪; মথি ৭:১২; গালা ৩:২৪) এ ছাড়া, এটা হয়তো মোশির ব্যবস্থার আলাদা আলাদা আইনকে অথবা আইনের নীতিকেও নির্দেশ করে।—যাত্রা ১৮:২০; দ্বিতীয় ৪:৮.
ব্যভিচার।
ভ
ভবিষ্যদ্বাণী।
ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া বার্তা, হোক তা তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করা অথবা ঘোষণা করা। ভবিষ্যদ্বাণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো নৈতিক শিক্ষা, তাঁর কোনো আজ্ঞা অথবা বিচার জানানো কিংবা ভবিষ্যতের ঘটনা সম্বন্ধে ঘোষণা করা।—মথি ১৩:১৪; ২পিতর ১:২০, ২১.
ম
মঙ্গলভাব।
উত্তম হওয়ার গুণ বা অবস্থা; নৈতিকভাবে সঠিক এমন কাজ করা; সদ্গুণ। এটা একটা ইতিবাচক গুণ আর এটা অন্যদের প্রতি করা ভালো ও উপকারজনক কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
মণ্ডলী।
এই শব্দটা কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের অথবা কাজের জন্য একত্রে মিলিত হওয়া লোকদের একটা দলকে বোঝায়। ইব্রীয় শাস্ত্র-এ এটা সাধারণত ইজরায়েল জাতিকে নির্দেশ করে। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ যদিও এটা আলাদা আলাদা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে নির্দেশ করে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এটা সমষ্টিগতভাবে পুরো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে বোঝায়।—১রাজা ৮:২২; প্রেরিত ৯:৩১; রোমীয় ১৬:৫.
মধ্যস্থতাকারী।
যিনি দুই পক্ষকে পুনরায় সম্মিলিত করার জন্য মধ্যস্থতা করেন। শাস্ত্রে মোশি ও যিশু যথাক্রমে ব্যবস্থা চুক্তি এবং নতুন চুক্তির মধ্যস্থতাকারী।—গালা ৩:১৯; ১তীম ২:৫; ইব্রীয় ১২:২৪.
মনুষ্যপুত্র।
সুসমাচারের বইগুলোতে এই শব্দ প্রায় ৮০ বার পাওয়া যায়। এটা যিশু খ্রিস্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যা দেখায়, তিনি এমন কোনো স্বর্গদূত ছিলেন না, যিনি পৃথিবীতে আসার জন্য মানবদেহ ধারণ করেছেন, বরং তিনি মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন। এই শব্দ এও দেখায় যে, যিশু দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন। ইব্রীয় শাস্ত্র-এ এই শব্দ যিহিষ্কেল ও দানিয়েলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, এটা দেখানোর জন্য যে, এই মরণশীল মানুষেরা, যারা বার্তা প্রচার করে, তাদের আর ঈশ্বরের মধ্যে কত পার্থক্য রয়েছে, যিনি তাদের বার্তার উৎস।—যিহি ৩:১৭; দানি ৮:১৭; মথি ১৯:২৮; ২০:২৮.
মন্দ স্বর্গদূত।
দুষ্ট অদৃশ্য প্রাণী, যাদের অতিমানবীয় ক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু আদিপুস্তক ৬:২ পদে তাদের ’ঈশ্বরের পুত্ত্র’ এবং যিহূদা ৬ পদে তাদের ‘স্বর্গদূত’ বলা হয়েছে, তাই এটা দেখায়, তাদের দুষ্ট হিসেবে তৈরি করা হয়নি; বরং তারা এমন স্বর্গদূত ছিল, যারা নোহের দিনে ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার এবং যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তানের বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ঈশ্বরের শত্রু করে তুলেছিল।—দ্বিতীয় ৩২:১৭; লূক ৮:৩০; প্রেরিত ১৬:১৬; যাকোব ২:১৯.
মন্দির।
জেরুসালেমে নির্মিত এক পাকা দালান, যেটা ইজরায়েলীয়দের উপাসনার কেন্দ্রস্থল ছিল। এটা বহনকারী আবাসের পরিবর্তে নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথম মন্দিরটা শলোমন নির্মাণ করেছিলেন আর বাবিলীয়েরা সেটা ধ্বংস করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় মন্দিরটা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর সরুব্বাবিল নির্মাণ করেছিলেন আর পরবর্তী সময়ে মহান হেরোদ সেটা পুনরায় নির্মাণ করেছিলেন। কখনো কখনো এটাকে ‘গৃহ’ বলা হয়েছে।—মথি ২১:১৩; লূক ১১:৫১; ১বংশা ২৯:১; ২বংশা ২:৪; মথি ২৪:১.
মন্দিরের উৎসর্গীকরণ উৎসব।
অ্যান্টিওকাস এপেফানিস মন্দিরকে কলুষিত করার পর যে-শুচিকরণ হয়েছিল, সেটার বার্ষিক স্মরণার্থ দিন। এই উদ্যাপন কিসলেব মাসের ২৫ তারিখে শুরু হতো এবং আট দিন ধরে চলত।—যোহন ১০:২২.
মশীহ।
এমন এক শব্দ, যা “অভিষিক্ত” বা “অভিষিক্ত ব্যক্তি” অভিব্যক্তির জন্য যে-ইব্রীয় শব্দ রয়েছে, সেখান থেকে এসেছে। এর সমার্থশব্দ হল “খ্রিস্ট,” যা গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে।—দানি ৯:২৫; যোহন ১:৪১.
মহাক্লেশ।
“ক্লেশ”-এর গ্রিক শব্দ বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপের কারণে ঘটা দুর্দশা অথবা কষ্টের ধারণা দেয়। যিশু বলেছিলেন, জেরুসালেমের উপর এমন এক “মহাক্লেশ” আসবে, যা আগে কখনো ঘটেনি। এ ছাড়া, তিনি এও বলেছিলেন, ভবিষ্যতে যখন তিনি ‘মহাগৌরবের সঙ্গে আসবেন,’ তখন সমস্ত মানবজাতির উপর এইরকম মহাক্লেশই আসবে। (মথি ২৪:২১, ২৯-৩১) পৌল এই ক্লেশকে সেই লোকদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ন্যায্য কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, “যারা ঈশ্বরকে জানে না এবং যারা” যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধীয় “সুসমাচার অনুসারে চলে না।” প্রকাশিত বাক্য ১৯ অধ্যায় দেখায়, যিশু ‘সেই হিংস্র পশু এবং পৃথিবীর রাজাদের এবং তাদের সৈন্যদের’ বিরুদ্ধে স্বর্গীয়বাহিনীকে পরিচালনা দিচ্ছেন। (২থিষল ১:৬-৮; প্রকা ১৯:১১-২১) বাইবেল দেখায়, “এক বিরাট জনতা” সেই ক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকা ৭:৯, ১৪)—হর্মাগিদোন দেখুন।
মহাদয়া।
এর গ্রিক শব্দের মূল অর্থ হল এমন কিছু, যা প্রীতিজনক ও মনোহর। এই শব্দ প্রায়ই সদয় দান অথবা সদয়ভাবে দেওয়াকে বোঝায়। যখন ঈশ্বরের মহাদয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তখন এই শব্দ এমন দানকে বোঝায়, যা ঈশ্বর উদারভাবে দিয়ে থাকেন এবং প্রতিদানে কোনো কিছু চান না। তাই, এই শব্দের মাধ্যমে বোঝা যায়, ঈশ্বর মানুষকে যা দেন, তা প্রচুররূপে দিয়ে থাকেন আর তাদের উদারভাবে প্রেম করেন এবং দয়া দেখান। এর গ্রিক শব্দকে “অনুগ্রহ” এবং “সদয় দান” হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে। মহাদয়া অর্জনও করা যায় না, কিংবা অধিকার হিসেবে দাবিও করা যায় না। এটা কেবল যিনি মহাদয়া দেখান, তার উদারতার কারণেই লাভ করা যায়।—২করি ৬:১; ইফি ১:৭.
মহাপবিত্র স্থান।
আবাস ও মন্দিরের একেবারে ভিতরের অংশ, যেখানে চুক্তির সিন্দুক রাখা হতো; মোশির ব্যবস্থা অনুসারে কেবল মহাযাজকই মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারতেন আর তিনি কেবল বছরে এক বার প্রায়শ্চিত্তদিনে সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন।—যাত্রা ২৬:৩৩; লেবীয় ১৬:২, ১৭; ১রাজা ৬:১৬; ইব্রীয় ৯:৩.
মহামারি।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এমন যেকোনো সংক্রামক রোগ, যা বহু এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অনেক লোকের মৃত্যু ঘটাতে পারে।—লূক ২১:১১.
মহাযাজক।
মোশির ব্যবস্থার অধীনে সবচেয়ে প্রধান যাজক, যিনি ঈশ্বরের সামনে লোকদের প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং অন্যান্য যাজকদের তত্ত্বাবধান করতেন। একমাত্র তারই সেই মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করার অনুমতি ছিল, যেটা আবাসের এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরের একেবারে ভিতরের অংশ ছিল। তিনি কেবল বার্ষিক প্রায়শ্চিত্তদিনে সেখানে প্রবেশ করতেন। “মহাযাজক” অভিব্যক্তিটা যিশু খ্রিস্টের প্রতিও প্রযোজ্য।—লেবীয় ১৬:২, ১৭; ২১:১০; মথি ২৬:৩; ইব্রীয় ৪:১৪.
মহাসভা।
জেরুসালেমে যিহুদি উচ্চ আদালত। যিশুর দিনে এটা ৭১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল, যাদের মধ্যে ছিল মহাযাজক, আগে মহাযাজক ছিল এমন ব্যক্তিরা, মহাযাজকের পরিবারের সদস্যেরা, যিহুদি নেতারা, বংশ ও পরিবারের মস্তকেরা ও সেইসঙ্গে অধ্যাপকেরা।—মার্ক ১৫:১; প্রেরিত ৫:৩৪; ২৩:১, ৬.
মাইল।
দূরত্বের এই পরিমাপ, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এর মূল পাঠ্যাংশে কেবল এক বার মথি ৫:৪১ পদে এসেছে। এটা সম্ভবত রোমীয় মাইলকে নির্দেশ করে, যা ১,৪৭৯.৫ মিটারের (৪,৮৫৪ ফুট) সমান ছিল।
মাদীয় [লোক]।
যেফতের ছেলে মাদয়ের বংশধর থেকে আসা লোক; তারা পর্বতময় ইরানের মালভূমিতে বসতি স্থাপন করেছিল, যা মাদীয় দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। মাদীয়েরা ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর সময় জেরুসালেমে উপস্থিত ছিল।—প্রেরিত ২:৯.
মান্না।
প্রান্তরে চল্লিশ বছরের সময়কালে ইজরায়েলীয়দের প্রধান খাদ্য। যিহোবা এই খাদ্য জুগিয়েছিলেন। বিশ্রামবার ছাড়া প্রতিদিন সকালে এটা অলৌকিকভাবে শিশিরের চাদরের নীচে ভূমিতে পড়ে থাকত। ইজরায়েলীয়েরা যখন প্রথম এটা দেখেছিল, তখন তারা বলেছিল, “উহা কি?” অথবা ইব্রীয় ভাষায় “মান হু?” (যাত্রা ১৬:১৩-১৫, ৩৫) যিশু মান্না শব্দটা রূপক অর্থেও ব্যবহার করেছিলেন।—যোহন ৬:৪৯, ৫০.
মায়াবী।
এমন একজন ব্যক্তি, যে মন্দ স্বর্গদূতদের কাছ থেকে পাওয়া শক্তি ব্যবহার করে বলে মনে করা হয়।
মিনা।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এক মিনা ১০০ ড্রাকমার সমান ছিল। এটার ওজন ছিল ৩৪০ গ্রাম।—লূক ১৯:১৩.
মুক্তির মূল্য।
বন্দিত্ব, শাস্তি, কষ্ট, পাপ অথবা এমনকী বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দেওয়া মূল্য। এই মূল্য জোগানোর জন্য সবসময়ই যে টাকাপয়সা দিতে হতো, এমন নয়। (যিশা ৪৩:৩) বিভিন্নরকম পরিস্থিতিতে মুক্তির মূল্য দিতে হতো। উদাহরণ স্বরূপ, ইজরায়েলে সমস্ত প্রথমজাত ছেলে অথবা পুংপশু যিহোবার ছিল আর যিহোবার সেবায় বিশেষ ব্যবহার থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য মুক্তির মূল্য দিতে হতো। (গণনা ৩:৪৫, ৪৬; ১৮:১৫, ১৬) সাবধানে রাখা হয়নি এমন কোনো বিপদজনক ষাঁড় যদি কাউকে হত্যা করত, তা হলে সেই ষাঁড়ের মালিকের উপর মুক্তির মূল্য ধার্য করা হতো, যাতে তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেন। (যাত্রা ২১:২৯, ৩০) কিন্তু, ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে এমন একজন খুনির মুক্তির মূল্য গ্রহণযোগ্য ছিল না। (গণনা ৩৫:৩১) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বাইবেলে সেই মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, যা খ্রিস্ট অবাধ্য মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর মাধ্যমে প্রদান করেছেন।—গীত ৪৯:৭, ৮; মথি ২০:২৮; ইফি ১:৭.
মুখ্য প্রতিনিধি।
এর গ্রিক শব্দের অর্থ মূলত “মুখ্য নেতা।” এটা বিশ্বস্ত মানুষদের পাপের মারাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত করার এবং তাদের অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করার বিষয়ে যিশু খ্রিস্টের এক অপরিহার্য ভূমিকাকে নির্দেশ করে।—প্রেরিত ৩:১৫; ৫:৩১; ইব্রীয় ২:১০; ১২:২.
মোলক।
অম্মোনীয়দের একজন দেবতা; সম্ভবত একেই মল্কম এবং মিল্কম বলা হতো।—প্রেরিত ৭:৪৩.
মোশির ব্যবস্থা।
ম্যাসিডোনিয়া।
গ্রিসের উত্তরের এক অঞ্চল, যে-অঞ্চল মহান আলেকজান্ডারের রাজত্বের অধীনে প্রাধান্য লাভ করেছিল এবং রোমীয়দের দ্বারা পরাজিত হওয়ার আগে পর্যন্ত স্বাধীন ছিল। প্রেরিত পৌল যখন প্রথম বার ইউরোপে গিয়েছিলেন, তখন ম্যাসিডোনিয়া এক রোমীয় প্রদেশ ছিল। পৌল তিন বার সেই এলাকায় গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৬:৯.
য
যাকোব।
ইস্হাক ও রিবিকার একজন ছেলে। পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর তাকে ইজরায়েল নাম দিয়েছিলেন আর তিনি ইজরায়েলের লোকদের (যাদের ইজরায়েলীয় এবং পরে যিহুদি বলে ডাকা হতো) কুলপতি হয়ে উঠেছিলেন। তার ১২ জন ছেলে এবং তাদের বংশধরদের নিয়ে ইজরায়েল জাতির ১২ বংশ গঠিত হয়। পরেও ইজরায়েল জাতি অথবা লোকদের জন্য যাকোব নামটা ব্যবহার করা হতো।—আদি ৩২:২৮; মথি ২২:৩২.
যাজক।
এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সেই লোকদের সামনে ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করতেন, যাদের তিনি সেবা করতেন ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর এবং তাঁর আইনকানুন সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন। এ ছাড়া, যাজকেরা ঈশ্বরের সামনে লোকদের প্রতিনিধিত্ব করতেন, বলি উৎসর্গ করতেন এবং লোকদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইতেন এবং মিনতি করতেন। মোশির ব্যবস্থা পাওয়ার আগে পরিবারের মস্তক তার পরিবারের জন্য যাজক হিসেবে কাজ করতেন। মোশির ব্যবস্থা অনুসারে লেবির বংশধর থেকে আসা হারোণের পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা যাজকগোষ্ঠী হয়েছিল। বাকি লেবীয় পুরুষেরা তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। নতুন চুক্তি প্রবর্তন করার পর, ‘ঈশ্বরের ইজরায়েল’ যাজকদের এক জাতি হয়ে ওঠে, যে-জাতির মহাযাজক হলেন যিশু খ্রিস্ট।—গালা ৬:১৬; যাত্রা ২৮:৪১; ইব্রীয় ৯:২৪; প্রকা ৫:১০.
যাতনাদণ্ড।
এটা গ্রিক স্টাউরোস্ শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, যেটার অর্থ একটা খাড়া দণ্ড অথবা খুঁটি। যিশুকে এইরকম একটা দণ্ডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এইরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, এই গ্রিক শব্দের অর্থ ক্রুশ। আসলে, খ্রিস্ট আসার শত শত বছর আগে পৌত্তলিক ধর্মের লোকেরা এক ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে ক্রুশ ব্যবহার করত। “যাতনাদণ্ড“ শব্দটা মূল শব্দের পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে কারণ যিশুও তাঁর অনুসারীরা যে-যাতনা, কষ্ট ও লজ্জা ভোগ করবে, সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য স্টাউরোস্ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। (মথি ১৬:২৪; ইব্রীয় ১২:২)—দণ্ড দেখুন।
যিহুদি।
ইজরায়েলের দশ বংশের রাজ্যের পতনের পর যিহূদা বংশের একজন ব্যক্তির জন্য ব্যবহৃত অভিব্যক্তি। (২রাজা ১৬:৬) বাবিলের বন্দিত্বের পর, ইজরায়েলে ফিরে আসা বিভিন্ন বংশের ইজরায়েলীয়দের প্রতি এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হতো। (ইষ্রা ৪:১২) পরবর্তী সময়ে, অন্যান্য ন-যিহুদি জাতি থেকে ইজরায়েলীয়দের পৃথক করার জন্য এই অভিব্যক্তি পুরো পৃথিবীতে ব্যবহার করা হতো। (ইষ্টের ৩:৬) প্রেরিত পৌলও সেই সময় রূপকভাবে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি এই বিষয়ে যুক্তি করেছিলেন যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে জাতীয়তার কোনো গুরুত্ব নেই।—রোমীয় ২:২৮, ২৯; গালা ৩:২৮.
যিহূদা।
যাকোবের চতুর্থ ছেলে আর তার মা ছিলেন লেয়া। মৃত্যুশয্যায় ভবিষ্যদ্বাণী বলার সময়, যাকোব বলেছিলেন যে, যিহূদার বংশধারা থেকে এক মহান ও চিরস্থায়ী শাসক আসবে। মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে থাকার সময় যিশু যিহূদার বংশ থেকে এসেছিলেন। যিহূদা নামটা বংশকেও নির্দেশ করে আর পরবর্তী সময়ে যিহূদার নামে রাজ্যের নাম রাখা হয়।—আদি ২৯:৩৫; ৪৯:১০; ইব্রীয় ৭:১৪.
যিহোবা।
পবিত্র বাইবেল—খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র—নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে যিহোবা নামটা মোট ২৩৭ বার ব্যবহার করা হয়েছে। ঈশ্বরের নাম অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত এই প্রমাণগুলোর উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে:
যিশু এবং তাঁর প্রেরিতদের দিনে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে-অনুলিপিগুলো ব্যবহার করা হতো, সেগুলোর মধ্যে টেট্রাগ্র্যামাটোন (অর্থাৎ চারটে ইব্রীয় ব্যঞ্জনবর্ণ יהוה দ্বারা প্রকাশিত ঈশ্বরের নাম) ছিল।
যিশু এবং তাঁর প্রেরিতদের দিনে, ইব্রীয় শাস্ত্র-এর গ্রিক অনুবাদগুলোতেও টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র স্বয়ং জানায় যে, যিশু প্রায়ই ঈশ্বরের নাম উল্লেখ করতেন এবং তা অন্যদের জানাতেন।—যোহন ১৭:৬, ১১, ১২, ২৬.
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র যেহেতু ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় পবিত্র ইব্রীয় শাস্ত্র-এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, তাই গ্রিক শাস্ত্র থেকে হঠাৎ করে যিহোবার নাম বাদ দেওয়া হয়তো সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না।
ঈশ্বরের নাম খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১, ৩, ৪, ৬.
প্রথম শতাব্দীর যিহুদি লেখাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, যিহুদি খ্রিস্টানেরা তাদের লেখাগুলোতে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করত।
কোনো কোনো বাইবেল পণ্ডিত এই বিষয়টা স্বীকার করেছে যে, সম্ভবত খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ ইব্রীয় শাস্ত্র-এর যে-উদ্ধৃতিগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে ঈশ্বরের নাম এসেছে।
এক-শোরও বেশি ভাষার বাইবেল অনুবাদের খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম রয়েছে।
নিঃসন্দেহে, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ ঈশ্বরের নাম, যিহোবা পুনরায় দেওয়ার এক স্পষ্ট ভিত্তি রয়েছে। নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের অনুবাদকেরা ঠিক তা-ই করেছে। ঈশ্বরের নামের প্রতি তাদের গভীর সম্মান রয়েছে এবং মূল পাঠ্যাংশে রয়েছে এমন যেকোনো কিছু বাদ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের গঠনমূলক ভয় রয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮, ১৯.
যুদ্ধসজ্জা।
সৈন্যেরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য যে-বিষয়গুলো পরিধান করত, যেমন শিরস্ত্রাণ, ছোটো ছোটো ধাতব টুকরো দিয়ে তৈরি বর্ম, কটিবন্ধনী, হাঁটুর নীচের অংশের বর্ম ও ঢাল।—১শমূ ৩১:৯; ইফি ৬:১৩-১৭.
যৌন অনৈতিকতা।
গ্রিক পরনিয়া থেকে এসেছে, যে-শব্দ সমস্ত ধরনের অবৈধ যৌনসম্পর্ককে বোঝায়। এর অন্তর্ভুক্ত ব্যভিচার, বেশ্যাবৃত্তি, অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক, সমকামিতা ও পশুগমন। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে “মহতী বাবিল” হিসেবে অভিহিত ধর্মীয় বেশ্যার জন্য এই শব্দ রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ ক্ষমতা ও বস্তুগত লাভের জন্য সে এই জগতের শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। (প্রকা ১৪:৮; ১৭:২; ১৮:৩; মথি ৫:৩২; প্রেরিত ১৫:২৯; গালা ৫:১৯)—বেশ্যা দেখুন।
র
রথ।
দুই চাকার ঘোড়ায়টানা গাড়ি, যেটা যাতায়াতের জন্য এবং যুদ্ধে ব্যবহার করা হতো।—যাত্রা ১৪:২৩; বিচার ৪:১৩; প্রেরিত ৮:২৮; প্রকা ৯:৯.
রাজদণ্ড।
লাঠি বা দণ্ড, যা একজন শাসকের হাতে থাকত আর এটা তার রাজত্ব করার অধিকারের প্রতীক ছিল।—আদি ৪৯:১০; ইব্রীয় ১:৮.
ল
লঙ্ঘন; অবাধ্যতা; অপরাধ; পাপ।
নিয়ম অথবা আইন ভাঙা। এ ছাড়া, বাইবেলে এটাকে “পাপ” বলা হয়েছে।—গীত ৫১:৩; রোমীয় ৫:১৪.
লেপটন।
যে-সময়কালে খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র লেখা হয়েছিল, তখনকার সবচেয়ে ছোটো যিহুদি মুদ্রা, যা তামা অথবা ব্রোঞ্জের তৈরি ছিল। “লেপটন” শব্দের বহুবচন হল “লেপ্টা।”—মার্ক ১২:৪২, পাদ.; লূক ২১:২, পাদ.।
লেবি; লেবীয়।
যাকোবের তৃতীয় ছেলে আর তার মা হলেন লেয়া; সেইসঙ্গে লেবির বংশধরের নাম। তার তিন জন ছেলের কাছ থেকে তিনটে প্রধান দল গঠিত হয়েছিল, যা লেবীয় যাজকগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ছিল। কখনো কখনো “লেবীয়” শব্দটা পুরো বংশের প্রতি প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু সাধারণত হারোণের যাজক পরিবার এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। লেবির বংশধর প্রতিজ্ঞাত দেশে ভূমির কোনো অংশ লাভ করেনি, তবে অন্যান্য বংশকে ভাগ করে দেওয়া এলাকার মধ্যে তাদের ৪৮টা নগর দেওয়া হয়েছিল।—দ্বিতীয় ১০:৮; ১বংশা ৬:১; ইব্রীয় ৭:১১.
লোবান।
বসওয়েলিয়া শ্রেণীর কয়েক প্রজাতির গাছের অথবা গুল্মের শুকিয়ে যাওয়া নির্যাস (আঠাঁলো রজন)। এই শুকনো নির্যাস যখন পোড়ানো হয়, তখন এটা থেকে এক মিষ্টি গন্ধ বের হয়ে আসে। এটা ছিল পবিত্র ধূপের একটা উপাদান, যে-ধূপ আবাস ও মন্দিরে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া, এটা ভক্ষ্য নৈবেদ্যের সঙ্গেও উৎসর্গ করা হতো এবং পবিত্র স্থানে দর্শন-রুটির দুই সারির উপর রাখা হতো।—যাত্রা ৩০:৩৪-৩৬; লেবীয় ২:১; ২৪:৭; মথি ২:১১.
শ
শপথ।
কোনো বিষয় যে সত্য, সেটা নিশ্চিত করার জন্য দিব্য করা কিংবা একজন ব্যক্তি একটা বিষয় করবে কি করবে না, সেই বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা। এটা এমন অঙ্গীকার, যা প্রায়ই শ্রেষ্ঠ কারো কাছে, বিশেষভাবে ঈশ্বরের কাছে করা হয়। যিহোবা দিব্য দিয়ে করা শপথের মাধ্যমে অব্রাহামের সঙ্গে তাঁর চুক্তিকে আরও জোরালো করেছিলেন।—আদি ১৪:২২; ইব্রীয় ৬:১৬, ১৭.
শমরিয়া।
প্রায় ২০০ বছর ধরে ইজরায়েলের উত্তরের দশ বংশের রাজ্যের রাজধানী। এই রাজ্যের পুরো এলাকাকেও শমরিয়া বলা হতো। এই নগর যে-পর্বতের উপর গড়ে উঠেছিল, সেটার নামও শমরিয়া। যিশুর সময়ে শমরিয়া এক রোমীয় অঞ্চলের নাম ছিল, যেটার উত্তর দিকে ছিল গালীল এবং দক্ষিণ দিকে ছিল যিহূদিয়া। যিশু ভ্রমণের সময় সাধারণত এই এলাকায় প্রচার করেননি, কিন্তু তিনি যখন মাঝে মাঝে সেই এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, তখন সেখানকার লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পিতর যখন স্বর্গরাজ্যের দ্বিতীয় রূপক চাবিটা ব্যবহার করেছিলেন, তখন শমরীয়েরা পবিত্র শক্তি লাভ করেছিল।—১রাজা ১৬:২৪; যোহন ৪:৭; প্রেরিত ৮:১৪.
শমরীয়।
প্রথমে সেই ইজরায়েলীয়দের শমরীয় বলা হতো, যারা উত্তরের দশ রাজ্যে বাস করত। কিন্তু, খ্রিস্টপূর্ব ৭৪০ সালে অশূরীয়েরা শমরিয়াকে পরাজিত করার পর সেই বিদেশিদেরও এই নামে ডাকা হতো, যাদের তারা সেখানে ধরে নিয়ে এসেছিল। যিশুর দিনে কোনো জাতি অথবা রাষ্ট্রের লোককে শমরীয় বলা হতো না। এর পরিবর্তে, এটা সেই ধর্মীয় দলের লোকদের বলা হতো, যারা প্রাচীন শিখিম ও শমরিয়ার আশেপাশে বাস করত। এই দলের লোকদের কিছু শিক্ষা যিহুদি ধর্ম থেকে একেবারে আলাদা ছিল।—যোহন ৮:৪৮.
শয়তান।
এক ইব্রীয় শব্দ, যেটার অর্থ “বিরোধী।” বাইবেলে এই শব্দ সাধারণত ঈশ্বরের প্রধান শত্রু শয়তান দিয়াবলকে বোঝায়।—ইয়োব ১:৬; মথি ৪:১০; প্রকা ১২:৯.
শস্য মাড়াই করা; শস্য মাড়াই করার জায়গা।
শস্যের কাণ্ড ও তুষ থেকে শস্য পৃথক করার প্রক্রিয়া; যে-স্থানে এই কাজ করা হতো। হাতে ব্যবহার করা যায় এমন কোনো দণ্ড দ্বারা শস্য মাড়াই করা হতো। কিন্তু, শস্যের পরিমাণ বেশি হলে বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হতো, যে-যন্ত্র পশু দিয়ে টানা হতো। শস্য মাড়াই করার জায়গায় ছড়ানো শস্যের উপর দিয়ে সেই যন্ত্র টানা হতো। এই জায়গা সাধারণত এমন উঁচু সমতল স্থান ছিল, যেখানে বাতাস বইত।—লেবীয় ২৬:৫; যিশা ৪১:১৫; মথি ৩:১২.
শাস্ত্র।
ঈশ্বর যে-সমস্ত বাক্য লিখিয়েছেন, সেগুলোকে সমষ্টিগতভাবে শাস্ত্র বলা হয়। এই শব্দ কেবল খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র- এ এসেছে।—লূক ২৪:২৭; ২তীম ৩:১৬.
শুকতারা।
এটা হল শেষ তারা, যেটা সূর্য দেখা যাওয়ার আগে পূর্ব দিগন্তে দেখা যায় আর এভাবে এটা এক নতুন দিন শুরু হওয়ার আগমনবার্তা ঘোষণা করে।—প্রকা ২২:১৬; ২পিতর ১:১৯.
শুচি।
বাইবেলে এই শব্দ কেবল শারীরিক শুচিতাকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এমন এক অবস্থা বজায় রাখাকে অথবা পুনরায় সেই অবস্থায় নিয়ে আসাকে বোঝায়, যা নিষ্কলঙ্ক ও নিখুঁত এবং এমন যেকোনো কিছু থেকে পৃথক, যা নৈতিক অথবা আধ্যাত্মিকভাবে কলুষিত করে। মোশির ব্যবস্থায় এই শব্দ রীতিগতভাবে শুচি হওয়াকে বোঝায়।—লেবীয় ১০:১০; গীত ৫১:৭; মথি ৮:২; ১করি ৬:১১.
শুল্ক।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত করকে নির্দেশ করে।—নহি ৫:৪; রোমীয় ১৩:৭.
শৃঙ্গ।
পশুর শৃঙ্গ বা শিংকে নির্দেশ করে, যা জল খাওয়ার পাত্র, তেল রাখার পাত্র, কালি রাখার পাত্র, প্রসাধনীর পাত্র এবং বাদ্যযন্ত্র অথবা সংকেত দেওয়ার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। (১শমূ ১৬:১, ১৩; ১রাজা ১:৩৯; যিহি ৯:২) “শৃঙ্গ” শব্দটা প্রায়ই শক্তি, লড়াই ও বিজয়ের জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।—দ্বিতীয় ৩৩:১৭; মীখা ৪:১৩; লূক ১:৬৯.
শেষকাল।
এটা এবং সমরূপ অভিব্যক্তিগুলো, যেমন ‘উত্তরকাল,’ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে সেই সময়কে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যখন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে। (যিহি ৩৮:১৬; দানি ১০:১৪; প্রেরিত ২:১৭) ভবিষ্যদ্বাণীর উপর নির্ভর করে এই সময়কাল হতে পারে কেবল কয়েক বছর অথবা অনেক বছর। বিশেষ করে, বাইবেলে এই শব্দ যিশুর অদৃশ্য উপস্থিতির সময়কালে এই বর্তমান বিধিব্যবস্থার ‘শেষকালের’ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।—২তীম ৩:১; যাকোব ৫:৩; ২পিতর ৩:৩.
শোক করা।
কারো মৃত্যু অথবা অন্যান্য চরম দুর্দশার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। বাইবেলের সময়ে কয়েক দিন ধরে শোক করার প্রথা ছিল। জোরে জোরে কান্নাকাটি করা ছাড়াও শোকার্ত ব্যক্তিরা ভিন্ন ধরনের কাপড় পরত, তাদের মাথায় ছাই দিত, তাদের পোশাক ছিঁড়ে ফেলত এবং বুক চাপড়াত। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কখনো কখনো পেশাদার শোকার্তকারীদের ডাকা হতো।—ইষ্টের ৪:৩; মথি ১১:১৭; মার্ক ৫:৩৮; যোহন ১১:৩৩; প্রকা ২১:৪.
শ্বেত পাথরের বোতল।
সুগন্ধির ছোটো বোতল, যেটা আসলে এমন এক পাথর দিয়ে তৈরি করা হতো, যে-পাথর মিশরের অ্যালাবাসট্রন শহরের কাছে পাওয়া যেত। সেই পাথর ওই শহরের নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে, এটা আধুনিক সময়ের শ্বেত পাথরের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। এই ধরনের বোতলে সাধারণত লম্বা সরু মুখ থাকত, যেটা আটকে রাখা যেত, যাতে মূল্যবান সুগন্ধি একটুও পড়ে না যায়।—মার্ক ১৪:৩.
স
সদ্দূকী।
যিহুদি ধর্মের এক বিশিষ্ট ধর্মীয় দল, যা ধনী সম্ভ্রান্ত পুরুষ ও যাজকদের নিয়ে গঠিত ছিল। মন্দিরের কাজকর্মে তাদের অনেক কর্তৃত্ব ছিল। তারা এমন অনেক মৌখিক রীতিনীতি প্রত্যাখ্যান করত, যেগুলো ফরীশীরা পালন করত। এ ছাড়া, তারা ফরীশীদের শিক্ষাও প্রত্যাখ্যান করত। তারা পুনরুত্থানে কিংবা স্বর্গদূতদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত না। তারা যিশুর বিরোধিতা করত।—মথি ১৬:১; প্রেরিত ২৩:৮.
সমাজগৃহ।
এই শব্দের অর্থ “একত্রে আনা; এক সমাবেশ,” কিন্তু বেশিরভাগ শাস্ত্রপদে এটা কোনো দালানকে অথবা স্থানকে বোঝায়, যেখানে যিহুদিরা শাস্ত্র পাঠ করার, শিক্ষা দেওয়ার, প্রচার করার এবং প্রার্থনা করার জন্য একত্রিত হতো। যিশুর দিনে, ইজরায়েলের প্রতিটা বড়ো শহরে একটা সমাজগৃহ ছিল আর এর চেয়েও বড়ো নগরগুলোতে একাধিক সমাজগৃহ ছিল।—লূক ৪:১৬; প্রেরিত ১৩:১৪, ১৫.
সিয়োন; সিয়োন পর্বত।
যিবূষীয়দের দুর্গ-সহ নগর যিবূষের আরেকটা নাম, যেটা জেরুসালেমের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত পাহাড়ের উপর ছিল। দায়ূদ সেটাকে অধিকার করার পর, তিনি সেখানে তার রাজপ্রাসাদ তৈরি করেন আর পরবর্তী সময়ে এটা “দায়ূদ-নগর” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। (২শমূ ৫:৭, ৯) দায়ূদ যখন সেখানে নিয়ম সিন্দুক নিয়ে আসেন, তখন সিয়োন এমন পর্বত হয়ে ওঠে, যেটা বিশেষভাবে যিহোবার দৃষ্টিতে পবিত্র। পরে এই নগরের পাশাপাশি মরিয়া পর্বতে নির্মিত মন্দিরের এলাকাকেও সীয়োন বলা হতো। আর কখনো কখনো পুরো জেরুসালেম নগরকেই সীয়োন বলা হতো। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ প্রায়ই এই শব্দ রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।—গীত ২:৬; ১পিতর ২:৬; প্রকা ১৪:১.
সিরিয়া।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ সিরিয়া ছিল এক রোমীয় প্রদেশ, যেটার রাজধানী হল আন্তিয়খিয়া। ইব্রীয় শাস্ত্র-এ উল্লেখিত সিরিয়ার (যেটাকে অরামও বলা হতো) বেশিরভাগ এলাকাই এই প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া, পুরো প্যালেস্টাইনও সিরিয়ার রাজ্যপালের অধীনে ছিল।—লূক ২:২; প্রেরিত ১৮:১৮; গালা ১:২১.
সিলমোহর।
এমন একটা জিনিস, যেটা দিয়ে ছাপ দেওয়া হতো (সাধারণত কাদামাটি অথবা মোমের উপর)। কোনো নথি অথবা অন্যান্য বিষয়ের উপর দেওয়া সিলমোহর দেখাত যে, এর মালিক কে, এটা আসল কি না এবং এটা দুই পক্ষের মধ্যে করা হয়েছে কি না। প্রাচীন কালে সিলমোহর কঠিন বস্তু (পাথর, হাতির দাঁত অথবা কাঠ) দিয়ে তৈরি করা হতো, যেটার মধ্যে অক্ষর অথবা প্রতীক উলটোভাবে খোদাই করা থাকত। সিলমোহর শব্দটাকে, কোনো বিষয় যে সত্য বা এক রহস্য, তা বোঝানোর জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সিলমোহর দেওয়া এটাও দেখাত যে, কার উপর কার অধিকার রয়েছে।—প্রকা ৫:১; ৯:৪.
সুসমাচার।
খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এটা হল, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার এবং যিশু খ্রিস্টের উপর বিশ্বাসের মাধ্যমে রক্ষা পাওয়ার সুসমাচার।—লূক ৪:১৮, ৪৩; প্রেরিত ৫:৪২; প্রকা ১৪:৬.
সূর্তি।
উত্তর আফ্রিকার লিবিয়ার উপকূলের কাছে দুটো বড়ো অগভীর খাড়ি। প্রাচীন কালে নাবিকেরা এই জায়গার ব্যাপারে ভীত ছিল, কারণ জোয়ারভাটার জন্য এতে চোরা বালুচর ক্রমাগত স্থানান্তরিত হতো।—প্রেরিত ২৭:১৭.
সেই দুষ্ট ব্যক্তি।
শয়তান দিয়াবলকে এই আখ্যা দেওয়া হয়েছে, যে ঈশ্বরের এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলোর বিরোধিতা করে।—মথি ৬:১৩; ১যোহন ৫:১৯.
সোমরাজ।
প্রচণ্ড তেতো এবং ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, যেগুলোর ডাঁটা শক্ত। প্রকাশিত বাক্য ৮:১১ পদে উল্লেখিত “সোমরাজ” এক তেতো ও বিষাক্ত উপাদানকে বোঝায়, যেটাকে অ্যাব্সিন্থও বলা হয়।
স্তম্ভ।
শলোমনের দ্বারা নির্মিত মন্দির এবং রাজকীয় দালানগুলোতে স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছিল। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এই শব্দ সমর্থনের প্রতীক (১তীম ৩:১৫) অথবা পদমর্যাদার স্থায়িত্ব (প্রকা ৩:১২) হিসেবে রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।—বিচার ১৬:২৯; ১রাজা ৭:২১.
স্তোয়িকীয় দল।
একদল গ্রিক দার্শনিক, যারা বিশ্বাস করত যে, একজন ব্যক্তি যদি সুখ লাভ করতে চায়, তা হলে প্রাকৃতিক নিয়ম বোঝার জন্য তাকে তার চিন্তা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চলতে হবে। তাদের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বিজ্ঞ ছিল, যার কাছে সুখ-দুঃখ কোনো বিষয় নয়।—প্রেরিত ১৭:১৮.
স্বর্গদূত।
ইব্রীয় শব্দ মালাখ্ এবং গ্রিক শব্দ অ্যাগেলস্ থেকে এসেছে। দুটো শব্দেরই আক্ষরিক অর্থ “বার্তাবাহক”; কিন্তু স্বর্গ থেকে আসা বার্তাবাহকদের নির্দেশ করার সময় এগুলোকে “স্বর্গদূত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। (আদি ১৬:৭; ৩২:৩; যাকোব ২:২৫; প্রকা ২২:৮) স্বর্গদূতেরা হলেন শক্তিশালী অদৃশ্য প্রাণী, যাদের ঈশ্বর মানবজাতি সৃষ্টি করার অনেক আগে সৃষ্টি করেছিলেন। এ ছাড়া, বাইবেলে তাদের ‘অযুত অযুত পবিত্র,’ “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণ” এবং “প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্বিতীয় ৩৩:২; ইয়োব ১:৬; ৩৮:৭) তাদের নিজেদের বংশ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করা হয়নি, বরং তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের সংখ্যা অযুত অযুত ও হাজার হাজারের চেয়েও বেশি। (প্রকা ৫:১১) বাইবেল ইঙ্গিত দেয়, তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নাম এবং আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব রয়েছে, তবে তারা নম্রভাবে উপাসনা গ্রহণ করা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশ এমনকী নিজেদের নাম প্রকাশ করাও এড়িয়ে চলেন। (আদি ৩২:২৯; লূক ১:২৬; প্রকা ২২:৮, ৯) তাদের বিভিন্ন শ্রেণী রয়েছে আর তাদের বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করার কার্যভার দেওয়া হয়, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত যিহোবার সিংহাসনের সামনে সেবা করা, তাঁর বার্তা জানানো, যিহোবার পার্থিব দাসদের পক্ষে কাজ করা, ঈশ্বরের বিচার কার্যকর করা এবং সুসমাচার প্রচার করার কাজে সাহায্য করা। (২রাজা ১৯:৩৫; গীত ৩৪:৭; মথি ৪:১১; লূক ১:৩০, ৩১; প্রকা ৫:১১; ১৪:৬) ভবিষ্যতে, তারা আরমাগিদোনের যুদ্ধে লড়াই করার জন্য যিশুকে সাহায্য করবেন।—প্রকা ১৯:১৪, ১৫.
স্মরণিক কবর।
এমন এক কবর, যেখানে মৃত ব্যক্তির দেহ রাখা হতো। এর গ্রিক শব্দ হল নিমিয়োন, যেটা “স্মরণ করা” ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে। এটা দেখায়, যে-ব্যক্তি মারা গিয়েছে, সে স্মরণে রয়েছে।—যোহন ৫:২৮, ২৯.
হ
হর্মাগিদোন।
ইব্রীয় শব্দ হর্ মঘিদ্দোন থেকে এসেছে, যেটার অর্থ “মগিদ্দো পর্বত।” এই শব্দ “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধের” সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যে-যুদ্ধে ‘পুরো পৃথিবীর রাজারা’ যিহোবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হয়। (প্রকা ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১১-২১)—মহাক্লেশ দেখুন।
হাড়িকাঠ।
শাস্তি দেওয়ার জন্য আটকে রাখার এক যন্ত্র। কোনো কোনো যন্ত্রের মধ্যে কেবল পা আটকে রাখা হতো, আবার কোনো কোনো যন্ত্রের মধ্যে সম্ভবত পা, হাত ও গলা আটকে রেখে দেহকে বাঁকা করে রাখা হতো।—যির ২০:২; প্রেরিত ১৬:২৪.
হার্মিস।
জিউসের ছেলে এবং একজন গ্রিক দেবতা। মনে করা হতো, হার্মিস হল দেবতাদের বার্তাবাহক এবং দক্ষভাবে কথা বলার দেবতা আর তাই লুস্ত্রায় পৌলকে ভুলভাবে হার্মিস বলে ডাকা হয়েছিল।—প্রেরিত ১৪:১২.
হেডিস।—
কবর দেখুন।
হেরোদ।
একটা রাজবংশের পারিবারিক নাম, যে-বংশ রোমের দ্বারা নিযুক্ত হয়ে যিহুদিদের উপর শাসন করত। প্রথম রাজা ছিলেন মহান হেরোদ, যিনি জেরুসালেমের মন্দির পুনর্নির্মাণ করার জন্য এবং যিশুকে মেরে ফেলার চেষ্টায় শিশুদের হত্যা করার আদেশ দেওয়ার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। (মথি ২:১৬; লূক ১:৫) মহান হেরোদের দুই ছেলে, হেরোদ আর্খিলায় এবং হেরোদ আন্তিপাকে তাদের বাবার অধীনস্থ এলাকার বিভাগগুলোর উপর নিযুক্ত করা হয়েছিল। (মথি ২:২২) আন্তিপা একটা প্রদেশের এক-চতুর্থাংশের রাজ্যপাল ছিলেন, কিন্তু তিনি “রাজা” হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর তিনি খ্রিস্টের তিন বছরের প্রচারের সময় এবং প্রেরিত ১২ অধ্যায়ে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সময়কাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। (মার্ক ৬:১৪-১৭; লূক ৩:১, ১৯, ২০; ১৩:৩১, ৩২; ২৩:৬-১৫; প্রেরিত ৪:২৭; ১৩:১) এর পরে, মহান হেরোদের নাতি হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম কিছুসময় ধরে শাসন করার পর, ঈশ্বরের স্বর্গদূত তাকে মেরে ফেলেছিলেন। (প্রেরিত ১২:১-৬, ১৮-২৩) পরে তার ছেলে হেরোদ আগ্রিপ্প ২য় শাসক হন এবং রোমের বিরুদ্ধে যিহুদি বিদ্রোহের সময় পর্যন্ত শাসন করেন।—প্রেরিত ২৩:৩৫; ২৫:১৩, ২২-২৭; ২৬:১, ২, ১৯-৩২.
হেরোদের দলের লোক।
হেরোদীয় নামেও পরিচিত ছিল। তারা সেই জাতীয়তাবাদী দল ছিল, যারা রোমীয়দের শাসনের অধীনে আলাদা আলাদা হেরোদের রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন করত। সদ্দূকীদের মধ্যে কেউ কেউ সম্ভবত এই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। হেরোদীয়েরা যিশুর বিরোধিতা করায় ফরীশীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।—মার্ক ৩:৬.
হোমবলি।
যে-পশুবলি ঈশ্বরের উদ্দেশে সম্পূর্ণ উৎসর্গ হিসেবে বেদির উপর পোড়ানো হতো; সেই পশু বা পাখির (ষাঁড়, ভেড়া, ছাগল, ঘুঘু অথবা বাচ্চা ঘুঘু) কোনো অংশই উপাসক নিজের কাছে রাখতেন না।—যাত্রা ২৯:১৮; লেবীয় ৬:৯; মার্ক ১২:৩৩; ইব্রীয় ১০:৬.