ইফিষীয়দের প্রতি চিঠি
৪ অতএব, আমি পৌল, প্রভুর শিষ্য হওয়ার কারণে বন্দি এই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা যে-আহ্বান লাভ করেছ, সেটার যোগ্যরূপে চলো: ২ সবসময় নম্রতা ও মৃদুতা দেখাও এবং ধৈর্যশীল হও, প্রেম সহকারে একে অন্যকে সহ্য করো ৩ আর একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে থাকার মাধ্যমে সেই একতা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করো, যা তোমরা পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অর্জন করেছ। ৪ একটাই দেহ এবং একটাই পবিত্র শক্তি, ঠিক যেমন সেই প্রত্যাশাও একটা, যেটার জন্য তোমাদের আহ্বান করা হয়েছে; ৫ এক জনই প্রভু, একটাই বিশ্বাস, একটাই বাপ্তিস্ম; ৬ সকলের পিতা ও ঈশ্বর এক জনই, যিনি সকলের উপরে রয়েছেন এবং সকলের মাধ্যমে কাজ করেন। আর সকলের মধ্যে তাঁর পবিত্র শক্তি কাজ করে।
৭ আমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের কাছ থেকে মহাদয়া লাভ করেছি আর খ্রিস্টই আমাদের প্রত্যেককে সেই দান দিয়েছেন। ৮ কারণ শাস্ত্র বলে: “যখন তিনি উপরে উঠলেন, তখন তিনি বন্দিদের নিয়ে গেলেন আর এরপর মানুষদের মধ্যে সেই লোকদের দান হিসেবে পাঠালেন।” ৯ “তিনি উপরে উঠলেন,” এই কথার অর্থ কী? এর অর্থ হল, তিনি নীচে অর্থাৎ পৃথিবীতেও নেমে এসেছিলেন। ১০ যিনি পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন, তিনি স্বর্গ থেকেও উঁচুতে উঠেছিলেন, যেন তাঁর মাধ্যমে সমস্ত কিছু পূর্ণতা লাভ করে।
১১ আর তিনি কয়েক জনকে প্রেরিত, কয়েক জনকে ভাববাদী, কয়েক জনকে সুসমাচার প্রচারক, কয়েক জনকে পালক ও শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, ১২ যেন তারা পবিত্র ব্যক্তিদের সংশোধন করেন,* অন্যদের সেবা করেন এবং খ্রিস্টের দেহকে* গেঁথে তোলেন। ১৩ আর তারা ততক্ষণ পর্যন্ত এই কাজ করে চলবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবাই বিশ্বাসে একতাবদ্ধ হই এবং ঈশ্বরের পুত্র সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করি, যেন আমরা পরিণত* ব্যক্তি অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে খ্রিস্টের মতো পরিণত* হই। ১৪ তাই, আমরা যেন আর শিশুর মতো না হই, কারণ যে-ব্যক্তি সেই লোকদের মিথ্যা শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে, যারা অন্যদের সঙ্গে ছলনা করে, সে সমুদ্রে চলতে থাকা এমন একটা নৌকার মতো হয়ে উঠবে, যেটা বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে এদিক-ওদিক দুলতে থাকে। ১৫ বরং আমরা যেন সত্য বলি এবং প্রেম দেখাই আর তা হলে আমরা আমাদের মস্তক খ্রিস্টের সঙ্গে মিল রেখে চলার জন্য সমস্ত দিক দিয়ে পরিপক্ব হয়ে উঠতে পারব। ১৬ তাঁর মাধ্যমেই সম্পূর্ণ দেহ পরস্পর সুন্দরভাবে সংযুক্ত এবং দেহের যা প্রয়োজন, প্রতিটা অঙ্গ তা জোগানোর মাধ্যমে একে অন্যকে সাহায্য করে। প্রতিটা অঙ্গ যখন সঠিকভাবে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে, তখন তা দেহকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে, যেন সম্পূর্ণ দেহ প্রেমে দৃঢ় হয়।
১৭ তাই, আমি প্রভুর নামে তোমাদের বলছি এবং অনুরোধ করছি, তোমরা আর ন-যিহুদি লোকদের মতো জীবনযাপন কোরো না, যারা নিজেদের অসার* চিন্তাভাবনা অনুযায়ী চলে। ১৮ তাদের মন অন্ধকারে রয়েছে এবং ঈশ্বর আমাদের যে-জীবন দিতে চান, তারা তা গ্রহণ করে না, কারণ তারা ঈশ্বরকে জানতে চায় না এবং তাদের হৃদয় অসাড়। ১৯ তারা আর নৈতিক মান বুঝতে পারে না, তারা নির্লজ্জভাবে পাপ কাজ* করে এবং তারা অসংযতভাবে সমস্ত ধরনের অশুচি কাজ করে চলে।
২০ কিন্তু, খ্রিস্টের বিষয়ে তোমরা এইরকম শিক্ষা পাওনি। ২১ যিশু সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন আর তোমরা যদি তাঁর কাছ থেকে শুনে থাক এবং তাঁর দ্বারা শিক্ষা লাভ করে থাক, তা হলে তোমরা সেগুলো ভালোভাবেই জান। ২২ তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যেন তোমরা সেই পুরোনো ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ আগের আচরণ পরিত্যাগ কর, কারণ তোমরা নিজেদের আকাঙ্ক্ষার দ্বারা ভ্রান্ত হয়ে পড়েছ বলে তোমাদের পুরোনো ব্যক্তিত্ব কলুষিত হয়ে পড়ছে। ২৩ আর তোমরা যেন তোমাদের মনোভাবকে দিন দিন নতুন কর ২৪ এবং সেই নতুন ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো পরিধান কর, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে, তাঁর ধার্মিক মান ও আনুগত্যের সঙ্গে মিল রেখে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২৫ অতএব, এখন যেহেতু তোমরা প্রতারণা পরিত্যাগ করেছ, তাই তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রতিবেশীর সঙ্গে সত্য কথা বলো, কারণ আমরা সবাই একই দেহের বিভিন্ন অঙ্গ। ২৬ ক্রুদ্ধ হলেও পাপ কোরো না; সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তোমাদের রাগ পুষে রেখো না; ২৭ দিয়াবলকে কোনো সুযোগ* দিয়ো না। ২৮ যে চুরি করে, সে আর চুরি না করুক; বরং পরিশ্রম করুক, নিজ হাতে ভালো কাজ করুক, যাতে অভাবী ব্যক্তির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো তার হাতে কিছু থাকে। ২৯ তোমাদের মুখ থেকে কোনো নোংরা কথা বের না হোক, বরং কেবল ভালো কথা বের হোক, যেন যারা তা শোনে, তারা এর দ্বারা শক্তি লাভ করতে পারে। ৩০ আর তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র শক্তিকে দুঃখিত কোরো না, যে-শক্তির মাধ্যমে তোমাদের সেই দিনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, যখন মুক্তির মূল্য দ্বারা তোমাদের মুক্ত করা হবে।
৩১ তোমাদের মধ্য থেকে সমস্ত ধরনের চরম তিক্ত মনোভাব, রাগ, ক্রোধ, চিৎকার-চেঁচামেচি এবং নিন্দামূলক কথা আর সেইসঙ্গে অন্যান্য সমস্ত ধরনের মন্দ বিষয় দূর করো। ৩২ বরং একে অন্যের প্রতি সদয় হও, কোমল সমবেদনা দেখাও, পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো, যেমনটা ঈশ্বরও খ্রিস্টের মাধ্যমে তোমাদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন।