নতুন চুক্তির মাধ্যমে মহত্তর আশীর্বাদগুলি
“[যীশু] . . . এক শ্রেষ্ঠ নিয়মের [“চুক্তির,” “NW”] মধ্যস্থ হইয়াছেন।”—ইব্রীয় ৮:৬.
১. এদনে প্রতিজ্ঞাত ‘নারীর বংশ’ হিসাবে কে প্রমাণিত হয়েছিলেন এবং কিভাবে তাঁর “পাদমূল চূর্ণ” করা হয়েছিল?
আদম ও হবা পাপ করার পর, হবাকে যে প্রতারিত করেছিল সেই শয়তানের বিরুদ্ধে এই বলার দ্বারা যিহোবা বিচারাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) সা.কা. ২৯ সালে, যীশু যখন যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছিলেন, তখন এদনের প্রতিজ্ঞাত বংশটি আবির্ভূত হয়েছিলেন। সা.কা. ৩৩ সালে যাতনাদণ্ডে তাঁর মৃত্যুতে, সেই প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীটির একটি অংশ পরিপূর্ণ হয়েছিল। শয়তান সেই বংশের “পাদমূল চূর্ণ” করেছিল।
২. যীশুর নিজ বাক্যানুসারে, কিভাবে তাঁর মৃত্যু মানবজাতিকে উপকৃত করে?
২ আনন্দের বিষয় যে, সেই আঘাত অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হওয়া সত্ত্বেও স্থায়ী ছিল না। যীশু মৃতদের মধ্য থেকে এক অমর আত্মা হিসাবে উত্থিত হয়েছিলেন ও স্বর্গে তাঁর পিতার কাছে আরোহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি “অনেকের পরিবর্ত্তে . . . মুক্তির মূল্যরূপে” তাঁর পাতিত রক্তের মূল্য প্রদান করেছিলেন। আর এইভাবে, তাঁর নিজ বাক্যগুলি সত্য হয়েছিল: “মনুষ্যপুত্ত্রকেও উচ্চীকৃত হইতে হইবে, যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পায়। কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৪-১৬; ইব্রীয় ৯:১২-১৪) যীশুর কৃত ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায় নতুন চুক্তিটি এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
নতুন চুক্তি
৩. নতুন চুক্তিটিকে প্রথম কখন কার্যকর হতে দেখা গিয়েছিল?
৩ মৃত্যুর অল্প কিছু সময় আগে, যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন যে তাঁর পাতিত রক্ত ছিল “নূতন নিয়মের [“চুক্তির,” “NW”] রক্ত।” (মথি ২৬:২৮; লূক ২২:২০) তাঁর স্বর্গারোহণের দশদিন পর, নতুন চুক্তিটিকে কার্যকর হতে দেখা গিয়েছিল যখন যিরূশালেমের উপরের কুঠরীতে সমবেত প্রায় ১২০ জন শিষ্যের উপর পবিত্র আত্মা সেচিত হয়েছিল। (প্রেরিত ১:১৫; ২:১-৪) ১২০ জন শিষ্যকে নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা প্রদর্শন করেছিল যে ‘প্রথম’ চুক্তি অর্থাৎ নিয়ম চুক্তিটি তখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।—ইব্রীয় ৮:১৩.
৪. পুরাতন চুক্তিটি কি অপর্যাপ্ত ছিল? ব্যাখ্যা করুন।
৪ পুরাতন চুক্তিটি কি তবে অপর্যাপ্ত ছিল? অবশ্যই নয়। যেহেতু এটিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তাই এটি সত্য যে মাংসিক ইস্রায়েল আর ঈশ্বরের বিশেষ লোক ছিল না। (মথি ২৩:৩৮) কিন্তু তা ইস্রায়েলের অবাধ্যতা ও যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫; প্রেরিত ২:২২, ২৩) যাইহোক, স্থানান্তরিত হওয়ার পূর্বে ব্যবস্থা অনেক কিছু সম্পাদন করেছিল। বহু শতাব্দী ধরে, এটি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার একটি পথ এবং মিথ্যা ধর্ম থেকে সুরক্ষা প্রদান করেছিল। এর মধ্যে নতুন চুক্তির পূর্বাভাষ ছিল এবং এর পুনরাবৃত্ত বলি উৎসর্গগুলি পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধারের জন্য মানুষের এক উদ্ধারকর্তার অত্যধিক প্রয়োজনীয়তাকে প্রদর্শন করেছিল। বাস্তবিকপক্ষে, ব্যবস্থা “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য . . . পরিচালক দাস” ছিল। (গালাতীয় ৩:১৯, ২৪; রোমীয় ৩:২০; ৪:১৫; ৫:১২; ইব্রীয় ১০:১, ২) কিন্তু, অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদটি নতুন চুক্তির দ্বারাই সম্পূর্ণরূপে বাস্তবে পরিণত হবে।
অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে জাতিগুলি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল
৫, ৬. অব্রাহামের সাথে কৃত চুক্তির মৌলিক আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতায়, অব্রাহামের বংশটি কে ছিলেন এবং তাঁর মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করার ক্ষেত্রে কোন্ জাতিটি প্রথম ছিল?
৫ যিহোবা অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২২:১৮) পুরাতন চুক্তির অধীনে, নম্রমনা অনেক বিদেশীরা অব্রাহামের জাতিগত বংশ, ইস্রায়েলের সান্নিধ্যে আসার মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, এর মৌলিক আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতায়, অব্রাহামের বংশ একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। পৌল এটি ব্যাখ্যা করেন যখন তিনি বলেছিলেন: “অব্রাহামের প্রতি ও তাঁহার বংশের প্রতি প্রতিজ্ঞা সকল উক্ত হইয়াছিল। তিনি বহুবচনে ‘আর বংশ সকলের প্রতি’ না বলিয়া, একবচনে বলেন, ‘আর তোমার বংশের প্রতি’; সেই বংশ খ্রীষ্ট।”—গালাতীয় ৩:১৬.
৬ হ্যাঁ, যীশুই হলেন অব্রাহামের বংশ আর তাঁর মাধ্যমেই জাতিগুলি আশীর্বাদ লাভ করে যা মাংসিক ইস্রায়েলের প্রাপ্তিসাধ্য যে কোন আশীর্বাদের চেয়ে অনেক বেশি উৎকৃষ্টমানের। বাস্তবিকপক্ষে, ইস্রায়েলই ছিল প্রথম জাতি যারা এই আশীর্বাদ লাভ করেছিল। সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছুদিন পরই, প্রেরিত পিতর যিহূদীদের একটি দলকে বলেছিলেন: “তোমরা ভাববাদিগণের সন্তান, আর সেই নিয়মেরও [“চুক্তিরও,” “NW”] সন্তান, যাহা ঈশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত স্থাপন করিয়াছিলেন, তিনি ত অব্রাহামকে বলিয়াছিলেন, ‘আর তোমার বংশে পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল আশীর্ব্বাদ পাইবে।’ ঈশ্বর আপন দাসকে উৎপন্ন করিয়া প্রথমে তোমাদেরই নিকটে তাহাকে প্রেরণ করিলেন, যেন তিনি তোমাদের অধর্ম্ম সকল হইতে তোমাদের প্রত্যেক জনকে ফিরাইয়া তদ্দ্বারা তোমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন।”—প্রেরিত ৩:২৫, ২৬.
৭. অব্রাহামের বংশ, যীশুর মাধ্যমে কোন্ জাতিগুলি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল?
৭ শীঘ্রই আশীর্বাদটি শমরীয় এবং পরে পরজাতীয়দের প্রতি প্রসারিত হয়েছিল। (প্রেরিত ৮:১৪-১৭; ১০:৩৪-৪৮) সা.কা. ৫০ থেকে ৫২ সালের মধ্যে, এশিয়া মাইনরের গালাতিয়ার খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে পৌল লিখেছিলেন: “বিশ্বাস হেতু ঈশ্বর পরজাতিদিগকে ধার্ম্মিক গণনা করেন, শাস্ত্র ইহা অগ্রে দেখিয়া অব্রাহামের কাছে আগেই সুসমাচার প্রচার করিয়াছিল, যথা, ‘তোমাতে সমস্ত জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে’। অতএব যাহারা বিশ্বাসাবলম্বী, তাহারা বিশ্বাসী অব্রাহামের সহিত আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়।” (গালাতীয় ৩:৮, ৯; আদিপুস্তক ১২:৩) যদিও গালাতিয়ার অনেক খ্রীষ্টান ‘পরজাতি’ ছিলেন, তবুও তারা তাদের বিশ্বাসের কারণে যীশুর মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিভাবে?
৮. পৌলের দিনের খ্রীষ্টানদের জন্য, অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হওয়া কী অন্তর্ভুক্ত করেছিল এবং চূড়ান্তরূপে কতজন এইধরনের আশীর্বাদ লাভ করেন?
৮ পৌল যে কোন পটভূমিকার গালাতীয় খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি খ্রীষ্টের হও, তবে সুতরাং অব্রাহামের বংশ, প্রতিজ্ঞানুসারে দায়াধিকারী।” (গালাতীয় ৩:২৯) সেই গালাতীয়দের জন্য অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদটি, নতুন চুক্তিতে তাদের অংশী হওয়া এবং অব্রাহামের বংশে যীশুর সহযোগী হয়ে তাঁর সহদায়াদ হওয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। প্রাচীন ইস্রায়েলের জনসংখ্যা কত ছিল তা আমরা জানি না। আমরা কেবল জানি যে তা “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় বহুসংখ্যক” হয়েছিল। (১ রাজাবলি ৪:২০) কিন্তু, আমরা আত্মিক বংশে যীশুর সঙ্গীদের চূড়ান্ত সংখ্যা জানি—১,৪৪,০০০ জন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ১৪:১) ওই ১,৪৪,০০০ জন মানবজাতির “সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে” বের হয়ে আসেন এবং অব্রাহামের সাথে কৃত চুক্তির আশীর্বাদগুলির দিকে আরও অন্যান্যদের পরিচালিত করায় অংশগ্রহণ করেন।—প্রকাশিত বাক্য ৫:৯.
একটি ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল
৯. নতুন চুক্তিভুক্তদের মধ্যে যিহোবার ব্যবস্থা কিভাবে রয়েছে?
৯ নতুন চুক্তি সম্বন্ধে ভাববাণী করার সময় যিরমিয় লিখেছিলেন: “সেই সকল দিনের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম [“চুক্তি,” “NW”] স্থির করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব।” (যিরমিয় ৩১:৩৩) এটি নতুন চুক্তিভুক্তদের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে তারা প্রেমের কারণে যিহোবাকে সেবা করেন। (যোহন ১৩:৩৫; ইব্রীয় ১:৯) যিহোবার ব্যবস্থা তাদের হৃদয়ে লিখিত রয়েছে এবং তারা তাঁর ইচ্ছা পালন করতে ঐকান্তিকভাবে আকাঙ্ক্ষী। এটি সত্য যে, প্রাচীন ইস্রায়েলে কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তিবিশেষেরা প্রগাঢ়ভাবে যিহোবার ব্যবস্থাকে ভালবেসেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) কিন্তু অনেকে তা করেনি। তবুও তারা জাতিটির অংশ ছিল। কোন ব্যক্তির হৃদয়ে যদি ঈশ্বরের ব্যবস্থা লিখিত না থাকে তবে তিনি নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন না।
১০, ১১. কিভাবে যিহোবা নতুন চুক্তিভুক্তদের “ঈশ্বর” হন এবং কিভাবে তারা সকলে তাঁকে জানবেন?
১০ নতুন চুক্তিভুক্তদের সম্বন্ধে যিহোবা আরও বলেছিলেন: “আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” (যিরমিয় ৩১:৩৩) প্রাচীন ইস্রায়েলে, অনেকে জাতিগুলির দেবতাদের উপাসনা করা সত্ত্বেও ইস্রায়েলীয় হিসাবেই পরিচিত ছিল। নতুন চুক্তির ভিত্তিতে, যিহোবা মাংসিক ইস্রায়েলের স্থলে একটি আত্মিক জাতি, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে’ সৃষ্টি করেছিলেন। (গালাতীয় ৬:১৬; মথি ২১:৪৩; রোমীয় ৯:৬-৮) কিন্তু, কোন ব্যক্তিই নতুন আত্মিক জাতির অংশ থাকতে পারেন না যদি তিনি যিহোবাকে এবং একমাত্র তাঁকেই উপাসনা করা থেকে বিরত হন।
১১ এছাড়াও যিহোবা বলেছিলেন: “তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই আমাকে জ্ঞাত হইবে।” (যিরমিয় ৩১:৩৪) ইস্রায়েলে, অনেকে এই বলার দ্বারা যিহোবাকে উপেক্ষা করেছিল: “সদাপ্রভু মঙ্গলও করিবেন না, অমঙ্গলও করিবেন না।” (সফনিয় ১:১২) কেউ যদি যিহোবাকে উপেক্ষা করেন বা বিশুদ্ধ উপাসনাকে দূষিত করেন তবে তিনি আর ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অংশী থাকেন না। (মথি ৬:২৪; কলসীয় ৩:৫) আত্মিক ইস্রায়েলীয়রা সেই লোক যারা “আপন ঈশ্বরকে জানে।” (দানিয়েল ১১:৩২) তারা ‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে’ অত্যন্ত আনন্দিত হন। (যোহন ১৭:৩, NW) যীশুকে জানা ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানকে গভীরতর করে কারণ এক অদ্বিতীয় উপায়ে, যীশুই “[ঈশ্বরকে] প্রকাশ করিয়াছেন।”—যোহন ১:১৮; ১৪:৯-১১.
১২, ১৩. (ক) কিসের ভিত্তিতে যিহোবা নতুন চুক্তিভুক্তদের পাপ ক্ষমা করেন? (খ) পাপ ক্ষমা করার ক্ষেত্রে, কিভাবে নতুন চুক্তি পুরাতন চুক্তির চেয়ে উৎকৃষ্ট?
১২ পরিশেষে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তাহাদের অপরাধ ক্ষমা করিব, এবং তাহাদের পাপ আর স্মরণে আনিব না।” (যিরমিয় ৩১:৩৪খ) মোশির ব্যবস্থা কয়েক শত লিখিত আইনকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল যা পালন করার জন্য ইস্রায়েলীয়দের আহ্বান করা হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১, ২, ১৫) যারা ব্যবস্থা ভঙ্গ করত তারা তাদের পাপ মোচনের জন্য হোমবলি উৎসর্গ করত। (লেবীয় পুস্তক ৪:১-৭; ১৬:১-৩১) অনেক যিহূদীরা এই বিশ্বাসে উপনীত হয়েছিল যে ব্যবস্থা অনুসারে তারা নিজেদের কাজগুলির দ্বারা ধার্মিক হতে পারে। কিন্তু, খ্রীষ্টানেরা উপলব্ধি করেন যে তারা নিজেদের কাজগুলির দ্বারা কখনও ধার্মিকতা অর্জন করতে পারেন না। তারা পাপ করা এড়িয়ে চলতে পারেন না। (রোমীয় ৫:১২) নতুন চুক্তির অধীনে, একমাত্র যীশুর বলিদানের ভিত্তিতে ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক অবস্থান সম্ভব। কিন্তু, এইধরনের অবস্থান একটি উপহার, ঈশ্বরের অযাচিত করুণা। (রোমীয় ৩:২০, ২৩, ২৪) যিহোবা সবসময় তাঁর দাসেদের কাছ থেকে বাধ্যতা দাবি করেন। পৌল বলেন, যারা নতুন চুক্তিভুক্ত তারা “খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অনুগত।”—১ করিন্থীয় ৯:২১.
১৩ অতএব, খ্রীষ্টানদের জন্যও পাপের একটি বলিদান রয়েছে কিন্তু তা নিয়ম চুক্তির অধীনস্থ বলিদানগুলির চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। পৌল লিখেছিলেন: “[নিয়ম চুক্তির অধীনস্থ] প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়; সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না। কিন্তু [যীশু] পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন।” (ইব্রীয় ১০:১১, ১২) যেহেতু নতুন চুক্তিভুক্ত খ্রীষ্টানেরা যীশুর বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করেন, তাই যিহোবা তাদের ধার্মিক ও নিষ্পাপ ঘোষণা করেন এবং এইভাবে তারা তাঁর আত্মিক পুত্র হিসাবে অভিষিক্ত হওয়ার অবস্থানে থাকেন। (রোমীয় ৫:১; ৮:৩৩, ৩৪; ইব্রীয় ১০:১৪-১৮) মানব অসিদ্ধতার কারণে যখন পাপ করেন, তখন তারা যিহোবার ক্ষমা ভিক্ষা করতে পারেন এবং যীশুর বলিদানের ভিত্তিতে যিহোবা তাদের ক্ষমা করেন। (১ যোহন ২:১, ২) কিন্তু, যদি তারা স্বেচ্ছাকৃত পাপের পথ বেছে নেন, তবে তারা তাদের ধার্মিক অবস্থান এবং নতুন চুক্তির অংশী হওয়ার সুযোগ হারান।—ইব্রীয় ২:২, ৩; ৬:৪-৮; ১০:২৬-৩১.
পুরাতন ও নতুন চুক্তি
১৪. কোন্ ত্বকছেদের প্রয়োজন ছিল নিয়ম চুক্তির অধীনে? নতুন চুক্তির অধীনে?
১৪ পুরাতন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত পুরুষেরা তারা যে ব্যবস্থার অধীন তার চিহ্নস্বরূপ ছিন্নত্বক ছিলেন। (লেবীয় পুস্তক ১২:২, ৩; গালাতীয় ৫:৩) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী শুরু হওয়ার পর, কিছুজন মনে করেছিলেন যে ন-যিহূদী খ্রীষ্টানদেরও ত্বকছেদ করা উচিত। কিন্তু প্রেরিতগণ ও যিরূশালেমের প্রাচীনবর্গ, ঈশ্বরের বাক্য এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে এটি অপরিহার্য ছিল না। (প্রেরিত ১৫:১, ৫, ২৮, ২৯) কিছু বছর পর, পৌল বলেছিলেন: “বাহিরে যে যিহূদী সে যিহূদী নয়, এবং বাহিরে মাংসে কৃত যে ত্বক্ছেদ তাহা ত্বক্ছেদ নয়। কিন্তু আন্তরিক যে যিহূদী সেই যিহূদী, এবং হৃদয়ের যে ত্বক্ছেদ, যাহা অক্ষরে নয়, আত্মায়, তাহাই ত্বক্ছেদ।” (রোমীয় ২:২৮, ২৯) যিহোবার চোখে, এমনকি মাংসিক যিহূদীদের জন্যও আক্ষরিক ত্বক্ছেদের আর কোন আধ্যাত্মিক মূল্য ছিল না। নতুন চুক্তিভুক্তদের মাংসে নয় কিন্তু অবশ্যই হৃদয়ে ত্বকছেদপ্রাপ্ত হতে হবে। তাদের চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরণার যে সমস্ত বিষয় যিহোবার চোখে অসন্তোষজনক ও অপরিচ্ছন্ন সেগুলি অবশ্যই বর্জন করতে হবে।a চিন্তাধারাগুলিকে এইভাবে পরিবর্তন করায় পবিত্র আত্মার যে ক্ষমতা রয়েছে, আজকে অনেকেই তার জীবন্ত সাক্ষ্য।—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১; গালাতীয় ৫:২২-২৪; ইফিষীয় ৪:২২-২৪.
১৫. রাজকীয় শাসনের ক্ষেত্রে মাংসিক ইস্রায়েল ও ঈশ্বরের ইস্রায়েল কিভাবে তুলনীয়?
১৫ নিয়ম চুক্তি ব্যবস্থায়, যিহোবা ইস্রায়েলের রাজা ছিলেন এবং পরে তিনি যিরূশালেমে মানব রাজাদের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌমত্ব অনুশীলন করেছিলেন। (যিশাইয় ৩৩:২২) যিহোবা, ঈশ্বরের ইস্রায়েল অর্থাৎ আত্মিক ইস্রায়েলেরও রাজা এবং সা.কা. ৩৩ সাল থেকে, যীশু খ্রীষ্ট যিনি “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব” প্রাপ্ত হয়েছেন তাঁর মাধ্যমে তিনি শাসন করছেন। (মথি ২৮:১৮; ইফিষীয় ১:১৯-২৩; কলসীয় ১:১৩, ১৪) আজকে, ঈশ্বরের ইস্রায়েল যীশুকে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসাবে স্বীকার করেন যা ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যীশু এমনকি হিষ্কীয়, যোশিয় ও প্রাচীন ইস্রায়েলের অন্যান্য বিশ্বস্ত রাজাদের চেয়ে আরও অধিক উত্তম রাজা।—ইব্রীয় ১:৮, ৯; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.
১৬. ঈশ্বরের ইস্রায়েল কিধরনের যাজকবর্গ?
১৬ ইস্রায়েল কেবল একটি রাজ্যই ছিল না কিন্তু এর একটি অভিষিক্ত যাজকবর্গও ছিল। সা.কা. ৩৩ সালে, ঈশ্বরের ইস্রায়েল মাংসিক ইস্রায়েলের স্থলাভিষিক্ত এবং যিহোবার “দাস” ও তাঁর “সাক্ষী” হয়েছিলেন। (যিশাইয় ৪৩:১০) যিশাইয় ৪৩:২১ ও যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬ পদে লিপিবদ্ধ ইস্রায়েলের প্রতি যিহোবার বাক্যগুলি তখন থেকে ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছিল। ঈশ্বরের নতুন আত্মিক জাতি তখন “মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ” ও “তাঁহারই গুণকীর্ত্তন” করার জন্য দায়বদ্ধ হয়েছিলেন। (১ পিতর ২:৯) ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সকলে, পুরুষ ও নারীরা এক যৌথ যাজকবর্গ গঠন করেন। (গালাতীয় ৩:২৮, ২৯) অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশ হিসাবে, তারা এখন বলেন: “তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৩) আত্মিক ইস্রায়েলের যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছেন তারা “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” গঠন করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) কেবল তাদের সাহচর্যে আসার মাধ্যমেই ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্য পবিত্র সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
ঈশ্বরের রাজ্য—চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা
১৭. নতুন চুক্তিভুক্তরা কোন্ জন্ম অভিজ্ঞতা করেন?
১৭ যে ইস্রায়েলীয়রা সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালের পর জন্মগ্রহণ করে তারা জন্মসূত্রেই নিয়ম চুক্তির অধীনে এসেছিল। যাদের যিহোবা নতুন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেন তারাও একটি জন্ম অভিজ্ঞতা করেন—তাদের ক্ষেত্রে এটি আত্মিক জন্ম। যীশু এই সম্বন্ধে ফরীশী নীকদীমের কাছে উল্লেখ করেন যখন তিনি বলেছিলেন: “সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।” (যোহন ৩:৩) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীতে ১২০ জন শিষ্যই ছিলেন প্রথম অসিদ্ধ মানুষ যারা এই নতুন জন্ম অভিজ্ঞতা করেছিলেন। নতুন চুক্তির অধীনে ধার্মিক ঘোষিত হয়ে তারা রাজকীয় দায়াধিকারের “বায়না” হিসাবে পবিত্র আত্মা লাভ করেছিলেন। (ইফিষীয় ১:১৪) ঈশ্বরের দত্তক পুত্র হওয়ার জন্য তারা “আত্মা হইতে . . . জাত” ছিলেন যা তাদের যীশুর ভাই আর এইভাবে “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” করেছিল। (যোহন ৩:৬; রোমীয় ৮:১৬, ১৭) তাদের “নূতন জন্ম” চমৎকার প্রত্যাশাগুলির পথ খুলে দিয়েছিল।
১৮. পুনরায় জন্ম হওয়া নতুন চুক্তিভুক্তদের জন্য কোন্ চমৎকার প্রত্যাশাগুলির পথ খুলে দেয়?
১৮ নতুন চুক্তির মধ্যস্থতা করার সময়ে, যীশু তাঁর অনুগামীদের সাথে এই বলার দ্বারা একটি অতিরিক্ত চুক্তি করেছিলেন: “আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি।” (লূক ২২:২৯) এই রাজ্য চুক্তি দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২২ ও ২৭ পদে লিপিবদ্ধ উল্লেখযোগ্য দর্শনটির পরিপূর্ণতার জন্য পথ প্রস্তুত করে। দানিয়েল দেখেছিলেন যে “অনেক দিনের বৃদ্ধ” যিহোবা ঈশ্বর, “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ”-কে রাজকীয় কর্তৃত্ব দিচ্ছেন। তারপর দানিয়েল ‘পবিত্রগণের রাজত্ব-ভোগ’ দেখেছিলেন। যীশুই হলেন “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ” যিনি ১৯১৪ সালে যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বর্গীয় রাজ্য গ্রহণ করেছেন। তাঁর আত্মায়-অভিষিক্ত শিষ্যরাই হলেন ‘পবিত্রগণ’ যারা সেই রাজ্যে তাঁর সাথে অংশ নেন। (১ থিষলনীকীয় ২:১২) কিভাবে?
১৯, ২০. (ক) নতুন চুক্তিভুক্তদের জন্য, অব্রাহামের কাছে কৃত যিহোবার প্রতিজ্ঞাটির কোন্ চূড়ান্ত ও মহৎ পরিপূর্ণতা হবে? (খ) আর কোন্ প্রশ্নটি বিবেচনা করা প্রয়োজন?
১৯ তাদের মৃত্যুর পর, এই অভিষিক্তেরা স্বর্গে রাজা ও যাজক হিসাবে যীশুর সাথে সেবা করার জন্য, তাঁর মত মৃত্যু থেকে অমর আত্মিক ব্যক্তি হিসাবে উত্থিত হয়েছেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৩; প্রকাশিত বাক্য ২০:৪, ৬) কতই না এক অপূর্ব আশা! কেবল কনান দেশে নয়, “তাহারা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:১০) তারা কি “শত্রুগণের পুরদ্বার অধিকার” করবেন? (আদিপুস্তক ২২:১৭) হ্যাঁ, আর এক চূড়ান্ত উপায়ে তারা তা করবেন যখন তারা শত্রুভাবাপন্ন ধর্মীয় বেশ্যা, মহতী বাবিলের ধ্বংস সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবেন এবং যখন এই পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সমস্ত জাতিকে “লৌহদণ্ড” দ্বারা পরিচালনা ও শয়তানের মস্তক চূর্ণ করার ক্ষেত্রে যীশুর সাথে অংশ নেবেন। তাদের তখন আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীর চূড়ান্ত অংশের পরিপূর্ণতায় একটি ভূমিকা থাকবে।—প্রকাশিত বাক্য ২:২৬, ২৭; ১৭:১৪; ১৮:২০, ২১; রোমীয় ১৬:২০.
২০ তবুও, আমরা হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারি, অব্রাহামের সাথে কৃত চুক্তি ও নতুন চুক্তি কি কেবল এই ১,৪৪,০০০ বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরই অন্তর্ভুক্ত করে? না, অন্যান্যেরা যারা সরাসরি এই চুক্তিগুলির অন্তর্ভুক্ত নন, তারা সেগুলির মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবেন যেমন পরবর্তী প্রবন্ধটিতে দেখা যাবে।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইরাজি), খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৭০ দেখুন।
আপনার কি স্মরণে আছে?
◻ নতুন চুক্তিটিকে প্রথম কখন কার্যকর হতে দেখা গিয়েছিল?
◻ পুরাতন চুক্তির মাধ্যমে কী সম্পাদিত হয়েছিল?
◻ প্রধানত অব্রাহামের বংশ কে এবং জাতিগুলি কোন্ ধারাবাহিকতা অনুসারে সেই বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল?
◻ ১,৪৪,০০০ জনের জন্য, অব্রাহামের সাথে কৃত চুক্তি এবং নতুন চুক্তির চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা কী?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
পাপের ক্ষমা পুরাতন চুক্তিভুক্তদের চেয়ে নতুন চুক্তিভুক্তদের জন্য গভীর অর্থ রাখে